Advertisement
E-Paper

জ্বরে নাজেহাল উত্তর ২৪ পরগনা

মৃতদের মধ্যে এক জন দেগঙ্গার রামনাথপুরের নবম শ্রেণির ছাত্রী রুকসানা খাতুন (১৫)। জ্বর হওয়ায় মঙ্গলবার সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছিল তাকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:০৫
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

একে জ্বরে নাজেহাল উত্তর ২৪ পরগনার নানা প্রান্তের মানুষ। সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ ছিলই। তার মধ্যে হাসপাতাল-ফেরত দুই রোগিণীর মৃত্যুতে সেই ক্ষোভ আরও বাড়ল।

মৃতদের মধ্যে এক জন দেগঙ্গার রামনাথপুরের নবম শ্রেণির ছাত্রী রুকসানা খাতুন (১৫)। জ্বর হওয়ায় মঙ্গলবার সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছিল তাকে। শনিবার তাকে ছুটি দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাড়ি ফিরে রাতেই সে মারা যায়। গোপালনগরের তৃপ্তি বিশ্বাসকে (৩২) বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল বৃহস্পতিবার রাতে। শুক্রবার ছুটি দেওয়া হয় তাঁকে। শনিবার রাতে তিনি ফের অসুস্থ হন। রবিবার সকালে ফের হাসপাতালে আনার পথেই মারা যান তৃপ্তি।

মৃতাদের পরিবারের অভিযোগ, বেসরকারি ভাবে রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়লেও গুরুত্ব দেননি হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা। তৃপ্তিদেবীর স্বামী বনগাঁ থানায় বনগাঁ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কাজে গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের সারবত্তা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন বনগাঁ হাসপাতালের সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো। রুকসানার পরিবার অবশ্য কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি।

মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাঘবেশ মজুমদারের আশ্বাস, ‘‘যে অভিযোগ আসছে, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষে যতটা সম্ভব পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।’’

জেলায় জ্বরের প্রকোপ যে বাড়ছে ও কিছু রোগীর রক্তে ডেঙ্গির জীবাণুও মিলছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা। শনিবার হাবরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৮৪ জনের রক্ত পরীক্ষা হয়। তার মধ্যে ৬৭ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। রবিবার হাসপাতালে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন জেলাশাসক অন্তরা আচার্য। হাসপাতালের বন্ধ একটি ঘর খুলে দেওয়া হয় জ্বরের রোগীদের জন্য।

এই যেখানে অবস্থা, সেখানে বাগদা, বনগাঁ, গাইঘাটা, স্বরূপনগর, বসিরহাট, বাদুড়িয়া, হাড়োয়া বা দেগঙ্গায় কিছু স্বাস্থ্য শিবির বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ মানুষ। ক্ষুব্ধ খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও। বন্ধ শিবিরগুলি চালুর নির্দেশ দেন জেলাশাসক। দুপুরের মধ্যেই হাবরার মারাকপুর ও বেড়গুম-১ স্বাস্থ্য শিবির চালু হয়। ওই সব জায়গায় রবিবার যে সব স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা ছিল, সেখানে উপচে পড়ে রোগীদের ভিড়। ছুটির দিন হওয়ায় কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা না-আসায় হয়রানির শিকার হন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। তাঁরা বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে ভিড় জমান।

জেলায় দেগঙ্গার অবস্থাই যে সবচেয়ে খারাপ, তা মেনে নিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। মৃত রুকসানার দাদু আব্দুল রাজ্জাক বলেন, ‘‘দিন সাতেক আগে ওর জ্বর হয়। বাইরে রক্ত পরীক্ষা করাই। ডেঙ্গি ধরা পড়ে। প্লেটলেট কম থাকায় স্থানীয় ডাক্তারবাবু হাসপাতালে ভর্তি করাতে বলেন। মঙ্গলবার ভর্তি করালাম। নাতনি ভাল আছে বলে শনিবার ছুটি দেওয়া হল।’’ রুকসানার মা রিজিয়া বিবি বলেন, ‘‘হাসপাতাল থেকে এসে মেয়েটা বিছানায় শুয়ে পড়ল। আর উঠল না।’’

দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুর গ্রামের হাজি আহম্মদ আলি বলেন, ‘‘গ্রাম থেকে প্রতিদিন যে ভাবে গাড়ি করে রোগীরা হাসপাতালে যাচ্ছেন, তাতে মনে হচ্ছে মহামারি লেগেছে।’’ মোতালেব হোসেন নামে আর এক গ্রামবাসীর ক্ষোভ, ‘‘শহরতলিতে চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে সরকারি তৎপরতা থাকলেও গ্রামে দেখা যাচ্ছে না।’’

Fever Dengue North 24 Parganas district উত্তর ২৪ পরগনা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy