Advertisement
০৭ মে ২০২৪

বিক্ষুব্ধদের টেনে লালগড়েও পদ্ম

মোটরবাইক আরোহী দুই যুবকের প্রস্তাব শুনে চমকেছিলেন লালগড়ের একদা দাপুটে সিপিএম নেতা। দিনতিনেক আগের কথা। বাড়ি বয়ে আসা যুবকদের প্রস্তাব, বিজেপি-র সংগঠন তৈরি হচ্ছে, বর্তমানে সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে থাকা ওই নেতা যেন পুরোদস্তুর দলবদল করে ওই তল্লাটে পদ্ম ফোটাতে হাল ধরেন!

সুরবেক বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:২৬
Share: Save:

মোটরবাইক আরোহী দুই যুবকের প্রস্তাব শুনে চমকেছিলেন লালগড়ের একদা দাপুটে সিপিএম নেতা। দিনতিনেক আগের কথা। বাড়ি বয়ে আসা যুবকদের প্রস্তাব, বিজেপি-র সংগঠন তৈরি হচ্ছে, বর্তমানে সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে থাকা ওই নেতা যেন পুরোদস্তুর দলবদল করে ওই তল্লাটে পদ্ম ফোটাতে হাল ধরেন!

লালগড় আন্দোলন শুরুর আগে থেকেই ওই দু’জন ছিলেন মাওবাদী স্কোয়াডের ঘনিষ্ঠ, কাজকর্মে যুক্ত। জেলও খেটেছেন। রাজ্যে পালাবদলের পর তাঁরা শাসক দলে ভেড়েন। চার বছর আগে পঞ্চায়েত ভোটেও শাসক দলের হয়ে খেটেছিলেন। আর তাঁদেরই কাছ থেকে বিজেপি-র মণ্ডল সভাপতি হওয়ার প্রস্তাব আসায় বিস্ময়ের শেষ ছিল না ওই ব্যক্তির।

লালগড়ের কাঁটাপাহাড়ি অঞ্চল পুলিশি সন্ত্রাসবিরোধী জনসাধারণের কমিটির জন্ম দিয়েছিল। লালগড়ে যে সব জায়গায় বিজেপি এখন মাথা তোলার চেষ্টা করছে, তার মধ্যে কাঁটাপাহাড়িতেই তাদের শক্তি বেশি। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ স্বীকার করছেন, রামগড়, বেলাটিকরি, বিনপুর ও দহিজুড়ি অঞ্চলেও বিজেপি-র শক্তি বাড়ছে। তৃণমূলের এক যুব নেতার কথায়, ‘‘এখন ভোট হলে বিজেপি জিতবে, তা বলছি না। তবে কিছু কিছু অঞ্চলে মনে হচ্ছে, প্রধান বিরোধী শক্তি বিজেপি-ই।’’

লালগড়ে একদা রাজনৈতিক শক্তি বলতে ছিল সিপিএম ও ঝাড়খণ্ড পার্টি, পরে তৃণমূল। কমিটির বহু নেতা-কর্মী-সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। কিন্তু এখন বিজেপির সংগঠন বিস্তারের কারণ কী? তৃণমূল সূত্রেরই বক্তব্য, একে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ঝাড়গ্রাম লাগোয়া খড়্গপুরের বিধায়ক। এক সময়ে জনসাধারণের কমিটির সামনে ছিলেন, এমন যুবকদের একটা অংশ মনে করেন, তৃণমূলে তাঁরা প্রাপ্য সম্মান পাননি। বিজেপির সংগঠন গড়ায় সে রকম কেউ কেউ বড় ভূমিকা নিচ্ছেন। সিজুয়ার খয়রাশোল গ্রামের সনাতন মুর্মু ও জেলেপাড়া গ্রামের সুখচাঁদ সরেনের নাম উঠে আসছে।

এক যুগ আগে বিধানসভা ভোটে বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন, বর্তমানে শাসক দলে বিক্ষুব্ধ, এমন মানুষের ইন্ধনও এতে আছে বলে দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের। তৃণমূলের এক বিক্ষুব্ধ নেতার কথায়, ‘‘বহু পঞ্চায়েতে দুর্নীতি, তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষ ক্ষুব্ধ, তবু সিপিএম-কংগ্রেস নিষ্ক্রিয়। এই অবস্থায় বিজেপিকে বেছে নিচ্ছেন অনেকে। দলে সুবিচার না পেলে আমাদেরও ভাবতে হবে।’’ দিলীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমার জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর। তার প্রভাব আছে। জঙ্গলমহলবাসী নতুন কিছু চাইছে।’’

লালগড়ে বিজেপি-র সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে নিলেও ঝাড়গ্রামের বিধায়ক, প্রাক্তন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা বলেন, ‘‘মূলত সিপিএম থেকেই কেউ কেউ বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছে। আমাদের দলে যারা আখের গোছানোর মতলবে যোগ দিয়েছিল, তারাও যাচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lalgarh BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE