মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ায় আরও কয়েকজন সন্দেহভাজনের খোঁজ পেল রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। সূত্রের খবর প্রাথমিক ভাবে খোঁজখবর করার পর ওই সন্দেহভাজনদের ওপর শুরু হয়েছে নজরদারি।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, গত ডিসেম্বরে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ এবং অসম পুলিশ মুর্শিদাবাদ থেকে জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি)-এর ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করে। একই সঙ্গে জেল বন্দি ‘জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ’ (জেএমবি)-এর এক সদস্যকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করেন এসটিএফের তদন্তকারীরা। তাতেই সন্দেহভাজন হিসেবে প্রায় ৩০ জনের নাম উঠে আসে। মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ার বাসিন্দা ওই ৩০ জনকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। গোয়েন্দাদের দাবি, তাতেই কয়েক জন বাসিন্দার নাম উঠে আসে। যাদের সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে ধৃত এবিটি-র জঙ্গিদের। এক তদন্তকারী জানান, ওই সন্দেহভাজনদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হলেও তাদের সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। একই সঙ্গে অসম পুলিশের হাতে এ রাজ্য থেকে ধৃত এবিটি-র চার সদস্যকে জেরা করে ওই সন্দেহভাজনদের কার্যকলাপ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে। তা হলেই বোঝা যাবে ওই সন্দেহভাজনদের ভূমিকা কী, কতটা জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত তারা।
ডিসেম্বর মাসে অসম পুলিশ রাজ্য পুলিশের এসটিএফের সাহায্য নিয়ে এবিটি-র দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছিল। তারা হল মিনারুল শেখ এবং আব্বাস আলি। ওই দু’জনকে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। সেই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় এবিটি-র অসম মডিউলের মাথা নুর ইসলাম মণ্ডল এবং শাব শেখ ওরফে শাদ রাডিকে। কেরল থেকে বাংলাদেশি শাব শেখকে গ্রেফতার করেছিল অসম পুলিশ। বাংলাদেশি হলেও শাব মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া ও নওদায় এক সময়ে বসবাস করত। প্রথমে নওদায় ভোটার তালিকায় নাম তুলেছিল সে। পরে হরিহরপাড়ার কেদারতলায় ভোটার তালিকায় নাম স্থানান্তর করে সে।
এসটিএফ জানিয়েছে, ওই চারজনকে আদালতের নির্দেশে বুধবার রাতে গুয়াহাটি থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। বৃহস্পতিবার ওই চারজনকে বহরমপুর আদালতে তোলা হলে মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারক সৈয়দ দিলওয়ার হোসাইন ধৃতদের ১৪ দিনের এসটিএফ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ দিন সরকার পক্ষের আইনজীবী বিশ্বপতি সরকার বলেন, ‘‘এসটিএফ ডিসেম্বরে সাজিবুল ইসলাম এবং মুস্তাকিম মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছিল। সেই মামলায় অসম থেকে নিয়ে আসা চার জনের যোগসূত্র পেয়েছে এসটিএফ। সে কারণেই এ দিন এসটিএফ ওই চার জনকে নিজেদের হেফাজতে চেয়েছিল।’’ উল্লেখ্য, নওদা থেকে এসটিএফ সাজিবুল ইসলাম এবং মুস্তাকিম মণ্ডলকে জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সাজিবুল কেরল থেকে ধৃত শাব শেখের পিসির ছেলে।
পুলিশি কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে অসম থেকে আনা মিনারুল, আব্বাস, নুর এবং শাব রাডিকে এদিন আদালতে হাজির করানো হয়। মিনারুল এবং আব্বাসের আত্মীয়রা আদালত চত্বরে এসেছিলেন তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য। তাদের আদালতে ঢোকা ও বেরোনোর সময় তাঁরা ওই দু’জনকে দেখতে পেলেও কোন কথা বলতে পারেননি বলে সূত্রের দাবি।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)