সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআই এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দ্বৈরথ গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। সেই মামলায় এই দুই পক্ষকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাল শীর্ষ আদালত।
শীর্ষ আদালতে বিষয়টি গড়িয়েছে গত বছর কলকাতা পুলিশের কমিশনার রাজীব কুমারকে সারদা মামলায় সমন পাঠিয়ে ডেকে পাঠানোর পরে। সোমবার সেই মামলার রায় শোনাতে গিয়ে শীর্ষ আদালতের বিচারপতি অরুণ মিশ্র ধমকের সুরে দু’পক্ষকেই মনে করিয়ে দেন, সিবিআই এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরস্পরকে সাহায্য করা উচিত। তার বদলে তারা পরস্পরের নামে নালিশ করছে! এই বিবাদে অভিযুক্তেরাই লাভবান হচ্ছেন।
সিবিআই যদি এ বার থেকে রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার কোনও অভিযোগ করে, কলকাতা হাইকোর্টেই সেটা করতে হবে বলে এ দিন জানিয়ে দেন বিচারপতি। তিনি সিবিআই-কে বলেন, ‘‘আপনারা অভিযোগ নিয়ে হাইকোর্টে যাবেন। যাঁদের ‘প্রটেক্ট’ করার দরকার, তাঁদের জন্য ওরাও (রাজ্য পুলিশ) পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে হাইকোর্টে যাবে।’’
সিবিআই সূত্রের খবর, সারদা মামলায় রাজীব কুমারকে প্রথম সমন পাঠানো হয় গত বছরের ১৬ অগস্ট। রাজীব জানান, ছট ও দুর্গাপুজোয় ব্যস্ত থাকায় হাজিরা দিতে পারবেন না। পুজোর পরে ২৩ নভেম্বর আবার নোটিস পাঠানো হয়। সে-দিনও তিনি হাজির হননি। ওই ২৩ নভেম্বরেই সিবিআইয়ের ডিএসপি ব্রতীন ঘোষালকে ডেকে পাঠায় বালিগঞ্জ থানার পুলিশ। ৩ অগস্ট ওই থানা এলাকার রোজ ভ্যালির ক্রোম হোটেলে ভাঙচুরের একটি ঘটনা ঘটে। সেই মামলাতেই ডাকা হয় ব্রতীনকে। অভিযোগ, তাঁকে জেরা করে সন্তুষ্ট হতে না-পেরে ২৪ নভেম্বর বালিগঞ্জ থানার সাব-ইনস্পেক্টর পদের এক অফিসার সরাসরি সিবিআইয়ের যুগ্ম ডিরেক্টর কৃষ্ণ এবং স্পেশ্যাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানাকে ই-মেল করে ২০টি প্রশ্ন পাঠিয়ে তার জবাব চান।
তার পরেই সিবিআই ডিসেম্বরের গোড়ায় সুপ্রিম কোর্টে যায়। অভিযোগ করে, রাজীব কুমারকে ডেকে পাঠানোর ‘বদলা’ হিসেবে কলকাতা পুলিশ তাদের অফিসারদের ডেকে পাঠিয়ে জেরা করছে। বিচারপতি অরুণ মিশ্র এ দিন রাজ্য পুলিশকে বলেন, ‘‘আপনারা কোনও ভাবেই সিবিআই অফিসারকে ডেকে পাঠাতে পারেন না। যা হচ্ছে, মোটেই ভাল হচ্ছে না। আমরা আদৌ খুশি নই।’’
এর পরে সিবিআই-কেও তুলোধোনা করে বিচারপতি বলেন, ‘‘এই মামলায় (সারদা) কিছুই হচ্ছে না। অভিযুক্তেরা একে একে জামিন পেয়ে যাচ্ছেন।’’ ২০১৪-র মে মাসে লগ্নি সংস্থা সারদা ও রোজ ভ্যালির আর্থিক নয়ছয় নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি মিশ্র এ দিন বলেন, ‘‘এত বছর কেটে গেল। এত দিনে বিচার শুরু হয়ে যাওয়া উচিত ছিল।’’
সিবিআইয়ের আইনজীবী কে রাঘবচারিলুর অভিযোগ, সারদ্রা কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে গ্রেফতারের সময় পাঁচটি মোবাইল, একটি ল্যাপটপ এবং বেশ কিছু নথি আটক করা হয়েছিল। রাজ্য পুলিশ এখনও সেগুলো সিবিআই-কে দেয়নি। তদন্তের ভারপ্রাপ্ত এসআইটি-র প্রধান রাজীব কুমারের বয়ান রেকর্ড করার জন্য তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তিনি আসেননি। উল্টে সিবিআইয়ের অফিসারকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে কলকাতা পুলিশ।
সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ, রাজ্য পুলিশ কোনও ভাবেই সিবিআইয়ের কাজে হস্তক্ষেপ করবে না। তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে। সিবিআই-কর্তাদের ব্যাখ্যা, এর পরে রাজীব কুমারকে ফের সমন পাঠানো সহজ হবে। কিন্তু রাজীব কুমার না-গেলে বা রাজ্য পুলিশ অসহযোগিতা চালিয়ে গেলে? সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, সে-ক্ষেত্রে সিবিআই-কে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হবে।
আদালতের তোপের মুখে রাজ্য সরকারের আইনজীবী কপিল সিব্বল এ দিন মেনে নিয়েছেন, তদন্তকারী সংস্থাগুলির বিবাদ ঠিক নয়। সহযোগিতাই কাম্য। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হয়ে তাঁর সাফাই, কলকাতা পুলিশ নিজের থেকে সিবিআই অফিসারকে ডেকে পাঠায়নি। নিম্ন আদালতের নির্দেশেই ডাকা হয়েছিল। রাজ্যের হয়ে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই স্পষ্ট বলা রয়েছে, তদন্তে কেউ খুশি না-হলে তিনি আদালতে যেতেই পারেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy