Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Scam

Bhangar: চাকরি দেওয়ার নামে টাকা তুলে 'প্রতারিত', জমি বিক্রি করে শোধ করছেন নুরউদ্দিন

নুরউদ্দিনের দাবি, বিকাশ ভবনের কাছে তাঁর দেখা হয় দেবনাথের সঙ্গে। দেবনাথকে সে সময়ে তিনি ৩৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন।

নুরউদ্দিন বৈদ্য।

নুরউদ্দিন বৈদ্য।

সামসুল হুদা
ভাঙড়  শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২২ ০৬:২৫
Share: Save:

আবার এক ‘রঞ্জন সৎ’ কাণ্ড। এ বার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে।

কারও থেকে ৪ লক্ষ, কারও থেকে ৫ লক্ষ, কারও থেকে ৮ লক্ষ টাকা নিয়ে প্রাথমিক স্কুলে বা গ্রুপ ডি পদে সরকারি চাকরি করে দেবেন বলেছিলেন ভাঙড়ের বাসিন্দা এক প্রাথমিক স্কুলশিক্ষক। কিন্তু চাকরি হয়নি। এ বার সেই টাকা নিজের জমিজমা বিক্রি করে শোধ দেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। ভাঙড় ২ ব্লকের খয়েরপুর এলাকার বাসিন্দা নুরউদ্দিন বৈদ্য উত্তর ২৪ পরগনার রাজারহাট সার্কেলের মাছিভাঙা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। তাঁর দাবি, ২০১৬ সাল নাগাদ জনৈক ‘দেবনাথবাবু’ নিজেকে আইপিএস অফিসার বলে পরিচয় দিয়ে যোগাযোগ করে জানান, টাকা দিলে চাকরি পাইয়ে দিতে পারেন। নুরউদ্দিনের দাবি, বিকাশ ভবনের কাছে তাঁর দেখা হয় দেবনাথের সঙ্গে। দেবনাথকে সে সময়ে তিনি ৩৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন।

ওই টাকা কোথায় পৌঁছেছিল, তা এখনও অজানা। অভিযুক্ত শিক্ষকের অবশ্য দাবি, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বা শিক্ষা দফতরের কারও সঙ্গে তাঁর সরাসরি কখনও যোগাযোগ হয়নি। উত্তর ২৪ পরগনার দক্ষিণ নওয়াবাদ, বাগু, শিখরপুর, উত্তর নওয়াবাদ, ঝালগাছি-সহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ২০ জন তাঁকে টাকা দিয়েছিলেন বলে স্বীকার করছেন নুরউদ্দিন। তাঁর বক্তব্য এ ভাবে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা তোলেন তিনি।

তবে চাকরি প্রার্থীদের অনেকের দাবি, ২০১২ সাল থেকেই টাকা তুলতে শুরু করেছিলেন নুর। এর পর টাকা ফেরত চেয়ে ওই চাকরিপ্রার্থীরা চাপ দিতে থাকেন। নুরউদ্দিন সাদা কাগজে লিখিত ভাবে সকলকে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন বলে নিজেই স্বীকার করেছেন। তবে তাঁর দাবি, তিনি নিজেও প্রতারিত হয়েছেন।

কী ভাবে? নুরউদ্দিনের দাবি, কয়েক দফায় দেবনাথকে ৩৫ লক্ষ টাকা দিলেও কারও চাকরি করে দিতে পারেননি ওই ব্যক্তি। দেবনাথ এক সময়ে ফোন নম্বর বদলে ফেলায় নুরউদ্দিন আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারেননি। এ দিকে, টাকা ফেরত চেয়ে চাপ বাড়তে থাকে। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি হাইকোর্টের আইনজীবী পরিচয় দিয়ে জনৈক ‘অর্ণব’ তাঁকে ফোন করেন। নুরউদ্দিনের দাবি, হাইকোর্টের ৩ নম্বর গেটের সামনে তাঁকে দেখা করতে বলেন ওই ব্যক্তি। তিনি আবার নুরউদ্দিনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন হুগলির আরামবাগের চাঁদুর হাইস্কুল শিক্ষক শিশির দোলুইয়ের সঙ্গে। নুরের দাবি, শিশির তাঁকে প্রতিশ্রুতি দেন, ৮৬ লক্ষ টাকা পেলে জনা কুড়ি যুবক-যুবতীর সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন। সেই মতো ১০-১২ দফায় আরামবাগের বাড়িতে গিয়ে টাকা তাঁর হাতে তুলে দেন বলে দাবি নুরউদ্দিনের। তাঁর কথায়, ‘‘পরবর্তী সময়ে শিশিরবাবুও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তখন বুঝতে পারি, প্রতারিত হয়েছি।’’

নুরউদ্দিন বলেন, ‘‘নিজের জমি বিক্রি করে টাকা ফেরত দিচ্ছি। ৩০ শতাংশ দেওয়া হয়ে গিয়েছে। বাকি টাকাও ফিরিয়ে দেব।’’ টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় প্রতারিতরাও কেউ এই মুহূর্তে থানা-পুলিশ করতে চাইছেন না। এক যুবকের কথায়, ‘‘যদি বা টাকা ফেরতের সামান্য আশা আছে, মামলা-মোকদ্দমা হয়ে গেলে সেটাও হয়তো আর পাব না।’’

শিশিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ফোন বন্ধ। মেসেজেরও উত্তর মেলেনি। চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার দায়ে শিশিরকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে গ্রেফতারও করেছিল সিআইডি। নুরউদ্দিনের হাত কত দূর প্রসারিত, তা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রতারিত যুবকেরা অনেকে জানালেন, এলাকার তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা করতে দেখা যেত নুরকে। তবে নুরের দাবি, তিনি কোনও দল করেন না। ভাঙড়ের তৃণমূল নেতাদের দাবি, নুরের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ নেই। নুরউদ্দিন যে স্কুলে পড়ান, তার প্রধান শিক্ষক ইকবাল হাসান বলেন, ‘‘উনি স্কুলের বাইরে কী করেন, তা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Scam Bhangar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE