Advertisement
E-Paper

ভিন্ দলের, তবু শমীক দরাজ পূর্বসূরির জন্য

মতাদর্শে মেরুদূরত্ব। তবুও পূর্বসূরির জন্য গুরুদক্ষিণা দিতে চান উত্তরসূরি। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক আবহাওয়ায় আজকাল বিরোধিতার অর্থ দাঁড়িয়েছে শত্রুতা! তবু এই বৈরিতার পরিবেশেও মৈত্রীর বার্তা নিয়ে তিনি হাজির হয়েছেন ইছামতীর পাড়ে! বসিরহাট দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য নিজের বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন ইছামতীর তীরে একটি পার্ক তৈরি করে সেখানে সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের আবক্ষ মূর্তি নির্মাণ করার জন্য। নারায়ণবাবু ওই কেন্দ্রে টানা ৩৬ বছর বিধায়ক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতেই ওই কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয় এবং তাতেই জয়ী হন শমীক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৫ ০৩:৫৮

মতাদর্শে মেরুদূরত্ব। তবুও পূর্বসূরির জন্য গুরুদক্ষিণা দিতে চান উত্তরসূরি। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক আবহাওয়ায় আজকাল বিরোধিতার অর্থ দাঁড়িয়েছে শত্রুতা! তবু এই বৈরিতার পরিবেশেও মৈত্রীর বার্তা নিয়ে তিনি হাজির হয়েছেন ইছামতীর পাড়ে!

বসিরহাট দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য নিজের বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন ইছামতীর তীরে একটি পার্ক তৈরি করে সেখানে সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের আবক্ষ মূর্তি নির্মাণ করার জন্য। নারায়ণবাবু ওই কেন্দ্রে টানা ৩৬ বছর বিধায়ক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতেই ওই কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয় এবং তাতেই জয়ী হন শমীক।

রাজনৈতিক মতাদর্শে বিজেপি এবং সিপিএম পরস্পরের বিপরীত মেরুর দল। নারায়ণবাবুর সঙ্গে শমীকের আলাপও ছিল না। কিন্তু নারায়ণবাবুর অনেক গুণগ্রাহীর মধ্যে শমীকও অন্যতম। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক মতাদর্শে বিরোধিতা থাকতে পারে। কিন্তু নারায়ণবাবুর সরল অনাড়ম্বর জীবনযাপন, সহজ ভাবে মানুষের সঙ্গে মেশার ক্ষমতা তাঁকে জনপ্রিয় করেছিল। ওঁর নামে পার্ক এবং সেখানে ওঁর মূর্তি স্থাপন করে ওঁর প্রতি আমার সামান্য শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে চাই। রাজনৈতিক রং না দেখে বসিরহাট পুরসভা যেন নির্মাণ কাজটা ভাল ভাবে করে!”

বিজেপি বিধায়কের এই প্রয়াসকে স্বাগত জানিয়েছে সিপিএমও। দলের ভারপ্রাপ্ত উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক নেপালদেব ভট্টাচার্যের কথায়, “সাভারকর, গোলওয়ালকর বা নাথুরাম গডসের মূর্তি না বসিয়ে শমীকবাবু যে নারায়ণদা’র জন্য ভেবেছেন, এই শিষ্টাচারের জন্য ওঁকে অবশ্যই ধন্যবাদ জানাই। রাজনৈতিক নীচতার ঊর্ধ্বে উঠে শিষ্টাচার দেখিয়েছেন তিনি।” নেপালদেববাবুর যুক্তি, শাসক দল তৃণমূল তাদের জমানায় বামেদের একের পর প্রকল্প বা পার্কের নামও নিজেদের নামে করে নতুন বলে চালিয়েছে! বিজেপি আবার মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরির রাজনীতি করে বলে সিপিএমের অভিযোগ। কিন্তু শমীক এ সবের মধ্যে না গিয়ে শিষ্ট পথে গিয়েছেন বলেই নেপালদেববাবু এমন পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছেন।

নিন্দুকদের কেউ কেউ অবশ্য বলার চেষ্টা করছেন, নারায়ণবাবুর মূর্তি গড়িয়ে আসলে তাঁর জনপ্রিয়তাটাই নিজের দিকে টানতে চেষ্টা করছেন শমীক। তবে বিজেপি-র ব্যাখ্যা, তাঁদের এই একমাত্র বিধায়ক এত হিসেবি নন! কবিতা, গান এবং থিয়েটার-রসিক শমীকের চরিত্রে একটা শিল্পীসুলভ উদারতা রয়েছে। সে জন্যই রাজনীতির সঙ্কীর্ণ হিসেব-নিকেশের বাইরেও বন্ধুত্বের পরিসর গড়ে নিতে পারেন তিনি।

নিজের কেন্দ্রের উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূলের সঙ্গেও এখন ‘সুসম্পর্ক’ রেখে চলছেন বিজেপি বিধায়ক। যেমন টাকি-হাসনাবাদ অঞ্চলে পানীয় জলের সঙ্কট মেটানোর জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর কাছে ঘোজাডাঙার রাস্তা মেরামতের আর্জি জানিয়েছেন। বসিরহাট পাইকারি বাজারে বাঁধভাঙা জল ঢুকে যাওয়ার সমস্যা মেটাতে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছেন। টাকি-হাসনাবাদ অঞ্চলে পানীয় জলের সঙ্কট মেটাতে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর সঙ্গেও দেখা করেছেন তিনি। বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়কের কথায়, “আমার এলাকার উন্নয়নের কাজে রাজ্যের যত জন মন্ত্রীর কাছে গিয়েছি, প্রত্যেকেই সাহায্য করেছেন। আমিও রাজনৈতিক প্রচারে কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে বলি না। প্রতিপক্ষের নীতির বিরুদ্ধে বলি।” বসিরহাট দক্ষিণের উন্নয়নের বিষয়গুলি বিধানসভা অধিবেশনেও বার বার তুলেছেন তিনি। যে কারণে শাসক দলের বিধায়কদের আসন থেকে কটাক্ষ উড়ে গিয়েছে, “এ বার একটু বসিরহাটের বাইরে বেরোন!”

শমীক অবশ্য সে কটাক্ষে কান না দিয়ে আপাতত ইছামতীর পাড়েই থাকছেন মৈত্রী-বার্তা নিয়ে!

shamik bhattacharyay narayan mukhopadhyay half bust statue BJP CPM municipal election money Venkaiah Naidu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy