Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সূর্যকে বিচিত্র আক্রমণ, ফের বিতর্কে সোনালি

তাঁর মুখই তাঁকে বারবার খবরের শিরোনামে এনেছে! তৃণমূলের অন্দরের ব্যাখ্যা, মুখে লাগাম পরানোর জন্যই তাঁর একদা অত্যন্ত প্রিয়পাত্রীকে ডেপুটি স্পিকার পদ উপহার দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সে লাগামে বাঁধা পড়েননি সোনালি গুহ! ডেপুটি স্পিকারের মতো সাংবিধানিক পদে থেকেই শাসক দলের রাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি এ বার বিচিত্র আক্রমণ করলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকে!

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৫ ০৩:২৩
Share: Save:

তাঁর মুখই তাঁকে বারবার খবরের শিরোনামে এনেছে! তৃণমূলের অন্দরের ব্যাখ্যা, মুখে লাগাম পরানোর জন্যই তাঁর একদা অত্যন্ত প্রিয়পাত্রীকে ডেপুটি স্পিকার পদ উপহার দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সে লাগামে বাঁধা পড়েননি সোনালি গুহ! ডেপুটি স্পিকারের মতো সাংবিধানিক পদে থেকেই শাসক দলের রাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি এ বার বিচিত্র আক্রমণ করলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকে! যা নিয়ে ফের খুলে গেল বিতর্কের নতুন ঝাঁপি।

কলকাতা ময়দানে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে শুক্রবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভায় হাজির ছিলেন সোনালি। বামেদের বৃহস্পতিবারের ‘নবান্ন অভিযান’ ঘিরে রাজ্য রাজনীতি এখন সরগরম। বামেদের ওই কর্মসূচির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ দিন তৃণমূলের সমাবেশে আক্রমণের তির ছিল বামেদের দিকেই। সেই সূত্রেই সমাবেশ মঞ্চ থেকে সোনালি এ দিন বিরোধী দলনেতার সম্পর্কে বলেন, ‘‘সূর্যবাবু মাঝে মাঝেই পেটে হাত দেন। যেন পেটে ৯ মাসের বাচ্চা আছে। এমন ভাবে পেটে হাত দেন, যা দেখে মনে হয় কোনও ভাবে পা পিছলে পড়ে গেলে বাচ্চার ক্ষতি না হয়!’’ এর পরেই আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে বিধানসভার পরবর্তী অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা উল্লেখ করে বিরোধী দলনেতাকে সোনালির হুঁশিয়ারি, ‘‘বিধানসভায় আবার যদি সূর্যবাবু পেটে হাত দিয়ে কথা বলেন, তা হলে ৯ মাসের বাচ্চাটাকে পেট ফাঁসিয়ে বার করে দেব!’’

প্রথমত, ডেপুটি স্পিকারের মতো সাংবিধানিক পদে থেকে রাজনৈতিক সভায় যাওয়া উচিত কি না, প্রশ্ন আছে তা নিয়েই। সোনালি অতীতের মতোই এ বারও দলীয় সভায় উপস্থিত হয়েছেন। এবং সেখানে গিয়ে যে ভাবে বিরোধী দলনেতাকে আক্রমণ করেছেন, তাতে স্তম্ভিত সব মহল! প্রশ্ন উঠে গিয়েছে দলের ভিতরে-বাইরে। বিরোধী দলের বিধায়ক থাকাকালীন নানা বিতর্কেই জড়িয়েছেন সোনালি। বিরোধীদের বক্তব্য, নোদাখালির ওসি-কে গালিগালাজ করে থানায় তালা লাগিয়ে দেওয়া, বজবজে স্বাস্থ্য আধিকারিককে হুমকি দেওয়া বা বিধানসভার লবিতে ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িয়ে গিয়ে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উদ্দেশে অশালীন শব্দ প্রয়োগ— এ সবেই খচিত হয়ে আছে সোনালির অতীত। ডেপুটি স্পিকার হওয়ার পরেও কয়েক মাস আগে হাওড়ার গোলাবাড়ি এলাকার এক আবাসনে ঢুকে চিকিৎসক পিতা-পুত্রকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু প্রকাশ্য মঞ্চে দাঁড়িয়ে কোনও মহিলা ডেপুটি স্পিকার তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ শিবিরের কারও সম্পর্কে এমন বলতে পারেন, এ দিন সোনালির কথা শোনার আগে তা অনেকেরই ধারণার বাইরে ছিল!

বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম যেমন বলেছেন, ‘‘অত্যন্ত গর্হিত ও রুচিহীন কাজ। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের দুর্ভাগ্য, এ সব দেখতে হচ্ছে! গণতান্ত্রিক ব্যবস্থারই কোনও মর্যাদা নেই।’’ স্পিকার পদে থেকেও হালিম কেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্যপদ রেখে দেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল ঠিকই। কিন্তু হালিম ব্রিগেড বা শহিদ মিনারে বামেদের সমাবেশে শ্রোতা হিসাবে হাজির থাকলেও বক্তা থাকতেন না। বিধানসভার বর্তমান স্পিকার বিমান বন্দ্যেপাধ্যায়ও নিজের বিধানসভা কেন্দ্র সংক্রান্ত অনুষ্ঠান ছাড়া রাজনৈতিক মঞ্চে বক্তৃতা করেন না। সোনালি ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন নেত্রী হিসাবে সেই গণ্ডি ভেঙেছেন, শালীনতার সীমাও ছাড়িয়েছেন বলে রাজনীতিতে অভিজ্ঞদের মত। স্পিকার বিমানবাবুও বলেন, ‘‘আমি ওখানে ছিলাম না। কী বলেছেন, জানি না। তবে যদি এমন কথা বলে থাকেন, তা হলে এই পদে থেকে তা অনুচিত ও অনভিপ্রেত হয়েছে।’’

ডেপুটি স্পিকারের মন্তব্যের সমালোচনা করে কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া বলেন, ‘‘এটা শুধু অশালীন ও অসংসদীয়ই নয়, অপরাধও বটে! সংসদীয় পদে থেকে এমন আচরণ শোভন কি না, তার বিচার হয়তো মুখ্যমন্ত্রীই করবেন। অতীতে সোনালিদেবীর কর্মকাণ্ড আমরা দেখেছি। এখন জানা গেল, তাঁর লিঙ্গজ্ঞানও গোলমেলে!’’ তৃণমূলের মহাসচিব তথা পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মন্তব্য এড়িয়ে গিয়ে বলেছেন, ‘‘আমি তখন সভাস্থলে ছিলাম না। কী বলেছেন, জানি না।’’ তবে শাসক শিবিরের অন্দরের খবর, দলের শীর্ষ নেতৃত্বও মনে করছেন, রুচিহীনতার পরিচয় দিয়েছেন সাতগাছিয়ার বিধায়ক। দলের অন্দরে এমন চর্চাও চলছে, আগামী বার ওই কেন্দ্রে আর টিকিট না-ও পেতে পারেন বুঝেই কি সোনালি দলনেত্রীর কাছে নিজের দর বাড়াতে মরিয়া হয়েছেন?

ঠিক সেই প্রশ্ন তুলেছেন স্বয়ং সূর্যবাবুও। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ওই দলে সব কিছুই চলে এক জনের নির্দেশে। বাকি সান্ত্রীরা কে কী বললেন, তা নিয়ে মাথা ঘামানোর মানে হয় না।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর সংযোজন, ‘‘বিধানসভায় দেখা হলে ওঁরা এত নম্র, ভদ্র আচরণ করেন, মাঝেমাঝে ভয় পেয়ে যাই! কিন্তু দলনেত্রীর কাছে দর বাড়াতেই প্রকাশ্যে এমন গাল দিতে হয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE