Advertisement
E-Paper

চায়ের প্যাঁচে তৃণমূল, ‘মৃত্যু’ ছেপেও দুঃখপ্রকাশ

চায়ের পেয়ালায় তুফান! আক্ষরিক অর্থেই! পশ্চিমের জঙ্গলমহল থেকে উত্তরের পাহাড় বেয়ে চা-বাগান পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পর্শে বদলে গিয়েছে বলে দাবি করে থাকে তৃণমূল। আর তাদেরই মুখপত্রের পুজোসংখ্যায় এ বার প্রকাশিত হয়ে পড়েছিল চা-বাগানে গত কয়েক বছরে মৃত্যু মিছিলের কাহিনি!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৪

চায়ের পেয়ালায় তুফান! আক্ষরিক অর্থেই!

পশ্চিমের জঙ্গলমহল থেকে উত্তরের পাহাড় বেয়ে চা-বাগান পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পর্শে বদলে গিয়েছে বলে দাবি করে থাকে তৃণমূল। আর তাদেরই মুখপত্রের পুজোসংখ্যায় এ বার প্রকাশিত হয়ে পড়েছিল চা-বাগানে গত কয়েক বছরে মৃত্যু মিছিলের কাহিনি! বিরোধীরা যতই অভিযোগ করুক, চা-বাগানে মৃত্যুর মিছিল চলছে— এমন কথা তৃণমূলে উচ্চারণ করাও নিষিদ্ধ! স্বভাবতই শাসক দলের মুখপত্রে এমন নিবন্ধ দেখে তোলপাড় পড়েছিল রাজনৈতিক শিবিরে। তার রেশ পৌঁছেছিল স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত। অগত্যা বিজ্ঞপ্তি ছাপিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ঘোষণা করতে হল, দলীয় মুখপত্রের সম্পাদকীয় বিভাগ চা-বাগান নিয়ে এমন মতামত অনুমোদন করে না। ওই নিবন্ধ ‘অসাবধানতা বশত প্রকাশিত’ হওয়ায় তাঁরা ‘দুঃখিত’!

পুজোসংখ্যার নিবন্ধের জেরে এ ভাবে দুঃখপ্রকাশের ঘটনা নজিরবিহীন বললেই চলে। তৃণমূল নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, আলিপুরদুয়ার থেকে প্রেরিত ওই নিবন্ধের প্রতিপাদ্য যাচাই করে দেখা হয়নি। বিতর্ক শুরু হওয়ার পরে বিষয়টি তাঁদের গোচরে এসেছে এবং তাঁরা ভুল বুঝতে পেরেছেন। কী ভাবে বিষয়বস্তু খতিয়ে না দেখেই একটি নিবন্ধ শাসক দলের মুখপত্রে ছেপে বেরিয়ে গেল, সে প্রশ্ন অবশ্য থাকছে। যে কারণে বিরোধীরা বলছে, বিড়ম্বনায় পড়ে এখন হাত ধুয়ে ফেলতে চাইছেন পার্থবাবুরা।

ঝড়ের সূত্রপাত তৃণমূলের মুখপত্রের পুজোসংখ্যায় ‘শ্রমের চা পাতায় গুঁড়ো হওয়া শ্রমিকদের প্রাণকথা’ শীর্ষক একটি নিবন্ধ ঘিরে। যার মধ্যে বলা হয়েছে, গত দেড় বছরে চা-বাগান প্রায় ৪০০ শ্রমিকের মৃত্যুর সাক্ষী। অনাহার, অর্ধাহার, অপুষ্টি, আত্মহত্যায় জর্জরিত শ্রমিক মহল্লা। বাগান কর্তৃপক্ষের দোষ তো আছেই। সরকারি রেশন নিয়েও দুর্নীতি চলছে। রাজ্য সরকার সপ্তাহে দু’বার মেডিক্যাল টিমের পর্যবেক্ষণের কথা বললেও পরিস্থিতির হেরফের হয়নি। তৃণমূলের জমানাকে সরাসরি দোষারোপ করা হয়নি তথ্যসমৃদ্ধ ওই নিবন্ধে। বলা হয়েছে, আরএসপি প্রভাবিত উত্তরবঙ্গের ওই এলাকায় পরিস্থিতি যা ছিল, তার উন্নতি হয়নি। কিন্তু যে সরকারের শ্রমমন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রী বিধানসভায় বিরোধীদের প্রশ্নের উত্তরে সাফ বলে এসেছেন চা-বাগানে অনাহারে কেউ মারা যাচ্ছেন না, তাদের পক্ষে এমন বর্ণনা মেনে নেওয়া একটু কঠিনই ছিল।

ঘটনাচক্রে, পুজোসংখ্যার আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হয়েছিল মমতার হাত দিয়েই। প্রথমেই তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করেছিলেন, নিবন্ধের বিষয়টি তাঁদের জানা নেই। শাসক দলের একটি সূত্রের বক্তব্য, স্বয়ং দলনেত্রী রুষ্ট হওয়ায় খোঁজখবর নিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, আলিপুরদুয়ারের ওই লেখিকার নিবন্ধ প্রকাশ করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন স্থানীয় বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী। তাঁর নেতৃত্বে নবগঠিত টি ডিরেক্টরেট-এর দিকেই যে এখন চা-বাগান তাকিয়ে আছে, তা-ও উল্লেখ করা আছে নিবন্ধে। এর পরের ঘটনাক্রমে টি ডিরেক্টরেট-এর চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সৌরভকে। চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদই তুলে দিয়ে একটি উপদেষ্টা কাউন্সিল গড়ে তার মাথায় আনা হয়েছে মন্ত্রী পার্থবাবুকে। যদিও তৃণমূলের তরফে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা, সুপ্রিম কোর্টের একটি মামলার জেরে প্রশাসনিক জটিলতা এড়াতেই রদবদল। এর সঙ্গে পুজোসংখ্যার সম্পর্ক নেই। আর সৌরভের দাবি, ‘‘সিপিএম পরিবারের এক জনের লেখা কী ভাবে আমাদের না জানিয়ে পুজোসংখ্যায় প্রকাশিত হয়ে গেল, তাতে আমি বিস্মিত!’’

বিরোধীরা অবশ্য এমন হাতিয়ার ছাড়তে নারাজ। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের মন্তব্য, ‘‘দলের অনুগামী কেউ সত্যি কথা বলে ফেললেও মুখ্যমন্ত্রী মানবেন না! ওই লেখিকার জন্য উদ্বিগ্ন হচ্ছি।’’ আর বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলের পুজোসংখ্যায় সিপিএমের কেউ গিয়ে লিখে দিয়ে এল? সত্য আড়াল করতে চাইলেও স্বৈরাচার ধরা পড়ে যাচ্ছে!’’

Tea garden TMC Suicide
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy