গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা আইনের নাম বদল এবং ১০০ দিমের কাজ অবিলম্বে চালু করার দাবিতে বুধবার কংগ্রেসের অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার বাধল লোকভবন (সাবেক রাজভবন) চত্বরে। একই দিনে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করলেন, রাজ্যে বিজেপির সরকার ক্ষমতায় এলে নতুন বছরের মে মাস থেকে ১০০ দিনের কাজ চালু করা হবে, মেটানো হবে সুদ-সহ বকেয়া। শাসক তৃণমূল কংগ্রেস পাল্টা মনে করিয়ে দিয়েছে, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গের মোট বকেয়া ৫২ হাজার কোটি টাকা আগে মেটানোর ব্যবস্থা করুক কেন্দ্রীয় সরকার। প্রসঙ্গত, আগামী অর্থবর্ষ থেকে ভারত জি রাম জি প্রকল্প চালু হবে মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা আইনের (এমজিএনআরইজিএ) বদলে।
মহাত্মা গান্ধীর নামে প্রকল্পের নাম বদলের প্রতিবাদ এবং ১০০ দিনের কাজ অবিলম্বে ফের চালুর দাবিতে লোকভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিল প্রদেশ কংগ্রেস। বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট থেকে মিছিল করে বুধবার লোকভবনের সামনের রাস্তায় পৌঁছন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের নেতৃত্বে দলের কর্মী-সমর্থকেরা। ব্যারিকেড করে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। সেই সময়ে অমিতাভ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বড়বাজার জেলা কংগ্রেসের একটি মিছিল অতর্কিতে অন্য দিক থেকে এসে লোকভবনের ফটকে গান্ধীজি’র ছবি আটকানোর চেষ্টা করে। পুলিশের সঙ্গে কংগ্রেসের ওই কর্মী-সমর্থকদের ধস্তাধস্তি বাধে। প্রদেশ কংগ্রেসের মিছিলও তখন ব্যারিকেড ফেলে এগোনোর চেষ্টা করে। ধস্তাধস্তির মধ্যেই প্রদেশ সভাপতি শুভঙ্কর, সর্বভারতীয় যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জিশান আহমেদ, আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, পার্থ ভৌমিক, তপন আগরওয়াল, মানস সরকার, সুতপা মিত্র, সুদীপ্তা রায়চৌধুরী-সহ প্রায় ৭০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রিজন ভ্যানে তুলে শুভঙ্করদের লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়।
লোকভবনের সামনে গ্রেফতার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। — নিজস্ব চিত্র।
এই ঘটনার কিছু ক্ষণের মধ্যেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরে বিজেপির সভা থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘এ রাজ্যে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এলে নতুন বছরের মে মাস থেকে ১০০ দিনের কাজ চালু করা হবে, মেটানো হবে সুদ-সহ বকেয়া। কেন্দ্র থেকে ১০০ দিনের কাজের টাকা দেওয়া হবে। পাশাপাশি, বিজেপি আরও ১০০ দিনের কাজ পাওয়ার ব্যবস্থা করবে।’’ অর্থাৎ বছরে মোট ২০০ দিনের কাজ মিলবে। শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস আমলে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সরকার ১০০ দিনের কাজের জন্য ১৪ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা দিয়েছিল। সে সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তিন বছর মন্ত্রিসভায় ছিলেন। ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদীর সরকার এ খাতে ৫৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দিয়েছে। এত টাকা কোথায় গেল?’’ বিরোধী নেতার অভিযোগ, এক কোটি ২৫ লক্ষ ভুয়ো জব-কার্ড তৈরি হয়েছে এবং বাংলাদেশ থেকেও টাকা তোলা হয়েছে।
তৃণমূল পাল্টা ১০০ দিনের কাজে রাজ্যের মোট বকেয়া ৫২ হাজার কোটি টাকার তথ্য তুলে ধরেছে। পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের কাজের টাকার হিসেব দিয়ে রাজ্য সরকারের শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং পাওনা আদায়ে দিল্লিতে সর্বদল প্রতিনিধি পাঠানোর দাবি তোলার পাশাপাশি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্করের অভিযোগ, ‘‘নতুন আইনে গান্ধীজি’র সঙ্গে সঙ্গে পুরুষোত্তম শ্রীরামেরও বদনাম করছেন নরেন্দ্র মোদী। কারণ, শ্রীরাম ছিলেন প্রজা অন্ত প্রাণ। আর মোদী সরকার গরিব মানুষের জীবন-জীবিকায় কুঠারাঘাত করে চলেছে।’’ অমিতাভের মতে, ‘‘নতুন আইনে বিজেপি সরকার গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত্তি এবং গান্ধীজি’র গ্রাম-স্বরাজের স্বপ্নকেই শেষ করে দিয়েছে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)