বিক্ষোভ মঞ্চে সূর্যকান্ত মিশ্র ও বিমান বসু। বৃহস্পতিবার সিইএসসি ভবনের সামনে। —নিজস্ব চিত্র।
একেবারে পরিকল্পনামাফিক সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে বামেরা। সেই সঙ্গেই তারা এগিয়ে যাচ্ছে এক আন্দোলন থেকে পরের আন্দোলনে।
আলোচনা এবং সৌজন্যের পথে কাজ আদায় না হলে সরকারের ভাষাতেই তাদের জবাব দেওয়া হবে বলে এ বার বুঝিয়ে দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের হুঁশিয়ারি, এখন থেকেই সতর্ক না হলে মানুষের ক্ষোভের আগুনে পুড়তে হবে সরকারকে। বিদ্যুৎ মাসুল বৃদ্ধির প্রতিবাদে যে অবস্থান থেকে বাম নেতৃত্বের এই ঘোষণা, সেই জমায়েতে উৎসাহিত হয়েই আগামী অক্টোবরের গোড়ায় লালবাজার অভিযানের ডাকও দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুতের মাসুল বৃদ্ধির প্রতিবাদে সল্টলেকের বিদ্যুৎ ভবন এহং কলকাতায় সিইএসসি-র সদর দফতর ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে একই সঙ্গে দু’দিন অবস্থান চালিয়েছে বামেরা। অবস্থানের শেষ দিনে দুই ধর্না-মঞ্চেই উপস্থিত হয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু ও বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। বিদ্যুতের বর্ধিত মাসুল নিয়ে কথা বলার জন্য বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তের সঙ্গে দেখা করার সময় চেয়ে দু’বার চিঠি দিয়েছিল কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট। কিন্তু দু’বারই মন্ত্রীর একান্ত সচিব জানিয়ে দিয়েছেন, এখন সময় দেওয়া যাবে না। ওই ঘটনার উল্লেখ করেই সূর্যবাবু বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মহোদয়া, আমরা আলোচনা চাইছি। আপনার মন্ত্রীদের সময় হচ্ছে না। এক দিন হয়তো আপনি কথা বলতে চাইবেন। কিন্তু সে দিন আমাদের সময় থাকবে না!’’ ভিক্টোরিয়া হাউসের পার্শ্বস্থ জমায়েত বিপুল হাততালি দিয়ে বুঝিয়ে দেয়, নেতৃত্বের কাছ থেকে তারা এই লড়াকু মনোভাবই চাইছে। এই সূত্রেই সূর্যবাবু আরও বলেন, ‘‘আমরা যে আলোচনার কথা বলছি, সেই ভাষা সরকার বোঝে না। বিধানসভায় অনেক বার দেখেছি, আলোচনা, সৌজন্য এ সবে সরকারের কানে কথা যায় না। তাই এখন আমাদের সেই ভাষাই আয়ত্ত করতে হচ্ছে, যেটা সরকার বোঝে!’’ ফের বিপুল করতালি! বিদ্যুৎ ভবনের সামনের জমায়েতেও এ দিন একই কথা বলেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক।
বাম জমানায় কম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের জন্য ভর্তুকি দেওয়ার যে নীতি চালু ছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানায় সে সব উঠে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেন সেলিম। তাঁর দাবি, সিইএসসি ১৯৮৭ সালে গার্ডেনরিচে একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র চালু করতে চাইছিল, তৎকালীন কংগ্রেস সাংসদ মমতা তাতে বাধা দিয়েছিলেন। বামেরা তখন ওই কেন্দ্র গড়ার পক্ষে পথে নেমেছিল। এই ইতিহাস এ দিন সিইএসসি কর্তৃপক্ষকে স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন সেলিম। অবস্থানের শেষ পর্বে কিছু প্রতীকী কুশপুতুল দাহ করা হয়। সেই দিকে ইঙ্গিত করেই সেলিমের মন্তব্য, ‘‘আমরা আগুন নিয়ে খেলতে চাই না। কিন্তু মানুষের মনে আগুন জ্বলছে। সরকার কথা না শুনলে সেই ক্ষোভের আগুনেই পুড়ে যেতে হবে!’’
বামেদের এখন লক্ষ্য, বিধানসভা ভোটের আগে নিয়মিত কর্মসূচি নিয়ে সংগঠনকে রাস্তায় রাখা। সেই কারণেই সল্টলেকে এ দিন বিমানবাবু ফের বলেছেন, ‘‘রাস্তা ছাড়া গতি নেই। বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’’ ধর্মতলায় কলকাতা জেলা সিপিএমের নেতা মানব মুখোপাধ্যায় বলেছেন, আগামী ১ অক্টোবর তাঁরা লালবাজার অভিযান করতে চান।
আর সূর্যবাবু বুঝিয়েছেন, বিদ্যুৎ-সহ নানা প্রশ্নেই সরকারকে কথা শুনতে বাধ্য করা শুধু বামফ্রন্টের একার কাজ নয়। বামফ্রন্টের বাইরে যে সব গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ আছেন, তাঁদেরও আন্দোলনে পাশে নিতে হবে। এই সূত্রেই বিদ্যুৎ মাসুল বৃদ্ধির প্রতিবাদে অনশনকারী প্রাক্তন সিপিএম নেতা প্রসেনজিৎ বসুদের প্রতিও সহমর্মিতার বার্তা দিয়েছেন সূর্যবাবু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এই ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনেই যাঁরা অনশনে বসেছিলেন, তাঁদের জেলে পাঠিয়েছিল পুলিশ। আমাদের বিরুদ্ধে তাঁদের সমালোচনা থাকতে পারে। কিন্তু তাঁরা কী অপরাধ করেছিলেন? এ সব মেনে নিতে পারি না! এর প্রতিবাদ করবই।’’ ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে শুধু তৃণমূলের সমাবেশ হবে— এই অলিখিত ফরমান উড়িয়ে যে সেখানে দু’দিন অবস্থান করা গিয়েছে, তাকে ‘নৈতিক জয়’ হিসাবেই এ দিন বর্ণনা করতে চেয়েছেন জয়ন্ত রায়, প্রবোধ পণ্ডা, মনোজ ভট্টাচার্য, প্রবোধ সিংহের মতো শরিক নেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy