Advertisement
E-Paper

সিজার হলে তো সেই রেফার, কাটেনি উদ্বেগ

মাত্র এক বছর আগে বিয়ে হয়েছে সদ্যযুবতী রিমা গায়েনের। শ্বশুরবাড়ি লাহিড়ীপুর দ্বীপের চরবেড়ি। গোসাবা থেকে নদী পেরিয়ে আড়াই ঘণ্টার পথ। প্রসূতি প্রতীক্ষালয়ের কল্যাণে নির্দিষ্ট তারিখের কয়েক দিন আগেই জুলাইয়ের মাঝামাঝি গোসাবা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। শেষ মুহূর্তে তীব্র যন্ত্রণায় যখন ছটফট করছেন, ডাক্তারবাবুরা জানালেন, পরিস্থিতি জটিল! সিজার করতে হবে!

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৬ ০৪:০৩

মাত্র এক বছর আগে বিয়ে হয়েছে সদ্যযুবতী রিমা গায়েনের। শ্বশুরবাড়ি লাহিড়ীপুর দ্বীপের চরবেড়ি। গোসাবা থেকে নদী পেরিয়ে আড়াই ঘণ্টার পথ। প্রসূতি প্রতীক্ষালয়ের কল্যাণে নির্দিষ্ট তারিখের কয়েক দিন আগেই জুলাইয়ের মাঝামাঝি গোসাবা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। শেষ মুহূর্তে তীব্র যন্ত্রণায় যখন ছটফট করছেন, ডাক্তারবাবুরা জানালেন, পরিস্থিতি জটিল! সিজার করতে হবে!

সিজারের ব্যবস্থা কিন্তু গোসাবা হাসপাতালে এখনও নেই। ফলে ক্যানিং হাসপাতালে রেফার করা হল রিমা-কে। স্বামী শশাঙ্ক গায়েন জানালেন— প্রথমে ভ্যানে নদীর ঘাট, তার পর খেয়া পার হয়ে সোনাখালি পৌঁছনোর পরে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন রিমা। সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সে তাঁকে আর ক্যানিং হাসপাতাল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নেওয়া যায়নি। সোনাখালির বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রিমাকে। দরিদ্র ওই পরিবারের প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ধারদেনা করে সেই টাকা মিটিয়েছেন দরিদ্র মজুর শশাঙ্ক।

একই ভাবে লাক্সবাগানের হেমা মণ্ডল, মৌখালির সরস্বতী মণ্ডল, তালপুরের জ্যোৎস্না কর্মকার, পাঠানখালির মামণি মণ্ডলদের অপেক্ষাঘর থেকে ক্যানিং বা এমআর বাঙুর হাসপাতালে সিজারের জন্য ‘রেফার’ হতে হয়েছে।

গোসাবা, সন্দেশখালি আর পাথরপ্রতিমার যে তিনটি সরকারি হাসপাতালে প্রসূতিদের অপেক্ষাঘর তৈরি হয়েছে, তার কোনওটিতেই সিজারের ব্যবস্থা নেই। নেই প্রশিক্ষিত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, অ্যানাস্থেটিস্ট বা শিশুবিশেষজ্ঞ। নেই আল্ট্রাসনোগ্রাফির ব্যবস্থা। ফলে দূর প্রান্তের যে আসন্নপ্রসূতি অপেক্ষাঘর অবধি পৌঁছে নিশ্চিন্ত বোধ করছেন, তাঁকেই হয়তো প্রসবের সময় উদ্ভুত জটিলতায় সিজারের জন্য ফের ‘রেফার’ হতে হবে।

গত দু’মাসে গোসাবায় অপেক্ষা-ঘরে ৬৯ জন প্রসূতি এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ১৭ জনকে সিজারের জন্য ক্যানিং কিংবা এম আর বাঙুরে রেফার করা হয়েছে। পাথরপ্রতিমা অপেক্ষা-ঘরে এসেছিলেন ৫১ জন প্রসূতি। এঁদের ১৯ জনকে অন্য হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছে। সন্দেশখালি হাসপাতালে গত দু’মাসে ৩৬ জন প্রসূতির মধ্যে সিজারের জন্য রেফার করতে হয়েছে ৭ জনকে।

স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্তরে যত প্রসূতি আসেন তার ৪০-৪৫ শতাংশের সিজার প্রয়োজন হয়। এখন যেহেতু অপেক্ষা-ঘরের দৌলতে বেশি প্রসূতি আসছেন, সেই নিরিখে সিজারের প্রয়োজন এমন প্রসূতির সংখ্যাও বেড়েছে। সেই পরিকাঠামো এখনও গড়ে তোলা যায়নি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে— এত জন হবু মা-কে যদি প্রসবের ঠিক আগে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মুহূর্তে জল-জঙ্গল পার হতেই হয়, তা হলে অপেক্ষা-ঘর করেও তো সমস্যার সর্বাঙ্গীন সমাধান হলো না।

স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর ব্যাখ্যা, ‘‘যেখানে কিছু ছিল না, সেখানে শুরুটা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পেয়ে শুরু করতে গেলে এইটুকুও হত না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘দুর্গমতা আর দূরত্বের জন্য যে প্রসূতিরা হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছনোর কথা ভাবতেও পারতেন না, তাঁরা অনেকেই চলে আসতে পারছেন। চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তাঁদের সাধারণ প্রসব হচ্ছে। বাকিটাও হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের মত, এই প্রকল্প এখন মমতার স্বপ্ন।

কী পরিকল্পনা সরকারের? স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানান, নতুন করে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়োগ হচ্ছে। তাঁরা যাতে প্রত্যন্ত এলাকায় কাজে আগ্রহী হন, তার জন্য বেতনও বাড়ানো হচ্ছে। নিয়োগ হচ্ছে চুক্তিভিত্তিক বিশেষজ্ঞ। সরকার যেমন প্রতীক্ষাগৃহ চালানোর ভার বেসরকারি হাতে দিয়েছে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগের ভারও তাদের দিচ্ছে না কেন? স্বাস্থ্য অধিকর্তার জবাব, ‘‘সংস্থাগুলির উপরে এ ব্যাপারে নির্ভর করা মুশকিল। তারা টাকা নিয়েও প্রকৃত ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করবে, নাকি হাতুড়ে চিকিৎসক ধরে কাজ চালাবে, সেই ভয় থেকে যাবে।’’

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের মতো অপেক্ষাঘর সংলগ্ন হাসপাতালেও বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ডাক্তারদের সপ্তাহে অন্তত কয়েক দিন আনা যায় কিনা, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। পাশাপাশি, প্রসূতিদের জন্য ২৪ ঘণ্টার নিশ্চয়যান, ফেরি এবং আশপাশের দ্বীপের মধ্যে রাতের ফেরি সার্ভিস চালু করার ব্যাপারটিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে।

(শেষ)

caesarean section
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy