Advertisement
E-Paper

সুগতর পর স্বাগত, আনুগত্যের ধারা বহাল

দু’মাস আগে চেয়ারে বসেই তিনি নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন ‘সরকারের পছন্দের লোক’ হিসেবে। সদ্য সদ্য শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর ঢালাও প্রশংসা করে নিজের অবস্থানের প্রমাণও দিয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সুগত মারজিত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৪

দু’মাস আগে চেয়ারে বসেই তিনি নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন ‘সরকারের পছন্দের লোক’ হিসেবে। সদ্য সদ্য শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর ঢালাও প্রশংসা করে নিজের অবস্থানের প্রমাণও দিয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সুগত মারজিত। আর সোমবার প্রতিষ্ঠানের নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) বুঝিয়ে দিলেন, ‘আনুগত্যের’ এই পথ ধরে চলবেন তিনিও।

ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় অন্য চাকরিতে চলে যাওয়ায় গত এক মাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা)-র পদটি শূন্য ছিল। এ দিন তার অস্থায়ী দায়িত্ব নিয়েছেন বাণিজ্য বিভাগের ডিন স্বাগত সেন। এবং সুগতবাবুর মতো তিনিও চেয়ারে বসেই কার্যত সরকারের প্রতি আনুগত্যের শপথ আউড়েছেন। যার প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারের প্রশ্নে দানা বাঁধা সাম্প্রতিক বিতর্ক জোরদার হয়েছে। কী রকম?

স্বাগতবাবু এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় যে হেতু রাজ্যের, তাই রাজ্য সরকারের ‘প্রগতিশীল’ নীতি বাস্তবায়িত করতে তাঁরা বদ্ধপরিকর। ‘‘আমরা সকলেই সরকারকে সমর্থন করি। আমাদেরই দেখতে হবে, সরকার যাতে সফল হয়।’’— মন্তব্য সহ-উপাচার্যের। ওঁর পদের সঙ্গে এ হেন উক্তি কি মানানসই?

স্বাভাবিক ভাবেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্নটি প্রকট হয়েছে। যা শুনে স্বাগতবাবু ছুড়ে দিয়েছেন পাল্টা প্রশ্ন— ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের লোক কে নয়?’’ প্রসঙ্গত, স্বাগতবাবু শাসকদলের অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপা-র সক্রিয় সদস্য। তিনি এ-ও জানিয়ে রেখেছেন, ওয়েবকুপা-র সদস্যপদ ছাড়বেন না।

তবে সহ-উপাচার্যের মতো পদে আসীন হয়ে স্বাগতবাবু যে ভাবে নিজের গায়ে সরাসরি ‘সরকারের লোকের’ তকমা লাগিয়েছেন, তাতে ওঁর সহকর্মীদের অনেকে বিস্ময় লুকাতে পারেননি। আবার অনেকে বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এমনটাই স্বাভাবিক। বস্তুত গত শুক্রবার নজরুল মঞ্চে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীর গুণগানের প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন প্রেসিডেন্সির উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া ও কলকাতার সুগত মারজিত। রাজ্যের শিক্ষা জগতের সঙ্গে যুক্ত কারও কারও মতে, সরকার-ভজনার সেই ধারায় কলকাতার সহ-উপাচার্যের মন্তব্য নবতম সংযোজন।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অবশ্য এমনটা মানেন না। তিনি এ-ও মনে করেন না যে সহ-উপাচার্যের উক্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার বিকিয়ে দেওয়ার কোনও ইঙ্গিত রয়েছে। সুগতবাবুর কথায়, ‘‘প্রত্যেকের ব্যক্তিগত মতামত থাকতেই পারে। তবে স্বাগত আমার দক্ষ সহযোগী।’’

কিন্তু সহ-উপাচার্য কোনও শিক্ষক সংগঠনের সদস্য থাকতে পারেন কি?

স্বাগতবাবুর দাবি, তাঁর দায়িত্ব পালনের সঙ্গে দলীয় আনুগত্যের সম্পর্ক নেই। ‘‘প্রত্যেকের নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকে। আমারও আছে। সেটা আমার কাজের ক্ষেত্রে প্রভাব কেন ফেলবে?’’— প্রশ্ন তাঁর। নতুন সহ উপাচার্যের প্রত্যয়ী ঘোষণা, ‘‘প্রতিষ্ঠানের পদাধিকারী হিসেবে সকলে আমার কাছে সমান। ওয়েবকুপা-র সদস্যপদ ও প্রশাসনিক পদ, দু’টো আমার কাছে সম্পূর্ণ আলাদা।’’ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার প্রসঙ্গে ওঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘স্বাধিকার নির্ভর করে ব্যক্তি ও তার পারিপার্শ্বিকতার উপরে। বিশ্ববিদ্যালয় একটা নিয়মে চলে। যার মধ্যে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার যেমন রয়েছে, তেমন রয়েছে পড়ুয়ারা। রয়েছে ইউজিসি।’’ স্বাগতবাবুর সাফ দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা আগেও ছিল না, এখনও নেই।

সহ-উপাচার্যের কথায় অশনি সঙ্কেত দেখতে পাচ্ছেন শিক্ষাবিদদের একাংশ। ‘‘সহ-উপাচার্য কি সরকারের মুখপাত্র?’’— জানতে চাইছেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অচিন্ত্য বিশ্বাস। প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শিক্ষা ক্ষেত্রের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটানো। সরকারের স্তাবকতা করা নয়।’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অশোকনাথ বসুর মতে, ‘‘প্রশাসনিক পদে থেকে দলীয় দায়িত্বে না-থাকাই বাঞ্ছনীয়।’’ বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আনন্দদেব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সহ-উপাচার্যের পদে থেকে দলের রাজনীতি মেনে চললে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা কম।’’

CU Swagata Sen Vice Chancellor sugata Marjit
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy