আকুলী বাড়ির দোতলার জানালা দিয়ে অপলকে চেয়ে থাকেন অর্ঘ্য। পাইকপাড়া মোড় থেকে টালা ব্রিজের ডান পাশ দিয়ে একটু এগোলেই আকুলী বাডি়। দোতলার জানলা দিয়ে তাকালে একেবারে পাশে টালা ব্রিজ। নজর একটু উপরে তুললে বিখ্যাত টালার ট্যাঙ্ক। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র অর্ঘ্য তাকিয়ে থাকেন। দেখতে পান, স্কুলের পোশাক পরে টালা ব্রিজের উপর দাদু দ্বারিকানাথের হাত ধরে বাসের জন্য অপেক্ষমান সাত বছরের অর্ঘ্যকে।
আকুলীদের ষষ্ঠ প্রজন্মের সন্তান অর্ঘ্য নির্মীয়মান টালাব্রিজ দেখেন আর ভাবেন, কবে আবার উঠতে পারবেন ব্রিজে। কবে আবার সাত বছরের স্কুলছাত্রের নস্টালজিয়ার সঙ্গে মিশে যাবে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রের বর্তমান। যিনি চারতলার ছাদে দাঁড়িয়ে কলকাতার আকাশরেখা দেখাতে দেখাতে টালা ব্রিজের দিকে আঙুল তুলে বললেন, ‘‘ওই ব্রিজের উপর টালা ব্রিজ নামে একটা বাস স্টপ ছিল। স্কুল যাওয়ার জন্য ওই বাস স্টপ থেকেই বাসে উঠতাম। বন্ধুদের মধ্যে সময় ঠিক করা থাকত। শর্ত ছিল, সকলে না আসা পর্যন্ত কেউ বাস ধরবে না। ওই বাস স্টপেই সকলে অপেক্ষা করতাম।’’
মাঝেরহাট উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পর কলকাতা শহরের সব সেতুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করেছিল রাজ্য সরকার। রোগ ধরা পড়েছিল ৫৯ বছর বয়সি টালা সেতুর। বিপর্যয়ের সম্ভাবনা এড়াতে ২০২০ সালে প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু ভাঙা শুরু হয়। বছর কুড়ির অর্ঘ্য তখন ভুবনেশ্বরে। কলিঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিক্যাল টেকনোলজির ছাত্র। ‘‘সে বছর দোলের সময় বাড়ি ফিরে দেখি জোরকদমে টালা ব্রিজ ভাঙার কাজ চলছে। কাগজে আগেই পড়েছিলাম। কিন্তু সামনে থেকে একটু একটু করে পুরো সেতুটা ধুলোয় মিশে যেতে দেখে মন খারাপ লাগছিল’’, বলছিলেন অর্ঘ্য।