Advertisement
E-Paper

কানপুরে অত্যাচারিত চা বাগানের কিশোরী

মিরিকের চা বাগানে বেড়ে ওঠা সুন্দরী জানায়, পর পর দু’দিন খেতে দেওয়া হয়নি তাকে। তাই গভীর রাতে রান্নাঘরে গিয়ে রুটি বানিয়ে খেয়েছিল সে। ধরা পড়ার পরে জুটেছিল মার।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৮ ০৫:০৫
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ফেব্রুয়ারির এক দিনে কানপুর স্টেশনে ট্রেন থেকে নামতেই তাকে সোজা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তিনতলা একটা বাড়িতে। সারা দিন কাজের পরে রাতে খেতে চাইলে জুটেছিল গালিগালাজ।

পরদিন সকাল থেকে ঘর ঝাঁট দেওয়া, মোছা, কাপড় কাচা। কিন্তু, খাবার চাইলে শুধু জল! কলকাতার একটি হাসপাতালে শুয়ে ১৭ বছরের কিশোরী সুন্দরী (নাম পরিবর্তিত) বলে, ‘‘১০ হাজার টাকা মাইনে দেবে বলে নিয়ে গিয়েছিল। বিশাল বাড়ি। মালিক-মালকিন, ছেলেমেয়ে, নাতিনাতনি আর পাঁচ জন পরিচারক-পরিচারিকা। সকলেই কমবেশি মারধর করত।’’

মিরিকের চা বাগানে বেড়ে ওঠা সুন্দরী জানায়, পর পর দু’দিন খেতে দেওয়া হয়নি তাকে। তাই গভীর রাতে রান্নাঘরে গিয়ে রুটি বানিয়ে খেয়েছিল সে। ধরা পড়ার পরে জুটেছিল মার। এ ভাবে ৯ দিন কেটে যায়। সুন্দরীর কথায়, ‘‘খিদের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে আবার রুটি বানিয়ে খাই। এ বার ওরা মারতে এলে চলে যাই ছাদে। পিছনের সিঁড়ি দিয়ে পালাব ভেবেছিলাম। কিন্তু ওরা আমাকে হাত-পা-মুখ বেঁধে ছাদ থেকে ছুড়ে দেয়।’’ পথচলতি এক যুবক তাকে তুলে ভর্তি করেন হাসপাতালে। মেরুদণ্ডে, পায়ে ‘মালটিপল ফ্র্যাকচার’ হয়েছে সুন্দরীর।

সুন্দরী জানায়, চা বাগানের কাজ থেকে বাবা অবসর নেওয়ার পরে, টানাটানি শুরু হয় ৬ ভাই-বোনের সংসারে। সুযোগ বুঝে কাগজপত্র নিয়ে হাজির হয়ে যায় এক দম্পতি বিকাশ ও মিলন থাপা। ১০ হাজার টাকার বেতনের চাকরির কথা বলে। তার পর তাদের সঙ্গে গত ৭ ফেব্রুয়ারি কানপুরে পৌঁছয় সুন্দরী। কিশোরী বলে, ‘‘এক রাত ওই দালালদের বাড়িতে ছিলাম। তখনই সন্দেহ হয়। কানপুরে যাব না বলায় আমাকে শাসায়। বলে অনেক টাকা ওদের দিতে হবে।’’

ওই দম্পতিকে পুলিশ ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে। কানপুরের হাসপাতাল থেকে তারাই সুন্দরীকে নিয়ে এসেছিল শিলিগুড়িতে। নার্সিংহোমে (পরে আনা হয় কলকাতায়) ভর্তি করিয়ে, পরিবারকে খবর দিয়ে গা ঢাকা দেয়। কানপুরের ওই বাড়ির মালিক কোমল ভাসানের নামেও মাটিগাড়া থানায় অভিযোগ জমা পড়েছে। তবে তিনি অধরা।

সুন্দরীর ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। দার্জিলিং ডিস্ট্রিক্ট লিগাল এড ফোরামের সম্পাদক অমিত সরকারের বক্তব্য, তাঁরা জানতে পেরেছেন, চা-বাগানের কুলিলাইন থেকে অনেক শিশু চলে গিয়েছে ভিন্‌ রাজ্যে। অমিতবাবুর কথায়, ‘‘কয়েক জন পাচার হয়েছে, কয়েক জন হয়তো বিক্রিও হয়ে গিয়েছে বলে আমাদের সন্দেহ।’’ দিল্লি ও রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশনে চিঠি লেখেন অমিতবাবুরা। দিল্লি থেকে নির্দেশ আসে রাজ্যের কাছে। রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দার্জিলিঙের জেলাশাসকের কাছে এই মেয়েটির বিষয়ে জানতে চেয়েছি। এমন ঘটনা আর হয়েছে কি না, তা-ও দেখতে বলা হয়েছে।’’

teenage girl persecuted Kanpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy