নারদ-কাণ্ডের তদন্তভার আগেই কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এ বার নারদ স্টিং নিয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করলেন রাজ্যের এমন এক মন্ত্রীর স্ত্রী, যাঁর স্বামী নিজেই ওই ঘুষ-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত!
মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায় যে অভিযোগ দায়ের করেছেন, তার ভিত্তিতে জালিয়াতি, ষড়যন্ত্র-সহ চারটি ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। এই মামলার তদন্ত করবে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।
কলকাতা হাইকোর্টে নারদ-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবি এখনও বিচারাধীন। তার মধ্যেই প্রশাসনিক ভাবে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তদন্তের ভার পেয়েছেন সেই পুলিশকর্তা, সারদা-কাণ্ডে যিনি তদন্ত করার পরে সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। এ বারও তদন্তের ভার পুলিশকে দেওয়ার পরে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী শনিবার দলের কর্মশালায় মন্তব্য করেছেন শুভেন্দু অধিকারী বা ফিরহাদ হাকিমেরা কি খেতে পান না যে, টাকা নিতে হবে? সামনে টাকা রেখে আসলে তাঁর দলের নেতাদের ফাঁসানো হয়েছে বলেও বোঝাতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরে মেয়র-পত্নী যে অভিযোগ দায়ের করেছেন, তার প্রতিপাদ্যও একই। স্বভাবতই বিরোধীরা মনে করছে, পুলিশি তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে নারদের স্টিং-সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েলকে গেঁথে ফেলার জন্যই চিত্রনাট্য এগোচ্ছে!
বিধানসভা ভোটের আগে নারদ নিউজের স্টিং ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছিল। সেই ভিডিও ফুটেজে শোভন, ফিরহাদ, শুভেন্দু, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, কাকলি ঘোষদস্তিদার, সুলতান আহমেদ-সহ তৃণমূলের কয়েক জন নেতা-মন্ত্রী ও সাংসদকে দেখা গিয়েছিল। কয়েক জনের টাকা নেওয়ার ছবিও দেখিয়েছিল নারদের ফুটেজ। ভোটের সময়ে ঘুষ-কাণ্ড নিয়ে হইচই হয়েছিল বিস্তর। গোড়া থেকেই অবশ্য তৃণমূল এর পিছনে চক্রান্তের অভিযোগ করে এসেছিল। ভোটে জিতে দ্বিতীয় বার সরকার গঠনের পরেই নারদ ফুটেজ নিয়ে তদন্তভার কলকাতা পুলিশকে দিয়েছেন মমতা।
পুলিশের একাংশের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তদন্ত শুরু করতে হলে পুলিশকে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা করতে হত। সে ক্ষেত্রে রত্নাদেবীর অভিযোগ পুলিশকে তদন্ত শুরু করতে সাহায্য করবে। কেন? লালবাজার সূত্রে বলা হচ্ছে, রত্নাদেবী তাঁর অভিযোগে যা জানিয়েছেন, তার ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির সম্মানহানির জন্য জালিয়াতি (৪৬৯), সমাজে মিথ্যা খবর রটানো (৫০৫ (১)বি), নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য কোনও প্রার্থীর বিরুদ্ধে মিথ্যা খবর রটানো (১৭১জি) এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের (১২০বি) ধারা মামলায় যু্ক্ত করা হয়েছে। এই ধারাগুলি নারদ-কাণ্ডে নাম জড়়ানো বাকি তৃণমূল মন্ত্রী-সাংসদদের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে।
তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, ‘‘দল তো এখানে অভিযুক্ত নয়। যাঁদের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে, তাঁরা বিচার চাইতেই পারেন। তাঁদের মানহানির উদ্দেশ্যে চক্রান্ত করা হয়েছে, এই অভিযোগ নেতাদের পরিজনেরা করতেই পারেন।’’
বিরোধীরা অবশ্য গোটা ঘটনায় প্রকৃত সত্য আড়াল করার চেষ্টাই দেখছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের অভিযোগ, ‘‘যা হচ্ছে, পুরোটাই তো প্রহসন! প্রথমে পেটোয়া পুলিশকর্তাকে তদন্তের ভার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরে নিজেই কলঙ্কিত সহকর্মীদের ক্লিন চিট দিয়ে দিলেন। এর পরে আর তদন্তের পরিণতি কী হবে!’’ একই সুর বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের। তাঁর কথায়, ‘‘যারা অভিযুক্ত, তারা নিজেরাই নিজেদের আড়াল করতে তদন্ত করাচ্ছে!’’
লালবাজারের খবর, তদন্তের নেতৃত্ব খোদ পুলিশ কমিশনার রাজীবের হাতে থাকলেও মূল তদন্তের জন্য গোয়েন্দা বিভাগের জালিয়াতি দমন, প্রতারণা দমন-সহ বিভিন্ন শাখার অফিসারদের নিয়ে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গড়া হবে। তাঁরাই এই তদন্তের কাজ করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy