Advertisement
E-Paper

ভয় পেয়ো না পাশে আছি, ফোনে মমতা

বছর দেড়েকের ছেলেকে কোলে নিয়ে বসেই পাড়ার সরস্বতী পুজোর অনুষ্ঠান শুনছিলেন তিনি। মাঘের আকাশ থেকে হিম নামছে। তাই রাত একটু বাড়তে ছেলেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। ছেলে সৌম্যজিৎকে সেই শেষ বারের মতো কোলে নেওয়া তাঁর। 

সম্রাট চন্দ 

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৫৯
পলাতক অভিজিৎ পুণ্ডারী, ধৃত সুজিত মণ্ডল, ধৃত কার্তিক মণ্ডল।

পলাতক অভিজিৎ পুণ্ডারী, ধৃত সুজিত মণ্ডল, ধৃত কার্তিক মণ্ডল।

বছর দেড়েকের ছেলেকে কোলে নিয়ে বসেই পাড়ার সরস্বতী পুজোর অনুষ্ঠান শুনছিলেন তিনি। মাঘের আকাশ থেকে হিম নামছে। তাই রাত একটু বাড়তে ছেলেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। ছেলে সৌম্যজিৎকে সেই শেষ বারের মতো কোলে নেওয়া তাঁর।

তার পরে বড় জোর আধ ঘণ্টা। যে সবুজ চেয়ারে ছেলেকে কোলে নিয়ে বসেছিলেন, আততায়ীর গুলিতে সেখানেই লুটিয়ে পড়েন কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস।

এই খুন নিয়ে রবিবার যখন রাজ্য তোলপাড়, নদিয়ার হাঁসখালিতে নিহত বিধায়কের বাড়িতে শ্মশানের স্তব্ধতা। ছেলেকে আগলানো ছাড়া বাকি পুরো সময়টাই পাথরের মতো স্তব্ধ হয়ে বসে সত্যজিতের স্ত্রী রূপালী। এক রাতে তাঁদের জীবনটাই তছনছ হয়ে গিয়েছে। চোখের কোণ ভিজে উঠছে বারবার। কথা বলতেও কষ্ট। একটু থেমে-থেমে রূপালী বলেন, “রাতে আমি ছেলেকে ঘুম পাড়াচ্ছিলাম। হঠাৎ বাইরে গোলমাল। শুনি, ওকে গুলি করেছে।’’

রবিবার দুপুর সওয়া ১টা নাগাদ বিধায়কের দেহ নিয়ে আসা হয় তাঁর বাড়িতে। মৃতদেহের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন রূপালী। বোধহয় মাকে কাঁদতে দেখেই কাঁদতে শুরু করে দেড় বছরের সৌম্যজিৎও। তা দেখে কান্না চাপতে পারেননি পাড়াপড়শি, দলীয় নেতাকর্মীদের অনেকেই।

বাবা সমীর বিশ্বাস মারা গিয়েছেন আগেই। তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় ছিলেন সত্যজিৎ। মেজো ভাই সুজিত বিশ্বাস বলেন, “দাদা ছেলেকে ভীষণ ভালবাসত। বাবাকে দেখতে না পেয়ে রাত থেকেই মাঝে-মাঝে কেঁদে উঠছে ও।’’ খুনের সময়ে সে বাবার কোলে থাকলে কী হত, সে কথা ভেবেও শিউরে উঠছেন তাঁরা।

শনিবার রাত থেকেই কৃষ্ণনগর-বগুলা রাজ্য সড়কের ধারের সবুজ দোতলা বাড়ি লোকে ছয়লাপ। এ দিন রূপালীর শোকের বাঁধ ভাঙে মন্ত্রী রত্না ঘোষ এসে পৌঁছতেই। মন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। কাঁদতে থাকেন রত্নাও। পরে আসেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জেলার সংগঠন দেখভালের দায়িত্বে থাকা বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডল, জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তেরা।

দুপুরে করিমপুরের বিধায়ক মহুয়া মৈত্রের ফোন থেকে রূপালীর সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। রূপালী জানান, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বলেছেন, “ভয় পেয়ো না। সব ব্যাপারে তোমাদের পাশে আমি আছি।” মাল্যদান ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পর্ব মেটার পরে বাড়ি থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় মাজদিয়ায় দলীয় দফতরে। সেখান থেকে নবদ্বীপ শ্মশান। সৌম্যজিৎ তখনও মায়ের কোল আঁকড়ে বসে। কী ঘটে গেল, তা বোঝার পক্ষে সে এখনও বড্ড ছোট।

TMC MLA Murder Krishnaganj Satyajit Biswas Mamata Banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy