Advertisement
E-Paper

পাততাড়ি গোটাচ্ছে ভেঙ্কটেশ, পিছু হঠলেন শ্রীকান্ত মোহতা

বিঘ্ননাশক সিদ্ধিদাতার পুজোর দিনেই রণে ভঙ্গ দিতে হল! মাথার উপরে রাজ্য প্রশাসনের পরোক্ষ হাত ছিল! তবু বিপদ কাটল না। বন্দরের জমি জবরদখল করে টিভি সিরিয়ালের ব্যবসা যে আর টানা যাবে না তা বৃহস্পতিবার মেনে নিয়েছে শ্রীভেঙ্কটেশ ফিল্মস।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৪:২১
পি-৫১ স্টুডিও থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ধারাবাহিকের বিভিন্ন সেট। — নিজস্ব চিত্র।

পি-৫১ স্টুডিও থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ধারাবাহিকের বিভিন্ন সেট। — নিজস্ব চিত্র।

বিঘ্ননাশক সিদ্ধিদাতার পুজোর দিনেই রণে ভঙ্গ দিতে হল!

মাথার উপরে রাজ্য প্রশাসনের পরোক্ষ হাত ছিল! তবু বিপদ কাটল না। বন্দরের জমি জবরদখল করে টিভি সিরিয়ালের ব্যবসা যে আর টানা যাবে না তা বৃহস্পতিবার মেনে নিয়েছে শ্রীভেঙ্কটেশ ফিল্মস। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য প্রযোজক-ব্যবসায়ী শ্রীকান্ত মোহতার সংস্থার তরফে বন্দর কর্তৃপক্ষকে আইনি চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে ধাপে ধাপে বন্দরের জমি ছেড়ে চলে যেতে চায় তারা।

চিঠির বিষয়টা মেনে নিয়েছেন শ্রীকান্ত মোহতা নিজেই। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘আমরা আইনজীবীর মাধ্যমে বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। বন্দরের ওই জমিতে না-জেনে এলএমজে কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তি বাতিল করে দিচ্ছি।’’

ভেঙ্কটেশের তরফে আইনজীবী সঞ্জয় বসুর দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, পি-৫১ হাইড রোড এক্সটেনশনের ঠিকানায় দু’দফায় ১৯ হাজার বর্গফুট ও ৫০ হাজার বর্গফুট এলএমজে কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। ১৯ হাজার বর্গফুটের অংশটুকু দু’সপ্তাহের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হবে। বাকি অংশে যেহেতু প্রচুর যন্ত্রপাতি রয়েছে, তাই অংশটি খালি করতে তিন মাস সময় প্রয়োজন। এই সময়ের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ যা ভাড়া দাবি করবেন, সেটাই ভেঙ্কটেশ মিটিয়ে দিতে রাজি বলেও জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে।

বন্দরের তরফে অবশ্য এখনই ভেঙ্কটেশের চিঠি নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করা হচ্ছে না। বন্দরের এক কর্তা বলেন, ‘‘চিঠি এখনও হাতে পাইনি। তবে যাঁরা ওই জমিতে আছেন, তাঁরা জবরদখলকারী। আইনি পথে তাঁদের উচ্ছেদ করব। এ সংক্রান্ত কোনও চিঠি এসে থাকলে আইনি পরামর্শ নিয়েই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’

এখন প্রশ্ন হল, বন্দরের জমি এলএমজে-র কাছ থেকে কেন ভাড়া নিয়েছিল ভেঙ্কটেশ?

আইনজীবীর চিঠিতে সংস্থা দাবি করেছে, ২০১৩-র ১ এপ্রিল এবং ২০১৪-র ১৯ ডিসেম্বর এলএমজের সঙ্গে লিজ চুক্তি করার সময় তাদের জানাই ছিল না যে ওই জমি ঘিরে আইনি বিবাদ রয়েছে। উল্টে এলএমজে তাদের বুঝিয়েছিল যে পি-৫১ প্লটের উপরে ওই সংস্থারই আইনি অধিকার আছে এবং তারাই ওই জমি ভাড়া দেওয়ার অধিকারী।

ভেঙ্কটেশের আরও দাবি, ২০১৪-র ডিসেম্বরে আনন্দবাজার পত্রিকায় জমি ঘিরে বিবাদের খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে তারা এলএমজে-কে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানতে চায়। কিন্তু তখনও এলএমজে-র তরফে ফের জানানো হয়েছিল যে, জমির উপরে আইনি অধিকার তাদেরই। তা ছাড়া যেহেতু বন্দরের সঙ্গে এলএমজে-র সম্পর্ক দীর্ঘদিনের, তাই দু’পক্ষে যা-ই বিবাদ হোক সে জন্য ভেঙ্কটেশের কোনও অসুবিধা হবে না।

এখন তবে এলএমজে-র সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে পি-৫১ ছেড়ে কেন চলে যেতে চাইছে ভেঙ্কটেশ? আইনজীবীর চিঠিতে সংস্থা দাবি করেছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর ওই জমি ঘিরে যা ঘটেছে, তার পরে আর এলএমজে-র উপরে তাদের কোনও আস্থা নেই।

ভেঙ্কটেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, রবিবার সকালে বন্দর কর্তৃপক্ষ জমি দখল নেওয়ার দু’ঘণ্টার মধ্যে তারা দুষ্কৃতী নামিয়ে, বন্দরের নিয়োগ করা নিরাপত্তারক্ষীদের তাড়িয়ে ফের জমি দখল করে নেয়। শ্রীকান্ত মোহতার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠতার সূত্রে যে কাজে তাদের সাহায্য করেছিল তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। সেই দুষ্কৃতীদের হাতে প্রহৃত হয়েছিলেন আনন্দবাজারের সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিক। সে দিনই আনন্দবাজােরর অন্য এক সাংবাদিককে ফোন করে শ্রীকান্ত ওই ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে বলেছিলেন, তাঁদের ইউনিটের কোনও কোনও টেকনিশিয়ান উত্তেজনার মাথায় এমন কাজ করে ফেলেছেন।

আইনজীবীর চিঠিতে প্রযোজক সংস্থাটি অবশ্য গোটা ঘটনায় তাদের কোনও ভূমিকা থাকার কথাই স্বীকার করেনি। তাদের দাবি, ‘‘সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ বন্দরের আধিকারিকেরা কয়েক জন নিরাপত্তারক্ষী-সহ জমির দখল নিতে আসেন। আমার মক্কেলের স্বার্থ যাতে বিঘ্নিত না হয়, এলএমজে-র নিরাপত্তারক্ষীরা তা নিশ্চিত করেন।... পরের দিন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট পড়ে আমার মক্কেল পরিস্থিতির প্রকৃত গভীরতা অনুধাবন করেন।’’ ভেঙ্কটেশের অভিযোগ, এলএমজে-র মিথ্যা দাবি এবং জালিয়াতির জেরে তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত

হচ্ছে। সেই কারণেই এলএমজে-র সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে পি-৫১ থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যেতে চায় তারা। গত রবিবার এলএমজে-র তরফে যিনি বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, সেই গৌতম মুখোপাধ্যায় অবশ্য ভেঙ্কটেশের অভিযোগ নিয়ে এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ২৪ সেপ্টেম্বর বন্দরের এই জমি-সংক্রান্ত মামলার শুনানি হওয়ার কথা হাইকোর্টে। ‘‘আদালতেই যা বলার বলব,’’— বলেন ওই কর্তা।

এত দিন রণংদেহি মূর্তি ধরে বন্দরের জমি জবরদখল করে রাখলেও এখন হঠাৎ কেন তা ছেড়ে দিতে চাইছে ভেঙ্কটেশ, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের মতে, আইনি যুদ্ধে তাদের পায়ের তলায় যে মাটি নেই, সেটা অবশেষে ভেঙ্কটেশ উপলব্ধি করেছে। এলএমজে-র কাছ থেকে বন্দরের ওই জমি ভাড়া নেওয়া আর এক প্রযোজক সংস্থা ম্যাজিক মোমেন্টস মাসখানেক আগেই শ্যুটিং বন্ধ করে সরে গিয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ এক দিকে যেমন আটঘাট বেঁধে আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তেমনই অন্য দিকে বন্দরের এলাকায় (অর্থাৎ সাগর থেকে কোন্নগর পর্যন্ত গঙ্গাবক্ষে ও নদীর দুই পাড়ে দেড়শো ফুট পর্যন্ত জমিতে) ভেঙ্কটেশকে শ্যুটিং করতে না দেওয়ার কথা ঘোষণা করে চাপ বাড়িয়েছেন। জবরদখল জমিতে জল ও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করতে চেয়ে কলকাতা পুরসভা এবং সিইএসসি-কেও চিঠি দিয়েছেন তাঁরা।

তা ছাড়া গায়ে জবরদখলকারী তকমা লেগে যাওয়ায় ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও ভেঙ্কটেশকে ঘিরে ধরছিল বলে টলিউডের অন্দরের খবর। তাদের মতে, রুপোলি পর্দার জগতে সাফল্যের পিছনে ভাবমূর্তির একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। তাই সব মিলিয়ে চেনা মেজাজ হারিয়ে ভেঙ্কটেশের গলায় এখন আত্মসমর্পণের সুর। শুক্রবার পি-৫১ তে আর পাঁচটা দিনের মতো শ্যুটিং হলেও চারপাশের আবহটা ছিল ভাঙা হাটের। দিনভর ছোট-বড় লরি বোঝাই করে বড় বড় এলসিডি মনিটর, কম্পিউটার, স্টিলের আলমারি, আসবাবপত্র পাড়ি দিয়েছে অন্যত্র।

গণেশ পুজোর দিনেই জবরদখল করা জমিতে বিসর্জনের বাতাস!

abpnewsletters venkatesh films port trust land lmg venkatesh films lmg contract lease shrikanta mohta calcutta port trust
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy