Advertisement
E-Paper

সাপে-কাটা দেহ নিয়ে জলে ভিড়ল ভেলা

এক টুকরো চিরকুটে লেখা বাবার নাম, বাড়ির ঠিকানা। আর লেখা: ছেলে জীবিত হওয়ার পর কেউ তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিলে নগদ পুরস্কারও দেওয়া হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:১২
চন্দননগরের ঘাটে সেই ভেলা। —নিজস্ব চিত্র।

চন্দননগরের ঘাটে সেই ভেলা। —নিজস্ব চিত্র।

মশারি টাঙানো ভেলায় যত্ন করে শোয়ানো বারো বছরের বালকের দেহ। বিষে নীল।

পাশে রাখা হ্যারিকেন, খাবার-দাবার। এক টুকরো চিরকুটে লেখা বাবার নাম, বাড়ির ঠিকানা। আর লেখা: ছেলে জীবিত হওয়ার পর কেউ তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিলে নগদ পুরস্কারও দেওয়া হবে।

সেই ভেলা ভাসতে-ভাসতে বুধবার সকালে আটকায় হুগলিতে চন্দননগরের রানিরঘাটে। চিরকুট থেকে জানা যায়, ভেলা এসেছে ও পারে নদিয়া থেকে। খবর পেয়ে ঘাটে ভিড় ভেঙে পড়ে। পুলিশ চলে আসে। চিরকুটে ছেলেটির নাম লেখা ছিল: সূর্য রায়। বাবা দিবাকর রায়, মা অনিমা রায়। বাড়ি নদিয়ার কালীগঞ্জে ফরিদপুর এলাকার ফুলতলা গ্রামে।

আরও খবর: হাঁটতে গিয়েও গর্তে পড়তে পারি, মন্ত্রী বিঁধলেন বিরোধীদের

মৃতদেহটি ময়না-তদন্তের জন্য পাঠিয়ে চন্দননগর থানার পুলিশ যোগাযোগ করে নদিয়ার পুলিশের সঙ্গে। খবর যায় দিবাকর রায়ের বাড়িতে। কান্নায় ভেঙে পড়ে সন্তানহারা অনিমা বলেন, ‘‘রবিবার গভীর রাতে ছেলেকে সাপে ছোবল মারে। যখন আমরা খেয়াল করি, তখন মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে, জ্ঞান নেই। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই শেষ হয়ে গেল। ভেবেছিলাম, কলার ভেলায় ভাসালে ফিরে আসবে।’’

সেই যে লৌহ বাসরের ছিদ্র দিয়ে ঢোকা কালনাগিনীর ছোবলে মারা গেলেন লখিন্দর আর তাঁকে বাঁচাতে মৃতদেহ নিয়ে কলার মান্দাসে গাঙুড়ে ভাসলেন বেহুলা, মঙ্গলকাব্যের সেই আখ্যান আজও স্থির বিশ্বাস হয়ে বসে রয়েছে গ্রামবাংলার বহু মানুষের মনে। তাই সাপের ছোবলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া এক মাত্র ছেলেকে কলার ভেলা সাজিয়ে সোমবার তুলে দিয়েছিলেন বাবা-মা, দৈবকৃপায় যদি প্রাণ ফেরে এই আশায়।

ফেরেনি। বরং দু’দিন জলে ভেসে-ভেসে দেহে পচন ধরেছে। দিবাকর বলেন, ‘‘অলৌকিক তো কতই ঘটে। সবাই বলে, সাপে কাটা মানুষকে এই ভাবে ভাসিয়ে দিলে ফিরে আসে। একমাত্র ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশায় তা-ই করেছিলাম। এখন ওর বিকৃত দেহ আনতে যেতে হবে।’’

পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের নদিয়া জেলা সম্পাদক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মাঝে এই ধরনের ঘটনা কমেছিল। কিন্তু সম্প্রতি অবৈজ্ঞানিক ভাবনার উপরে ভিত্তি করে তৈরি টিভি সিরিয়ালগুলো মানুষকে আবার পিছনের দিকে টানছে। কুসংস্কার উসকে দিচ্ছে। এ সব তারই ফল।”

Crime Violence Superstition
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy