Advertisement
E-Paper

ক্যানসারের সঙ্গে লড়েও পরীক্ষাজয় দেবজিতের

দু’বছর পরে সেই দেবজিৎ ৯৫.৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে আইসিএসই পরীক্ষায় পাশ করে বিজ্ঞান নিয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে।

অনির্বাণ রায় ও  সৌমিত্র কুণ্ডু

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৯ ০২:০৪
বাবা-মায়ের সঙ্গে দেবজিৎ। —নিজস্ব চিত্র।

বাবা-মায়ের সঙ্গে দেবজিৎ। —নিজস্ব চিত্র।

দু’বছর আগের কথা। তখন সে নবম শ্রেণিতে পড়ে। কিছু দিন ধরেই শোওয়ার সময়ে কাশি হচ্ছিল। সঙ্গে শ্বাসকষ্ট। শিলিগুড়িতে ডাক্তারকে দেখাতে গেলে তিনি কার্ডিয়ো থোরাসিক সার্জেনের কাছে পাঠান। দিল্লি গিয়ে সেই বিশেষজ্ঞকে দেখানো হয়। ধরা পড়ে, থাইমাস গ্ল্যান্ডে মাংসপিণ্ড তৈরি হয়েছে। বায়োপসি রিপোর্টে জানা যায়, রক্তের ক্যানসার হয়েছে নবম শ্রেণির ছাত্র দেবজিৎ ঘোষের।

দু’বছর পরে সেই দেবজিৎ ৯৫.৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে আইসিএসই পরীক্ষায় পাশ করে বিজ্ঞান নিয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। দু’বছরের এই পথ যে কতটা কঠিন ছিল, শিলিগুড়ির অতুলপ্রসাদ সরণির বাড়িতে বসে সেটাই শোনাচ্ছিলেন তাঁর মা অঞ্জনা ঘোষ ও বাবা জয়ন্ত ঘোষ। তাঁদের কথাতেই জানা গেল মারণ রোগের নাম— ননহজকিন’স লিম্ফোমা। সে বছর সেপ্টেম্বরে প্রথম কেমো দেওয়া হয় দেবজিৎকে। বাবা-মায়ের কথায়, কিন্তু তা কাজ করেনি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, রোগীকে বাঁচানো মুশকিল। শেষ চেষ্টা করতে গিয়ে তাঁরা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কেমো দেন দেবজিৎকে। তাতে কাজ হয় ঠিকই, কিন্তু গলার নীচ থেকে সারা শরীর অসাড় হয়ে পড়ে— জানালেন দেবজিতের বাবা-মা।

গত বছর এপ্রিলে এই অবস্থায় ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন জয়ন্ত ও অঞ্জনা। তার পর শুরু হয় ফিজিয়োথেরাপি। একটু একটু করে সুস্থ হতে শুরু করে সে। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত কলম ধরতে পারত না। অঞ্জনা বলছিলেন, ‘‘এ দিকে নবম শ্রেণি থেকেই পড়ায় ব্যাঘাত হচ্ছিল। স্কুল তো প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল।’’ শিলিগুড়ির যে স্কুলে পড়ে দেবজিৎ, তার অধ্যক্ষ সিস্টার ক্রিস্টিন এগিয়ে আসেন তখন। প্রিয় ছাত্রের জন্য তিনি নিজে দরবার করেন বোর্ডের অফিসে এবং দায়িত্ব নিয়ে রেজিস্ট্রেশন করান দেবজিতের। জয়ন্ত বলছিলেন, ‘‘ছেলে পরীক্ষায় বসতে পারবে বলে ভাবতে পারিনি। কিন্তু অদম্য জেদ নিয়ে ধ্রুব (দেবজিতের বাড়ির নাম) নিজেকে তৈরি করছিল।’’ ওকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন স্কুলের দুই শিক্ষক রবি পাণ্ডে এবং সুনীতা। ‘‘এগিয়ে আসেন আমার স্কুলের সহকর্মী শিক্ষকরাও,’’ বলছিলেন জয়ন্ত। অঞ্জনা বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম পরীক্ষায় যখন বসতে চাইছে, বসুক। যদি পাশ করে যায়, ভালই তো হবে!’’ কিন্তু দেবজিৎ দেখিয়ে দিল, সে অন্য ধাতুতে গড়া। ফল বার হলে দেখা গেল, নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ৯৫.৮ শতাংশ নম্বর।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কী ভাবে চালিয়ে গেলে এই লড়াই? রুবিক্স কিউব হাতে, ড্যান ব্রাউনের ‘দ্য দা ভিঞ্চি কোড’ বা ‘ইনফার্নো’ থেকে মার্ভেস মুভির মশগুল দর্শক দেবজিৎ বলে, ‘‘জীবন তো একদিন শেষ হবেই। লড়াইটাই তো আসল!’’

Siliguri ICSE
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy