শেষ বার শুনানি হয়েছিল এগারো মাস আগে। তখন মামলা চলছিল যে বিচারপতির এজলাসে, তিনি এখন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। আজ, মঙ্গলবার সেখানেই ফের সিঙ্গুর মামলার শুনানি। সর্বোচ্চ আদালত সূত্রের খবর, এ দিনই চূড়ান্ত শুনানির পরে রায় ঘোষণা করতে পারে প্রধান বিচারপতি এইচ এল দাত্তুর বেঞ্চ। রাজ্যের সিঙ্গুর আইন সংবিধান বিরোধী কি না, সিঙ্গুরের জমি কার হাতে যাবে সব প্রশ্নের নিষ্পত্তি হয়ে যেতে পারে তখনই।
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের প্রথম সিদ্ধান্তই ছিল সিঙ্গুর আইন প্রণয়ন। নতুন আইনের মাধ্যমে সিঙ্গুরে টাটার হাতে থাকা জমি আবার খাস করে নিজেদের হাতে ফিরিয়ে নিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই আইন সংবিধান বিরোধী বলে অভিযোগ তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় টাটা মোটরস। সিঙ্গল বেঞ্চ কিন্তু তাদের বিরুদ্ধেই রায় দিয়েছিল। তখন সেই রায়কে ডিভিশন বেঞ্চে চ্যালেঞ্জ করে তারা। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ টাটাদের অনুকূলে রায় দেয়। তারা রাজ্য সরকারের তৈরি আইনকে অবৈধ বলে ঘোষণা করে। সেই রায়ের বিরুদ্ধে আবার সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। সেই মামলার সঙ্গে পরে সিঙ্গুর সংক্রান্ত আরও কয়েকটি মামলাও যুক্ত হয়েছে। সব ক’টি মামলা একত্রিত করে বিচারপতি দাত্তুর এজলাসে শুনানি শুরু হয়।
গত ১২ নভেম্বর এই মামলার শেষ শুনানি হয়েছিল। সে সময় রাজ্য সরকার ও টাটা মোটরস, দু’পক্ষই আদালতের কাছে সিঙ্গুরের জমি তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিল। রাজ্য সরকারের বক্তব্য ছিল, টাটা মোটরস সিঙ্গুরের জমিতে কিছু না করে তা ফেলে রেখে গুজরাতের সানন্দে চলে গিয়েছে। তাই সেই জমি রাজ্যকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। সেই প্রসঙ্গেই বিচারপতি দাত্তু টাটাদের প্রশ্ন করেন, তারা তো সানন্দে কারখানাটি নিয়ে চলে গিয়েছে, তা হলে সিঙ্গুরের জমি ফেরত চাইছে কেন? জবাবে টাটা মোটরসের তরফে বলা হয়, তারা সানন্দে কারখানা নিয়ে গেলেও সিঙ্গুরের জমিতে অনুসারী শিল্পের পরিকাঠামো গড়ে তুলেছে। শিল্পের উপযুক্ত পরিবেশ পেলে তারা আবার সিঙ্গুরে ফিরে আসতে ইচ্ছুক। তাই জমি তাদের হস্তান্তর করা হোক।
মঙ্গলবার এই মামলার চূড়ান্ত শুনানিতে রাজ্য সরকার এবং টাটার বক্তব্য কী হয়, তার পরে প্রধান বিচারপতি কী মন্তব্য করেন বা রায় দেন, তাই নিয়ে এখন চূড়ান্ত আগ্রহ রাজ্য রাজনীতিতে। সকলেরই প্রশ্ন, সারদা-বর্ধমান কাণ্ডে বিধ্বস্ত শাসক দল কি এই রায়ের মধ্যে কোনও খড়কুটো খুঁজে পাবে?