Advertisement
১৮ মে ২০২৪

মুখ্যমন্ত্রীর গলাটা যে এখনও শুনতে পাই

রায় শোনার পরে বারবার সেই দুপুরটার কথা মনে হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে অতগুলো কথা কী করে বলেছিলাম, ভাবলে অবাক লাগে।

টুম্পা কয়াল
শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩২
Share: Save:

রায় শোনার পরে বারবার সেই দুপুরটার কথা মনে হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে অতগুলো কথা কী করে বলেছিলাম, ভাবলে অবাক লাগে। বিশ্বাস করুন, আমার কোনও মতলব ছিল না। আমার বান্ধবী, ছোটবেলায় কত গাদি খেলেছি ওর সঙ্গে— তাকে এ ভাবে ছিঁড়েখুঁড়ে শেষ করে দেওয়ার পরে কী করে চুপ থাকতাম!

‘দিদি’ অবশ্য সে দিন কোনও কথা শুনতে চাননি। উল্টে বলেছিলেন, আমি নাকি ‘মাওবাদী’! মাওবাদী কাদের বলে তখন আমি বুঝতামও না। জানি না, আমায় মাওবাদীদের মতো দেখতে কি না। বা কেমন পোশাক পরলে মাওবাদী মনে হয়। আমার, মৌসুমীর (কয়াল) বা বাকিদের অনেকেরই খুব অবাক লাগছিল, দিদি কেন এমন করছেন! আমাদের গ্রামে এসেছেন, গ্রামের একটা মেয়ের সঙ্গে এমন ঘটেছে, আর উনি মেয়েদের কথা শুনবেন না? আমরা ফের কথা বলতে যেতেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমার সব শোনা হয়ে গিয়েছে!’

সেই গলার স্বরটাই যেন আজও শুনতে পাচ্ছি। এত আশ্বাস, প্রতিশ্রুতির পরে শেষে দু’জন ছাড়াই পেয়ে গেল! তদন্ত ঠিক মতো হলে কি এমনটা হতো? এই জন্যই আমরা সিবিআই তদন্ত চেয়েছিলাম। রায় শোনার পরে মৌসুমীও ফোনে এই কথাগুলোই কাঁদতে কাঁদতে বলছিল। মৃত বান্ধবীর ভাই আমার পাশেই ছিল কোর্টে। ও-ও সারা ক্ষণ বলছিল, ‘‘টুম্পাদি এ কেমন বিচার হল!’’

এই দু’-আড়াই বছরে আমার জীবনের উপর দিয়েও অনেক ঝড় বয়ে গিয়েছে। কম তো দেখলাম না। কত ভাবে মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে যাদের ক্ষমতা আছে, ছলে বলে কৌশলে তারা সব প্রতিবাদ চাপা দিয়ে দেয়। তবে সব মানুষ কিন্তু হার মানে না। শাসক দল তো গ্রামে এসে অনেক কিছু বুঝিয়েছিল। গ্রামের ছেলেদের কত ফুটবল খেলানো হল। সবাই নাকি ইস্টবেঙ্গলে খেলবে! কেউ কোত্থাও চান্স পায়নি। অনেক রাজনৈতিক দল আমাদেরও লোভ দেখিয়েছে। আমি সিপিএম বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূল— কিচ্ছু চিনি না। পার্টি পলিটিক্স কাকে বলে কোনও কালে জানতাম না। আমি বা মৌসুমী সব সময়ে শুধু একটা কথাই বলে গিয়েছি, আমরা কোনও রং বা ঝান্ডা ছাড়াই প্রতিবাদ চালিয়ে যাব। আমার মায়ের কাছে আমার বান্ধবী মেয়ের মতোই ছিল। আমার স্বামী, শ্বশুরবাড়িও কষ্টটা বুঝেছে। তাই প্রতিবাদ করে যেতে পারছি।

বিচারের দিনটার জন্য সত্যিই খুব আশা নিয়ে অপেক্ষা করেছিলাম। আমার ছেলেটা সবে দশ মাসের! সারা দিনের জন্য ওকে বাপের বাড়িতে রেখে সকালে বেরিয়েছি। ভিড় ঠেলে কোনও মতে কোর্টে ঢুকে যখন কাকিমাকে দেখলাম (মৃতার মা), তখন চোখ ফেটে জল আসছিল। কী রোগা হয়ে গিয়েছেন!

কষ্ট আর বঞ্চনা ছাড়া কামদুনি এই আড়াই বছরে কিছুই পায়নি। যে রাস্তা থেকে আমার বান্ধবীকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, সেই রাস্তাটার যা হাল! ক’দিন আগে ক’টা আলো বসেছে। তা-ও গ্রামের ভিতরে অন্ধকার। উল্টে সরকারি স্যাংশনের (অনুমোদন) অভাবে গ্রামের একমাত্র ইস্কুলটা উঠে যেতে বসেছে।

আমার বান্ধবী চলে গিয়েছে। রাজ্যে আর কোনও মেয়ের সঙ্গে এমন ঘটবে না, এই ভরসাটুকু আজও পেলাম না। মনে মনে ভাবি, আমার ছেলেটা যেন একদিন মানুষ হয়। ও যেন মেয়েদের সম্মান করতে শেখে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tumpa kayal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE