Advertisement
E-Paper

শিক্ষক নেই, ক্ষমা চাইলেন অভিযুক্ত ছাত্রনেতা

যাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ, তিনি কলেজে গরহাজির। কিন্তু সেই শিক্ষককে মারধরে অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) নেতাকে বুধবার কলেজে ডেকে এনে ক্ষমা চাইয়ে নতুন বিতর্ক উস্কে দিল ঘাটালের রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩২
কলেজ পরিচালন সমিতির বৈঠকে অভিযুক্ত ছাত্রনেতা হেমন্তকুমার দাস (ডান দিকে নীল জামা)। নিজস্ব চিত্র

কলেজ পরিচালন সমিতির বৈঠকে অভিযুক্ত ছাত্রনেতা হেমন্তকুমার দাস (ডান দিকে নীল জামা)। নিজস্ব চিত্র

যাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ, তিনি কলেজে গরহাজির। কিন্তু সেই শিক্ষককে মারধরে অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) নেতাকে বুধবার কলেজে ডেকে এনে ক্ষমা চাইয়ে নতুন বিতর্ক উস্কে দিল ঘাটালের রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতি।

তৃণমূল নেতৃত্বাধীন পরিচালন সমিতির হস্তক্ষেপে এ দিন অভিযুক্ত ছাত্র-নেতা হেমন্তকুমার দাসের ক্ষমা চাওয়ার পিছনে প্রকৃত সদিচ্ছা না ‘অন্য কিছু’ কাজ করেছে সে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। বিতর্কের মাত্রা চড়েছে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হেমন্তের বিরুদ্ধে কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ না করায় এবং কলেজে এলেও পুলিশ তাঁকে না ধরায়। আক্রান্ত শিক্ষক অমিত রায় অবশ্য বলেছেন, “মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত বলে কলেজে যাইনি। কিন্তু পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। সুবিচার না পেলে অন্য কথা ভাবব।”

ফেসবুকে শাসক দলের বিরুদ্ধে মন্তব্য করায় মঙ্গলবার ঘাটালের ওই কলেজের স্টাফরুমে ঢুকে হেমন্তর নেতৃত্বে অর্থনীতির শিক্ষক অমিত রায়কে মারধর করার অভিযোগ ওঠে টিএমসিপি-র কর্মীদের বিরুদ্ধে। শাসক দলের তরফে একাধারে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং রাজনৈতিক সহিষ্ণুতার অভাবের মিশেল খুঁজে পাচ্ছেন রাজ্যবাসীর একাংশ। রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীও এ দিন বলেন, “নিজের সীমায় থেকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সকলের আছে। বেআইনি নয়, এমন কথা যদি কেউ ফেসবুকে বলেন, তা হলে তাঁর উপরে এ ভাবে আক্রমণ ঠিক নয়। এই যে অধৈর্যের প্রকাশ ঘটছে, তা সামাজিক শান্তির জন্য ভাল নয়।”

মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ও সহকর্মীকে মারধরের প্রতিবাদে সকাল থেকে ওই কলেজে ক্লাস বয়কট করেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বেলা ১২টা নাগাদ তাঁদের নিয়ে বৈঠকে বসে পরিচালন সমিতি। কলেজ সূত্রের দাবি, বৈঠকে পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা ঘাটালের তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দোলই এবং টিচার-ইন-চার্জ লক্ষ্মীকান্ত রায়ের সামনে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ঘটনায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ওঠে। শঙ্করবাবুর উদ্যোগে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হেমন্তকে প্রকাশ্যে ও লিখিত ভাবে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

বৈঠকে হাজির থাকা একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা জানিয়েছেন, পরিচালন কমিটির সিদ্ধান্ত হওয়ার মিনিট পাঁচেকের মধ্যে কলেজের স্টাফ-রুমে চলে আসেন হেমন্ত। সেখানে উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং পরিচালন সমিতির সদস্যদের সামনে জোড় হাতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “নিঃশর্তে ক্ষমা চাইছি। মঙ্গলবারের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না।” এর পরে একই বয়ানে টিচার-ইন-চার্জের কাছে চিঠি দিয়েও ক্ষমা চান তিনি। দুপুর আড়াইটের পর থেকে কলেজে ফের ক্লাস নেওয়া শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। হেমন্ত অবশ্য পরে এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি।

কলেজের ভিতরে শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ ওঠার পরেও হেমন্তের বিরুদ্ধে কলেজ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিলেন না কেন? টিচার-ইন-চার্জের দাবি, “বৈঠকে উপস্থিত সব শিক্ষক-শিক্ষিকার সম্মতির ভিত্তিতেই হেমন্তকে ক্ষমা চাইতে বলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।” শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের অবশ্য দাবি, তাঁদের ওই সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য করা হয়েছে।

কলেজ কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ বলতে কি এটুকুই? লক্ষ্মীকান্তবাবু বলেন, “অভিযুক্ত ছাত্রের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে বিষয়ে পরে আলোচনা করা হবে।” পরিচালন সমিতির সভাপতি শঙ্করবাবুর আশ্বাস, “পরিচালন সমিতিও এ বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।” কবে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা ভাঙেননি তাঁরা।

অভিযুক্ত ছাত্রনেতা কলেজে উপস্থিত হলেও তাঁকে গ্রেফতার করা হল না কেন? জবাব এড়িয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “তদন্ত চলছে।”

যদিও তদন্তে কিছু হবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান বিরোধীরা। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের অভিযোগ, “এই সরকারের দু’টো কাজ। হয় টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করো, নয় সমস্যা ধামাচাপা দাও! ঘাটালের শিক্ষকের উপরে আক্রমণ এবং তার পরের ঘটনায় সেই ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাই হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।” বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, “আক্রান্ত শিক্ষকের কাছে ক্ষমা না চেয়ে কী ভাবে ক্ষমা চাওয়ার পাট মিটল? এ জমানায় তো দেখছি, কিছুই অসম্ভব নয়!”

রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, ঘাটাল-কাণ্ডের তদন্ত রাজ্যের শিক্ষা অধিকর্তাকে দিয়ে করানো হচ্ছে। তিনি বলেন, “ওই শিক্ষক শিক্ষা দফতরের কাছে আসেননি। কিন্তু ছাত্রটি যে কাজ করেছে, তা নিন্দনীয়। ওই কলেজে যদি এর পরে কিছু হয়, আইননানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

tmcp student leader assault Ghatal college teacher
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy