Advertisement
E-Paper

School Student: স্কুলে ফেরাতে গিয়ে শিক্ষকরা দেখলেন, নবম শ্রেণির ছাত্রী সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা!

অনেককেই আর আসতে না-দেখে শিক্ষক-শিক্ষিকারা চিন্তায় পড়েছিলেন। ছাত্রছাত্রীদের ফেরাতে ‘অভিযানে’ নেমে শুক্রবার কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে তাঁরা থ!

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:১৩

প্রতীকী ছবি।

ওদের কেউ শ্বশুরবাড়িতে খুন্তি নাড়ছে। কেউ সন্তান মানুষ করছে। কেউ অন্তঃসত্ত্বা। কতই বা বয়স ওদের! ১৩, ১৪ বা ১৫ বছর।

তিন সপ্তাহ আগে স্কুল খুলেছে। অনেককেই আর আসতে না-দেখে হুগলির জাঙ্গিপাড়া ব্লকের নিলারপুর রাজা রামমোহন বিদ্যাপীঠের শিক্ষক-শিক্ষিকারা চিন্তায় পড়েছিলেন। ছাত্রছাত্রীদের ফেরাতে তাঁরা বাড়িতেই হাজির হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ‘অভিযানে’ নেমে শুক্রবার কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে তাঁরা থ!

মিরপুর গ্রামের ক্লাস সেভেনের টিয়া মালিক (নাম পরিবর্তিত) করোনার ছুটিতে বিয়ে করে ফেলেছে। মা-ও হয়েছে। টিয়ার মা জানালেন, মেয়ের বয়স ১৪। নাতনির এক মাস। বললেন, ‘‘মেয়ে যাকে ভালবাসত, তাকেই বিয়ে করে নিয়েছে। কী করব বলুন?’’ শিক্ষক শুধোন, ‘‘স্কুলকে জানিয়েছিলেন?’’ মা নিরুত্তর।

সেখান থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা গেলেন কাশীপুরে। দেখা গেল, নাইনে পড়তেই গত পৌষে বিয়ে হয়েছে বৈশাখী মালিকের (নাম পরিবর্তিত)। পঞ্চদশী এখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। কাশীপুরে মামার বাড়িতে মানুষ। দিদিমা বলেন, ‘‘ওর বাবার মাথার সমস্যা। জেঠু-জেঠিমা ভাল পাত্র পেয়ে সম্বন্ধ করেছেন।’’ শিক্ষিকা বৈশাখীকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘পড়া ছাড়লি কেন?’’ বারান্দার বাঁশ আঁকড়ে ধরে ফ্যালফেলিয়ে চেয়ে থাকে নাবালিকা।

‘অভিযানে’ এমন আরও খবর আসতে লাগল। কিশোরীর বিয়ে আর কিশোরের কাজে লেগে পড়ার খবর। প্রধান শিক্ষক গৌতম বালির আক্ষেপ, ‘‘কী অবস্থা!’’ আশপাশের অনেক গ্রামের ছেলেমেয়ে ওই স্কুলে পড়ে। এই ক’দিনে দশম-দ্বাদশের তিনশোরও বেশি ছাত্রছাত্রীর মধ্যে সর্বাধিক উপস্থিতি ৫৬। নবম-একাদশে ২৩৪ জনের মধ্যে ৫৪। পড়ুয়াদের স্কুলে টেনে আনতে মাইকে প্রচার করা হয়। লাভ হয়নি। তাই, বুধবার থেকে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত। ‘অভিযানে’ শামিল হচ্ছে স্কুলের ‘কন্যাশ্রী’
ক্লাবের ছাত্রীরা। দেখা যাচ্ছে, পড়া ফেলে ছাত্র খেতমজুর হয়েছে। ধান কাটা, আলু লাগানোর কাজ করছে। কেউ গ্যারাজে। মাধ্যমিকের জন্য নাইনের কয়েক জনের রেজিস্ট্রেশনের কাজ বাড়িতে বা কাজের জায়গায় গিয়ে করিয়ে নেন শিক্ষকরা। অনেকেই জানায়, ‘বড় ফোন’ (স্মার্টফোন) নেই। অনলাইন ক্লাস কাজে আসেনি।

গ্যারাজে কাজ শিখছে হরিহরপাড়ার ক্লাস নাইনের শেখ খালেক (নাম পরিবর্তিত)। দশম শ্রেণির আর এক ছাত্র হায়দরাবাদে গয়নার কাজ করতে যাবে বলে প্রস্তুত। শিক্ষকদের কথায় দু’জনেই জানায়, স্কুলে যাবে। কিছু অভিভাবক প্রতিশ্রুতি দেন, ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠাবেন। কেউ কেউ কথা দেন, মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি থেকে এনে পড়ানোর চেষ্টা করবেন। এক ছাত্রীর শ্বশুরবাড়ির লোককেও এ নিয়ে ফোনে বোঝাতে দেখা যায় উদ্বিগ্ন শিক্ষককে।

গ্রামাঞ্চলের বহু ছেলেমেয়ের স্কুলছুটের আশঙ্কা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের ছিলই। আর নাবালিকা বিয়ে বন্ধে প্রশাসনের নজরদারি কোন তিমিরে, কয়েক ঘণ্টার যাত্রাপথেই মালুম হয়েছে। বিষয়টি জেনে মহকুমাশাসক (শ্রীরামপুর) সম্রাট চক্রবর্তীর আশ্বাস, শীঘ্রই পদক্ষেপ করা হবে। একই আশ্বাস দেন এলাকার বিধায়ক স্নেহাশিস চক্রবর্তীও। প্রশ্ন উঠছে, একটি ব্লকে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই যদি এই অবস্থা হয়, জেলার, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার সামগ্রিক চিত্র তবে কী!

COVID19 Coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy