Advertisement
E-Paper

প্রতিপক্ষের ডেরায় গিয়ে হানা দেওয়ার অভ্যাস বদলাননি তিনি?

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা। সিংমারিতে মোর্চার সদর দফতরের সামনে তখন মিছিলের জন্য কালো পতাকা নিয়ে জড়ো হয়েছেন জনা বিশেক নারী মোর্চার কর্মী। যাঁর বিরুদ্ধে মিছিল, হঠাৎই সামনে তিনি! নারী মোর্চার কর্মীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের বলেন, ‘‘কি, মিছিলের জন্য রেডি? করুন, করুন। কিন্তু কেউ মিথ্যা বোঝালে সেই জন্য মিছিল করবেন না।’’

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৭ ০৪:১৫
ফ্রেমবন্দি: দার্জিলিঙের পাহাড়ে ফটোগ্রাফার মুখ্যমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

ফ্রেমবন্দি: দার্জিলিঙের পাহাড়ে ফটোগ্রাফার মুখ্যমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

সিঙ্গুর থেকে সিংমারি, সময়ের ব্যবধান অনেক। কিন্তু প্রতিপক্ষের ডেরায় গিয়ে হানা দেওয়ার সেই অভ্যাস যে বদলাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মঙ্গলবার সেটা ভালভাবেই টের পেলেন বিমল গুরুঙ্গ।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা। সিংমারিতে মোর্চার সদর দফতরের সামনে তখন মিছিলের জন্য কালো পতাকা নিয়ে জড়ো হয়েছেন জনা বিশেক নারী মোর্চার কর্মী। যাঁর বিরুদ্ধে মিছিল, হঠাৎই সামনে তিনি! নারী মোর্চার কর্মীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের বলেন, ‘‘কি, মিছিলের জন্য রেডি? করুন, করুন। কিন্তু কেউ মিথ্যা বোঝালে সেই জন্য মিছিল করবেন না।’’ বিস্ময়ের ধাক্কা সামলাতে তখন কেউ ঘাড় নাড়লেন। কেউ হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন।

এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘আমরা যেখানে পাহাড়ে বাংলাকে আবশ্যিক বলিনি, সেখানে মিথ্যা কথা বলে আপনাদের ডাকা কেন!’’ পাহাড়ের ভালর জন্য কিছু করলে তিনি যে সঙ্গে আছেন, সে কথাও জানিয়ে রিচমন্ড হিলের দিকে হাঁটা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তত ক্ষণে নারী মোর্চার কয়েক জন কালো পতাকা রেখে হাত জোড় করে প্রতি নমস্কারও জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন: সত্যবান ডাক্তার সত্য বলছেন কি

মুখ্যমন্ত্রী যখন হেঁটে দার্জিলিং শহরের ল্যাজা-মুড়ো চষছেন, সেই সময় পাতলেবাসের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গুরুঙ্গ রওনা হয়েছেন ভানুভবনের দিকে। চিড়িয়াখানা পার হয়ে রিচমন্ডের বাঁকের কাছে দাঁড়িয়ে পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পিছনের দিকে তাকিয়ে কয়েকটি পুলিশের গাড়ি দেখে তাদের আগে যাওয়ার নির্দেশও দেন। পুলিশের গাড়ির পিছনে ছিলেন মোর্চা সভাপতি গুরুঙ্গ। মুখ্যমন্ত্রী তখন গাড়ির ধোঁয়া থেকে বাঁচতে ঘুরে দাঁড়িয়ে পাহাড়ের দিকে। পাশ দিয়ে বড়জোর ৫ কিলোমিটার বেগে গুরুঙ্গের গাড়ি। গোড়ায় মুখে হাসি ঝুলিয়ে রাখলেও আড়চোখে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখেই মুহূর্তের মধ্যে যেন থম মেরে গেলেন।

এর আগে অন্তত একশো বার পাহাড় দেখেছে মুখ্যমন্ত্রীকে। বারবার এই যাতায়াতকে কটাক্ষও করেছেন পাহাড়ি নেতাদের কেউ কেউ। কিন্তু এর ফল যে ফলতে শুরু করেছে, সেটা এ বারের পুরভোটেই স্পষ্ট। জিমখানা ক্লাবের এক কর্তা তাই হাসতে হাসতে বলেন, ‘‘সারাক্ষণ রোনাল্ডো একা বল ছাড়া মাঠ চষে বেড়ালে অনেকেই ভাবেন, কী হচ্ছে! কিন্তু ঠিক সময়ে সে গোলটা করে যায়। দিদির হাঁটাহাটিও তেমনই। সে জন্যই তো এখন তাঁকে দেখে পাহাড়ের খুদেও বলে, ‘মমতাদিদি ফির আয়ো’।’’

আর এ বার যে মমতা কতটা আক্রমণাত্মক, সেটা সোমবারই বুঝিয়ে দিয়েছেন। মিরিকে ঢোকার মুখে সৌরিনীতে একদল মোর্চা সমর্থক কালো পতাকা নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন। স্লোগানও দিচ্ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী গাড়ি থামিয়ে তাঁদের দিকে এগিয়ে যেতেই পতাকা গুটিয়ে দ্রুত সরে পড়েন তাঁরা।

জুলাইয়ে মেয়াদ ফুরোচ্ছে জিটিএ-র। এর আগে একটা আন্দোলন দরকার। বিশেষ করে তৃণমূল যখন পাহাড়ে ধীরে ধীরে জমি দখল করছে। তাই ভাষাকে হাতিয়ার করেছিলেন গুরুঙ্গ। সেটাকে যে চুপসে যেতে দেবেন না, তা বোঝাতে সোমবার, বহু দিন বাদে ভানুভবন থেকে চকবাজারের মিছিলে দলের সঙ্গে হেঁটেছেন গুরুঙ্গ। পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘রাজ্যের শাসক দল আগে সারদা-নারদ সামলাক। তার পরে পাহাড়।’’ আর ভাষার আন্দোলন? গুরুঙ্গ বলছেন, ‘‘শীঘ্রই মিটিং, তার পরে সিদ্ধান্ত।’’

Mamata Banerjee Darjeeling মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy