Advertisement
E-Paper

পলাতক সুমঙ্গল-মালিক ধৃত মুম্বইয়ে

সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন ধরা পড়েছিলেন ভূস্বর্গ কাশ্মীরে। আর দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বইয়ে গ্রেফতার হলেন অন্য লগ্নি সংস্থা সুমঙ্গলের পলাতক মালিক সুব্রত অধিকারী। আলুর বন্ডে বিনিয়োগ করিয়ে আমানতকারীদের কোটি কোটি টাকা ফেরত না-দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় পুলিশ তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল। ছ’মাস পালিয়ে বেড়ানোর পরে অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন সুমঙ্গলের কর্ণধার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৪ ০৩:১৩
ব্যাঙ্কশাল আদালতে সুব্রত অধিকারী।  নিজস্ব চিত্র

ব্যাঙ্কশাল আদালতে সুব্রত অধিকারী। নিজস্ব চিত্র

সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন ধরা পড়েছিলেন ভূস্বর্গ কাশ্মীরে। আর দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বইয়ে গ্রেফতার হলেন অন্য লগ্নি সংস্থা সুমঙ্গলের পলাতক মালিক সুব্রত অধিকারী।

আলুর বন্ডে বিনিয়োগ করিয়ে আমানতকারীদের কোটি কোটি টাকা ফেরত না-দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় পুলিশ তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল। ছ’মাস পালিয়ে বেড়ানোর পরে অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন সুমঙ্গলের কর্ণধার। কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) বা বিশেষ তদন্তকারী দল ৩ জুলাই রাতে মুম্বইয়ের গোরেগাঁওয়ের একটি অতিথিশালায় তাঁকে গ্রেফতার করে।

সুমঙ্গল-মালিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, প্রতারণার একাধিক অভিযোগ দায়ের করেছে সিট। সোমবার ধৃতকে কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালতের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে তোলা হয়। ধৃতকে পুলিশি হেফাজতে রেখে আরও তদন্তের প্রয়োজন আছে বলে আবেদন করেন সরকারি আইনজীবী কৃষ্ণচন্দ্র দাস। বিচারক বিশ্বরূপ শেঠ ১৮ জুলাই পর্যন্ত সুব্রতকে পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এর আগে, ৪ জুলাই অভিযুক্তকে আন্ধেরির আদালতে তোলা হয়। সেই আদালত তাঁকে সাত দিনের মধ্যে কলকাতার আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দিয়েছিল।

কত টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সুমঙ্গলের বিরুদ্ধে?

সিটের দাবি, এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে, ওই সংস্থা বাজার থেকে ৮৫ কোটি টাকা তুলেছিল। কিন্তু দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা কয়েক হাজার আমানতকারীর ৫০ কোটিরও বেশি টাকা ফেরত দেয়নি বলে তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ।

প্রতারণা করা হয়েছে কী ভাবে?

সিট জানায়, সুমঙ্গল ২০১০ সালের জুলাই থেকে খবরের কাগজ ও টিভি চ্যানেলে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন দেয়, তাদের সংস্থার মাধ্যমে আলুর বন্ড কিনলে আমানতকারীদের ২০-১০০ শতাংশ লাভ হবে। দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখায় তাদের অ্যাকাউন্ট আছে। সেই অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিতে হবে। টাকা জমা দেওয়ার রসিদ সংস্থার কার্যালয়ে দেখালে আলুর বন্ড (পট্যাটো ফ্লেক্সি বন্ড) মিলবে।

২০১৩ সালে সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারি ফাঁসের পরে আমানতকারীরা সুমঙ্গলের বিভিন্ন কার্যালয়ে গিয়ে তাঁদের বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত চান। সিটের অভিযোগ, টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা করে ওই সংস্থা। বহু আমানতকারী এখনও তাঁদের টাকা ফেরত পাননি।

সিটের তদন্তকারী অফিসার উত্তম মুখোপাধ্যায় ও নির্মল সাহা জানান, কলকাতার চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল ভবনে সংস্থার সদর দফতরে গিয়ে কয়েক হাজার আমানতকারী টাকা ফেরত চান। টাকা না-পেয়ে তাঁরা শেক্সপিয়র সরণি থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। ওই থানায় প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের তিনটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়। একটি মামলাতেই পাঁচ হাজার আমানতকারী অভিযোগ জানিয়েছেন। সিট জানায়, রাজ্যের বিভিন্ন বাসিন্দা ওই সংস্থার লগ্নিকারীরা তাদের কাছে অভিযোগ করেছেন, রাজ্য পুলিশ নালিশ শুনছে না। যদিও সিট জানাচ্ছে, রাজ্যের যে-কোনও থানায় ওই সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ জানানো যাবে।

কে এই সুব্রত অধিকারী?

সিটের এক তদন্তকারী জানান, সুমঙ্গল-প্রধান সুব্রত আদতে হুগলির মগরার বাসিন্দা। গাড়ির ব্যাটারি তৈরি করাই তাঁর মূল ব্যবসা। এ ছাড়াও দু’টি হিমঘর এবং কলকাতায় একটি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ আছে তাঁর। বরাহনগর, ডানলপ, মুর্শিদাবাদ-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ২২টি কার্যালয় খুলেছিল সুমঙ্গল। তদন্তকারীরা জানান, সুব্রত ওই সংস্থার প্রধান। তিনি সুমঙ্গলের ৬০ শতাংশ শেয়ারের মালিক। ৩৫ শতাংশ শেয়ার আছে তাঁর স্ত্রী মধুমিতার নামে। প্রতারণার অভিযোগে তাঁকে আগেই গ্রেফতার করেছে সিট। এ ছাড়া আরও পাঁচ জনকে সুমঙ্গলের এক শতাংশ করে শেয়ারের মালিক করা হয়েছে।

ব্যবসা-পদ্ধতির দিক থেকে সারদা গোষ্ঠী ও সুমঙ্গলের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। সিট জানায়, সারদার মতো নগদে কোনও কারবার করেনি সুমঙ্গল। তাদের যাবতীয় লেনদেন হয়েছে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে। তাই মোট কত কোটি টাকা প্রতারণা হয়েছে, তার হিসেবও দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে পাওয়া যাবে বলে তদন্তকারীদের আশা। সংস্থার সদর দফতরে তল্লাশি চালিয়ে ওই লগ্নি সংস্থার প্রধান কম্পিউটার সার্ভারটিও বাজেয়াপ্ত করা গিয়েছে। মুম্বইয়ে গ্রেফতারের সময় বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সুব্রতের ব্যক্তিগত ল্যাপটপটিও। ওই সার্ভার ও ল্যাপটপে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি মিলবে বলে তদন্তকারীদের অনুমান।

সিট সূত্রের খবর, বাজার থেকে টাকা তোলা বন্ধ করার জন্য ২০১২ সালে সুমঙ্গলকে নোটিস দিয়েছিল সিকিওরিটি এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া বা ‘সেবি’। সেই নোটিসের বিরুদ্ধে সংস্থাটি ২০১৩ সালে মামলা করে সেবি-র ট্রাইব্যুনালে। সুব্রতের আইনজীবী এ দিন আদালতে জানান, ২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ওই সংস্থাকে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু সিটের তদন্তকারীরা জানান, ট্রাইব্যুনাল একই সঙ্গে নির্দেশ দিয়েছিল, ওই সংস্থাকে তিন মাস অন্তর আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে হবে। সেই নির্দেশ মানা হয়নি।

সিট জানায়, লগ্নি সংস্থা ছাড়াও আরও ১৪টি সংস্থা আছে সুব্রতের। অভিযোগ, তিনি আমানতকারীদের টাকা সেই সব সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলেছেন। এবং আমানতকারীদের টাকায় জমি-বাড়ি কেনা হয়েছে। সিট বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে সুব্রত এবং তাঁর স্ত্রীর নামে জমি-বাড়ির মালিকানা সংক্রান্ত ন’টি দলিল পেয়েছে। কলকাতার কর্নফিল্ড রোডেও সুব্রতের বাড়ি আছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। তাঁরা জানান, ওই ন’টি দলিলে উল্লিখিত সম্পত্তির মূল্য প্রায় ২২ কোটি টাকা।

mumbai subrata adhikary money laundering sumangal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy