আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনের শীর্ষস্তরের মনোভাব বুঝে অভিযুক্ত ছাত্রদের বিরুদ্ধে শুধু জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলাই করেনি পুলিশ, মোবাইলের টাওয়ারের অবস্থান খুঁজে পাকড়াও করেছিল। কিন্তু শনিবার সেই ছাত্রদের জামিন পাওয়ার পথ কার্যত সুগম করে দিল সরকারই।
ছাত্রদের জামিনের বিরোধিতা করার জন্য এ দিন আদালতে হাজির ছিলেন না কোনও সরকারি আইনজীবী। মামলার তদন্তকারী অফিসারও কার্যত নীরব ছিলেন। আইনজীবীরা বলছেন, বিরোধিতা না থাকায় জামিন-অযোগ্য ধারায় অভিযুক্ত হয়েও জামিনে ছাড়া পেয়েছেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজারহাট ক্যাম্পাসের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রউফ-সহ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাত ছাত্র। বারাসত আদালতের বিচারক এ দিন নির্দেশ দেন, অভিযুক্তদের এক দিন অন্তর থানায় হাজিরা দিতে হবে।
গত মঙ্গলবার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজারহাট ক্যাম্পাসে উপাচার্যের ঘর, ল্যাবরেটরি ও শিক্ষকদের ঘরে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে শাসক দলের ওই ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে। সংখ্যালঘু দফতরের সচিব সৈয়দ আহম্মদ বাবাকেও ঘেরাও করা হয়েছিল। কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, অঙ্ক পরীক্ষায় সাপ্লিমেন্টারিতে ৬৫% নম্বর দেওয়ার দাবি না মানায় এই হামলা। অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন ওই ছাত্রনেতারা।
এর পরে মুখ্যমন্ত্রী ডেকে পাঠান তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রকে। বিষয়টি নিয়ে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন বলেও খবর। কিন্তু সেই বৈঠকের পর অশোকবাবু দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যই রউফের কলার ধরেন। উপাচার্য আবু তালেব খান অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করেছিলেন, ছাত্রনেতারা দোষ ঢাকতে এ সব অভিযোগ করছেন।
কেন এ দিন আদালতে হাজির ছিলেন না কোনও সরকারি আইনজীবী? পুলিশ-ই বা নীরব রইল কেন? বারাসত আদালতের সরকারি আইনজীবীদের একাংশ জানান, মাসের শেষ শনিবার সরকারি আইনজীবীরা আদালতে আসেন না। তাই জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করতে সরকারি আইনজীবী ছিলেন না। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তাদের ব্যাখ্যা, ওই ছাত্রেরা পুলিশের কাছে নিজেদের দোষ কবুল করেছেন। পুলিশের কাছে দেওয়া ছাত্রদের বয়ান আদালতে পেশ করাও হয়েছে। তাই অভিযুক্তদের পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়নি। তবে জেল হেফাজতে পাঠানোর কথা বলা হল না কেন? বিধাননগরের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘জেল হেফাজতে পাঠানোর প্রয়োজন নেই। ওই ছাত্রেরা তো লেখাপড়াও করেন।’’
প্রসঙ্গত, কোনও ঘটনার পর শাসক দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে তড়িঘড়ি জামিনের ব্যবস্থা করার নজির এ রাজ্যে নতুন নয়। জামিন পাওয়ার পথ সুগম করতে বহু সময়ই নীরব থাকেন সরকারি আইনজীবীরা। যেমন, আলিপুরে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের উপরে হামলার ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহার আগাম জামিনের সময় আলিপুর আদালতের সরকারি আইনজীবী কার্যত বিরোধিতা করেননি। আবার দিন কয়েক আগেই রানিগঞ্জে একটি থানার ওসি-কে ফোনে হুমকি দেওয়ায় শাসক দলের ছাত্রনেতা সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরের দিন ওই ছাত্রনেতাকে পুলিশ আদালতে হাজির করালে সে দিনও সরকার পক্ষের কোনও আইনজীবী হাজির থেকে তাঁর জামিনের আবেদনের বিরোদিতা করেননি। ওই নেতা আদালত থেকে জামিন পেয়ে যান।
বিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতারা বলছেন, এ দিনও একই পথে হেঁটেছে প্রশাসন। এসএফআই-এর রাজ্য সভাপতি মধুজা সেনরায় বলেন, ‘‘এটা যে লোক দেখানো গ্রেফতার ছিল, সেটাই প্রমাণিত হল। এ রাজ্যে পড়ুয়া বা শিক্ষক— কেউই নিরাপদ নন।’’ একই প্রশ্নের উত্তরে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র বলেন, ‘‘আইন কী করেছে, সে ব্যাপারে আমি মন্তব্য করব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy