Advertisement
E-Paper

২৫ মিনিটের বক্তৃতার প্রায় পুরোটাই ‘হিন্দু রাজনীতি’! বাকি সময় শুভেন্দু নিলেন মমতা-প্রশাসনকে বিঁধতে

শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে বিধানসভায় স্বাধিকারভঙ্গের নোটিস দিয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। বিধানসভার অধিবেশনের শুরুতেই সেই নোটিস পাঠ করেন রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:০০
মঙ্গলবার বিধানসভার বাইরে গেরুয়া পাগড়ি মাথায় শুভেন্দু অধিকারী।

মঙ্গলবার বিধানসভার বাইরে গেরুয়া পাগড়ি মাথায় শুভেন্দু অধিকারী। — নিজস্ব চিত্র।

বিধানসভার ভিতরে বক্তৃতা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাইরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ভিতর-বাইরে পরস্পরের বিরুদ্ধে তোপ দাগা হবে, এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু বিরোধী দলনেতার বক্তৃতার প্রায় পুরোটা জুড়েই রইল ‘হিন্দু রাজনীতি’। বাকি সময়টুকুতে মমতার প্রশাসনকে আক্রমণ।

মঙ্গলবার বিধানসভার দক্ষিণ গেটের কাছে ১৮ মিনিটের সামান্য বেশি সময় নিয়ে ভাষণ দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। বক্তৃতায় তিনি বার বার দাবি করেন, হিন্দুদের হয়ে কথা বলার জন্য তাঁকে বিধানসভার অধিবেশন থেকে সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করা হয়েছে। তবে বিজেপি বিধায়কেরা ওই ‘সাসপেনশন’ নিয়ে ‘গর্বিত’। কারণ, তাঁরা ‘সনাতনী হিন্দু’।

প্রসঙ্গত, সোমবার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অধিবেশন থেকে শুভেন্দুকে সাসপেন্ড করার পর মঙ্গলবার তাঁর বিরুদ্ধে বিধানসভায় স্বাধিকারভঙ্গের নোটিস দিয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। অধিবেশনের শুরুতেই সেই নোটিস পাঠ করেন পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। শাসকদলের তরফে জানানো হয়, ‘ধর্ম’ নিয়ে মন্তব্যের জন্যই শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ওই পদক্ষেপ। স্পিকার আশঙ্কা প্রকাশ করেন, শুভেন্দুর কথায় মানুষ প্ররোচিত হলে বাংলা ‘অশান্ত’ হতে পারে। শোভনদেব বলেন, ‘‘ন্যক্কারজনক ব্যবহার করেছে। জাতির লজ্জা। গণতন্ত্রের লজ্জা। তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি। আশা করি, সারা দেশের ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ ধিক্কার জানাবেন।’’ প্রস্তাবে সমর্থন জানান তৃণমূল বিধায়ক অরূপ বিশ্বাস এবং দেবাশিস কুমার।

বিধানসভার বাইরে নিজের ভাষণে শুভেন্দু প্রত্যাশিত ভাবেই পাল্টা রাজ্য সরকারকে লক্ষ্য করেই তোপ দাগেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতার প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তোলেন তিনি।

শুভেন্দু বার বার দাবি করেন, হিন্দুদের হয়ে কথা বলেছেন বলেই তাঁকে এবং দলের অন্য তিন বিধায়ককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। দু’কোটিরও বেশি ‘হিন্দু ভোট’-এ জয়ী হয়েছেন তাঁরা। তাই তাঁরা হিন্দুদের হয়েই কথা বলবেন। শুভেন্দুর ভাষণের সুর ধরা পড়েছে বিজেপি বিধায়কদের পোশাকেও। মাথায় গেরুয়া পাগড়ি, ঊর্ধ্বাঙ্গে সাদা টিশার্ট, তাতে লেখা, ‘গর্ব করে বলো, আমি হিন্দু’। কখনও তাঁরা স্লোগান দিয়েছেন ‘ভারত মাতা কি জয়’, কখনও মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফার দাবি তুলেছেন।

আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের কথা মনে করিয়ে শুভেন্দু দাবি করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী পদে মমতার মেয়াদ আর মাত্র কয়েক মাস। গত চার বছরে তিনি কাউকে চাকরি দিতে পারেননি। আগামী কয়েক মাসেও দিতে পারবেন না। রাজ্যে দু’কোটির বেশি বেকার। রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ (মহার্ঘ ভাতা)-র সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারীদের ডিএ-র ফারাক তুলে ধরে শুভেন্দু বলেন, মমতার সরকার ‘কর্মচারী বিরোধী’।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা পরিকাঠামো তৈরির জন্য রেল বা বিএসএফ জমি চাইলেও দেন না বলে শুভেন্দুর অভিযোগ। তাঁর কথায়, ‘‘২০২৩ সালে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব রাজ্য সরকারকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, এখানে ৬১টি রেল প্রকল্প করতে চায় কেন্দ্র। কিন্তু তিনি (মুখ্যমন্ত্রী) জমি দেননি। কলকাতা, বাগডোগরা বিমানবন্দরের সম্প্রসারণের জন্যও তিনি জমি দেবেন না! রাজ্যকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?’’ সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় বিএসএফ ১৭টি ‘চৌকি’ তৈরি করতে চাইলেও রাজ্য সরকার তাদের জমি দেয়নি বলে শুভেন্দুর অভিযোগ। বিরোধী দলনেতার কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এ রাজ্যে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান। তিনি বিধানসভাকেও নিজের সম্পত্তি বলে ভাবেন!’’ শুভেন্দুর কটাক্ষ, মুখ্যমন্ত্রী সংবিধান মানেন না। এমনকি ‘হাউস বিলংস টু অপোজিশন’ নীতিটিও মানেন না।

ভাষণে নাম না করে স্পিকারকেও আক্রমণ করেছেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে এক জন মেরুদণ্ড খুলে রেখে আসেন। তাঁর একটা চোখ খোলা। একটা বন্ধ। তিনি বহিষ্কার করেছেন। আমরা গর্বিত। হতাশ নই। কারণ আমরা সনাতনী। আমরা হিন্দু। হিন্দুস্তানের মানুষ।’’ স্পিকার বিমান পাল্টা বলেন, ‘‘বিরোধী দলনেতা কী ভাষায় কথা বলছেন? তাঁর কথায় যে বাংলা এখনও অশান্ত হয়নি, এটা ভাল। ওই ভাষায় প্ররোচিত হলে বড় ধরনের অশান্তি হতে পারে।’’

Mamata Banerjee suspension
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy