Advertisement
০৬ মে ২০২৪

আদালতের দরজায় কৃত্তিবাসী কবির লড়াই

কবির লড়াই কোর্টের পথে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতে গড়া ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার নাম ব্যবহার করে আর একটি পত্রিকা প্রকাশের বিরুদ্ধে আইনি চিঠি দিল কবির পরিবার।

‘নতুন কৃত্তিবাস’ প্রকাশ করছেন ব্রাত্য বসু। শুক্রবার প্রেস ক্লাবে।  — নিজস্ব চিত্র

‘নতুন কৃত্তিবাস’ প্রকাশ করছেন ব্রাত্য বসু। শুক্রবার প্রেস ক্লাবে। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৩
Share: Save:

কবির লড়াই কোর্টের পথে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতে গড়া ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার নাম ব্যবহার করে আর একটি পত্রিকা প্রকাশের বিরুদ্ধে আইনি চিঠি দিল কবির পরিবার।

কাগজে-কলমে নতুন পত্রিকাটির নাম ‘নতুন কৃত্তিবাস’, শুক্রবার বিকেলে যেটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ঘটেছে। আর ঠিক এ দিনই সাবেক ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার সম্পাদকের তরফে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগে উকিলের চিঠি ধরানো হয়েছে ‘নতুন কৃত্তিবাস’-এর কর্তাব্যক্তিদের হাতে।

সুনীলের প্রয়াণের পরে ‘কৃত্তিবাস’-এর সম্পাদকের ভূমিকায় রয়েছেন কবিজায়া স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়। এ ছাড়া, সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করছিলেন় কবি শ্রীজাত ও অংশুমান কর। গত সেপ্টেম্বরের সংখ্যাটি প্রকাশের পরে সাময়িক ভাবে পত্রিকা ছাপানো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সংগঠকেরা। তার দু’মাস পার হতে না-হতেই ‘নতুন কৃত্তিবাস’-এর আত্মপ্রকাশ ঘটছে। প্রচার-পর্ব থেকে শুরু করে নতুন পত্রিকার প্রচ্ছদে ‘কৃত্তিবাস’
শব্দটিই স্পষ্ট। ‘নতুন’ শব্দটি খুঁজে পাওয়া দায়। যে-দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাবেক ‘কৃত্তিবাস’-এর সংগঠকেরা ‘প্রতারণা’র অভিযোগ তুলেছেন। নতুন পত্রিকাটির কর্ণধার, কলেজ স্ট্রিটের পরিচিত প্রকাশক বীজেশ সাহাকে দেওয়া আইনি চিঠিতে কপিরাইট লঙ্ঘনের কথা বলা হয়েছে। আর কৃত্তিবাস-সম্পাদক স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘আমার ছেলে সৌভিক এবং আরও কয়েকজন আইনি পরামর্শ নিয়ে লড়াইয়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন। যা হয়েছে, তাতে আমার খুব মন খারাপ! অবাকও লাগছে।’’

নতুন পত্রিকাটির পৃষ্ঠপোষক-সংগঠকেরা অবশ্য বলছেন, ঐতিহ্য কারও একার নয়। কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ মানতে চাননি বীজেশবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁদের আইনি চিঠি পেয়েছি। আমরা পাল্টা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।’’ সুনীল-সম্পাদিত
কৃত্তিবাস-এর যে নাম এক কালে নথিভুক্তি করা হয়েছিল, তার পুনর্নবীকরণ হয়নি বলেও তিনি দাবি করেছেন। সুনীল-পুত্র সৌভিক আইনি লড়াইয়ের খুঁটিনাটি ভাঙতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘‘কৃত্তিবাসের নাম
ব্যবহার করে যা হয়েছে, তা বেআইনি ও অনৈতিক।’’

কৃত্তিবাস সম্পাদক স্বাতীদেবী বা অন্যতম সহযোগী সম্পাদক শ্রীজাতও সেটাই বলছেন। স্বাতীর কথায়, ‘‘কৃত্তিবাসের ৬০ বছরের ইতিহাসে পত্রিকা ৭-৮ বার বন্ধ হয়েছে। কখনও সুনীলরা টাকা জোগাড় করতে পারেনি। কখনও সময় দিতে পারেনি। কিন্তু পত্রিকা সাময়িক ভাবে বন্ধ শুনেই আর কেউ পত্রিকা বার করে দিলেন, এমন কখনও হয়নি।’’ কৃত্তিবাসের সংগঠকদের বক্তব্য, স্বাতীদেবীর অসুস্থতা ও সম্পাদকদের নানাবিধ ব্যস্ততার জন্যই ঠিক হয় কিছু দিন বন্ধ
রেখে ‘কৃত্তিবাস’ আরও গুছিয়ে শুরু করা হবে। মুদ্রিত সংখ্যা না-বেরোলেও ওয়েবসাইট ‘আপডে়ট’করা হচ্ছিল। শ্রীজাতর কথায়, ‘‘কৃত্তিবাসের নামে নতুন পত্রিকার প্রকাশের মধ্যে
কারও কারও ব্যক্তিগত ক্ষোভও কাজ করছে। এটা কিন্তু সুনীলদার সঙ্গেও প্রতারণা হল।’’

নতুন পত্রিকার প্রকাশ-অনুষ্ঠানে কিন্তু সুনীল-ঘনিষ্ঠ অনেকেই ছিলেন। তাঁরা কেউ কেউ পত্রিকাটির সম্পাদকমণ্ডলীতেও রয়েছেন। এই পত্রিকা আসলে কৃত্তিবাস-এর ‘ঐতিহ্যের স্মারক’ বা ‘বৃহত্তর কৃত্তিবাস পরিবারের বিস্তার’ বলেও কেউ কেউ দাবি করেছেন। সুনীল-নামক কিংবদন্তির ছায়ায় পত্রিকা প্রকাশে ‘অনৈতিকতা’ দেখছেন না কবি সুবোধ সরকার। সেই ‘শনিবারের চিঠি’, ‘কল্লোল’ পত্রিকার যুগ থেকেই নতুন পত্রিকা প্রকাশ নিয়ে কবি-লেখকদের রেষারেষি চলছে বলে মনে করিয়ে দেন নাট্যব্যক্তিত্ব ব্রাত্য বসু। লেখক ও মানুষ সুনীলের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘‘আমি কিন্তু পুরনো ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার অনুষ্ঠানেও অবশ্যই হাজির থাকব।’’ মন্ত্রী ব্রাত্য এবং শাসক দলের
ঘনিষ্ঠ কবি সুবোধের হাতেই মোড়ক খোলা হয় নতুন পত্রিকার। তাতে আবার নতুন জল্পনা, সুনীলের ‘কৃত্তিবাস’ কি এ বার শাসক দলের হাতে চলে গেল? ব্রাত্য অবশ্য এ সব চর্চা হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, ‘‘বিশ্বাস করুন, কবিতার পত্রিকা প্রকাশ নিয়ে শাসক দলের কিছু যায় আসে না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE