Advertisement
E-Paper

গুড়ের লাভ খেয়ে নিচ্ছে চিনিই

শীত মানেই বাঙালির পাতে রকমারি পিঠেপুলি, খেজুর গুড় আর পাটালি। কিন্তু এ বার সে গুড়ে বালি। সৌজন্যে, তেমন ভাবে ঠান্ডা না থাকা আর চিনির বাজারদর। কাটোয়ার বিভিন্ন এলাকার গুড় বিক্রেতাদের দাবি, গত বছর কয়েক ধরে বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গুড় ও পাটালির দাম বাড়ানো যায়নি।

অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:০৪
গুড়ে পাক। কাটোয়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

গুড়ে পাক। কাটোয়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

শীত মানেই বাঙালির পাতে রকমারি পিঠেপুলি, খেজুর গুড় আর পাটালি। কিন্তু এ বার সে গুড়ে বালি। সৌজন্যে, তেমন ভাবে ঠান্ডা না থাকা আর চিনির বাজারদর।

কাটোয়ার বিভিন্ন এলাকার গুড় বিক্রেতাদের দাবি, গত বছর কয়েক ধরে বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গুড় ও পাটালির দাম বাড়ানো যায়নি। তাছাড়া আধুনিক পদ্ধতিতে খেজুর গুড় তৈরি করার জন্য কোনও সরকারি সাহায্য বা প্রশিক্ষণও মেলেনি বলে তাঁদের অভিযোগ।

কেমন ভাবে তৈরি হয় খেজুর গুড় ও পাটালি? কাটোয়ার এক গ্রামের খেজুর গুড় বিক্রেতা জানালেন সাধারণত নভেম্বরের গোড়া থেকেই খেজুর গাড় তৈরি শুরু হয়ে যায়। খেজুর রস থেকে গুড় তৈরি করতে দরকার পড়ে চিনির। তা ছাড়া খেজুর গুড় ঘন করা ও পাটালি তৈরির কাজেও দরকার চিনির।

এই মরসুমে খেজুর গুড় তৈরি করতে গিয়ে প্রধানত দু’টি সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে জানান নিতীশ মণ্ডল নামে এক বিক্রেতা। প্রায় ৩০ বছর ধরে খাজুরডিহির বিকিহাট গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে খেজুর গুড় বিক্রি করেন নিতীশবাবু। তিনি জানান, চিনি ছাড়া খেজুর গুড় তৈরি করতে গেলে বেশি পরিমাণ রসের দরকার পড়ে। এ বার ঠান্ডা তেমন ভাবে না পড়ায় চাহিদার তুলনায় অনেক কম খেজুর রস মিলেছে। এ ছাড়া চিনির দর প্রায় ৩২ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম। ঝোলাগুড় ও চিনি মেশানো খেজুর তৈরিতে যথাক্রমে খরচ হয় ৯০ থেকে ১০০ টাকা ও ৮০ থেকে ৯০ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম। পাইকারি বাজারে পাটালি বিকোচ্ছে ১০৫ থেকে ১২০ টাকা কিলো। খেজুর গুড় নির্মাতাদের দাবি, রস জ্বাল দেওয়া, দিনমজুরি, পরিবহণ খরচ— সবকিছু ধরলে কিলোগ্রাম প্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকার বেশি লাভ হচ্ছে না। বছর খানেক আগেও তা পঞ্চাশ টাকার কাছাকাছি থাকত। ঠাকুরদাস মণ্ডল নামে এক খেজুর গুড় নির্মাতার দাবি, বছর খানেক ধরে বিভিন্ন আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে গুড়ের দাম বাড়ানো যায়নি।

খেজুর রস থেকে গুড় তৈরির জন্য আধুনিক কোনও প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা নেই বলে জানান ভগীরথ মণ্ডল, বিশ্বজিৎ বিশ্বাসদের মতো বেশ কয়েকজন বিক্রেতা। তা ছাড়া সরকারি কোনও ঋণের ব্যবস্থা না থাকায় মহাজনদের কাছ থেকেও টাকা ধার করতে হয় বলে জানান কালীপদ বিশ্বাস নামে এক বিক্রেতা। তার জেরেও ভাল লাভ না হলে বিপাকে পড়তে হয় বলে জানান তাঁরা।

অথচ কাটোয়ার দাঁইহাট, বেরা, পাতাইহাটের মতো বিভিন্ন এলাকায় বহু মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। শুধুমাত্র খাজুরডিহি এলাকাতেই ৪০টি পরিবারের প্রায় পাঁচশো জন সদস্য এই গুড় শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। এখানকার গুড় পাড়ি দেয় বর্ধমান, হুগলি ও কলকাতার বিভিন্ন বাজারে। কতদিন আর এই গুড় শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকা যাবে তা নিয়েই সংশয় প্রকাশ করেছেন একাধিক বিক্রাতে। খাজুরডিহি পঞ্চায়েতের প্রধান পুষ্প চৌধুরীর যদিও দাবি, ‘‘ছোট বিক্রেতাদের জন্য ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতর থেকে অনলাইনে বিভিন্ন সামগ্রীর একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি যাতে, খেজুর গুড়-নির্মাতাদের নামও সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।’’

গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন এমন এক ‘গাছি’রও আক্ষেপ, ‘‘ আর কতদিন এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারব যাবে, জানি না!’’ রসে জ্বাল দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে নিতেই একই সংশয় দেখা যায় ‘খিলি’র মুখেও।

state news sugar price sugar price increases
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy