Advertisement
১১ মে ২০২৪

এ ভাবে খুন হতে হল কেন, শোকস্তব্ধ পরিবার

পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। সেই ছোট ভাই কলেজে গিয়ে আর ফিরল না। সবংয়ের ডাডড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের দাঁকড়দা-বাটিটাকি গ্রামে কৃষ্ণপ্রসাদ জানার (২০) মৃত্যুর খবর আসার পর কথা বলতে পারছিলেন না পরিবারের কেউ।

ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে ভানুভূষণ জানা। শুক্রবার দাঁকড়দা-বাটিটাকি গ্রামে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে ভানুভূষণ জানা। শুক্রবার দাঁকড়দা-বাটিটাকি গ্রামে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

দেবমাল্য বাগচী
সবং শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৫ ০৩:২৩
Share: Save:

পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। সেই ছোট ভাই কলেজে গিয়ে আর ফিরল না। সবংয়ের ডাডড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের দাঁকড়দা-বাটিটাকি গ্রামে কৃষ্ণপ্রসাদ জানার (২০) মৃত্যুর খবর আসার পর কথা বলতে পারছিলেন না পরিবারের কেউ।

চাঁদকুড়ির পাকা রাস্তা থেকে দু’কিলোমিটার দূরে কাঠা খানেক জমিতে তিন কামরার মাটির বাড়ি। সন্ধের মুখে বাড়ির উঠোন পরিবার, প্রতিবেশীর ভিড়ে ভেঙে পড়ছে। অঝোরে কাঁদছেন নিহত ছাত্রের বাবা ভানুভূষণ জানা ও মা যমুনাদেবী। বছর সত্তরের বৃদ্ধ মাঝে়মধ্যে মূর্ছাও যাচ্ছেন। আপন মনে বিড়বিড় করে যমুনাদেবী বলে চলেছেন, ‘‘ও খুব শান্ত স্বভাবের ছিল। যারা ওকে এ ভাবে খুন করল, তাদের ফাঁসি
হওয়া উচিত।’’

গ্রামবাসী নারায়ণ মাইতিও বললেন, ‘‘ওকে (কৃষ্ণপ্রসাদকে) ছোট থেকেই দেখছি। গ্রামের কারও সঙ্গে কোনও দিন খারাপ ব্যবহার করেনি। ওকে কেন এ ভাবে খুন করা হল, বুঝতে পারছি না।’’

কৃষ্ণপ্রসাদের তিন দাদার মধ্যে বড় দাদা কর্মসূত্রে গুজরাতে থাকেন। সেখানে শ্রমিকের কাজ করেন। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পৌঁছেছে তাঁর কাছে। বাকি দুই দাদা, চন্দন ও হরিপদ জানা নিজেদের বিঘে খানেক জমিতে চাষবাস করে কোনও মতে সংসার চালান। ভাইয়ের দেহ ময়নাতদন্ত করানোর জন্য তাঁরা গিয়েছেন হাসপাতালে। দিদি পদ্মা মাইতি খবর পেয়ে পাশের গ্রামের শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে এসেছেন। কথা বলতে পারছেন না তিনিও।

সংসারের অভাব মেটাতে পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষ্ণপ্রসাদ গ্রামেই একটা স্টুডিও খোলেন। পরিচিতরা জানালেন, সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে ছিল তাঁর। সকাল-বিকেলে সে জন্য দৌড়ঝাঁপ করতেন নিয়মিত।

বড় বৌদি মঞ্জু জানা বলেন, ‘‘কলেজে গেলে এখন তো সবাই রাজনীতি করে। ন্যায়ের জন্য যদি কেউ লড়াই করে, তবে সে অন্যদের বিষ নজরে পড়ে।’’ তাঁর দাবি, কৃষ্ণপ্রসাদ তেমনই ছেলে ছিল। তাই এ ভাবে খুন করা হয়েছে তাকে।

কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষ্ণপ্রসাদ প্রথম বর্ষে দু’বার ফেল করেছিলেন। কিন্তু কলেজ ছেড়ে দেননি। শুক্রবার নিহতের বাড়িতে যান স্থানীয় বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেটির পড়াশোনার ব্যাপারে অদম্য ইচ্ছা ছিল। ওঁর পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE