প্রতীকী ছবি।
গত নভেম্বরে এক বার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক বদলি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য সরকার। তার পরে ফের তা চালুও হয়েছিল। কিন্তু শূন্য শিক্ষকপদ নিয়ে টানাপড়েনের জেরে ঠিক এক বছরের মাথায় রাজ্যে আবার অনির্দিষ্ট কালের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক বদলি বন্ধ হয়ে গেল। শুক্রবার এই বিষয়ে স্কুলশিক্ষা দফতরের দু’লাইনের একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পরবর্তী বিজ্ঞপ্তির আগে বদলির আবেদনও করা যাবে না।
যে-বিষয়ে শিক্ষকপদ খালি, সেই বাংলার জন্য শিক্ষক নিয়োগ না-করে সংস্কৃত ও উর্দুর শিক্ষক নেওয়ার জেরে সম্প্রতি প্রাণঘাতী বিক্ষোভ হয় ইসলামপুরের দাড়িভিট স্কুলে। সেই ঘটনার পরে সব ডিআই বা জেলা স্কুল পরিদর্শককে জরুরি তলব করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ২৪ সেপ্টেম্বর ডিআইদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকে জানানো হয়, প্রতিটি জেলাতেই শূন্য পদে কমবেশি গোলমাল রয়েছে। জেলা স্কুল পরিদর্শকেরা শূন্য পদের যে-‘প্রায়র পারমিশন’ (পিপি) পাঠিয়েছেন, গলদ সেখানেই। কোন স্কুলে ক’জন শিক্ষক রয়েছেন, শূন্য পদ কত— তার হিসেব দ্রুত পেশ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল সেই বৈঠকে। সেই সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘ধীরে চলো’ নীতি নেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল।
উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকদের নিয়োগপত্র বিলি ইতিমধ্যেই সাঙ্গ হয়েছে। নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নেওয়ার প্রক্রিয়ায় সেই সময় নিয়োগপত্র বিলির কাজ শুরু হতে যাচ্ছিল। এ বার বদলি প্রক্রিয়াও বন্ধ করে দেওয়া হল। রাজ্যের সব স্কুলে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ঠিক রাখতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র চেয়ারম্যান, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতিদের নিয়ে বৈঠকও করেন শিক্ষামন্ত্রী। আলোচনায় উঠে আসে, বদলি চলতে থাকলে শূন্য পদের হিসেব ঠিকঠাক রাখা যায় না। এই পরিস্থিতিতেই আপাতত বদলি বন্ধের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী জানান, কোন স্কুলে কত শিক্ষকপদ শূন্য রয়েছে, তা বোঝার জন্যই শিক্ষক বদলি বন্ধ রাখা হল।
এর আগে, ২০১৭ সালের নভেম্বরে স্কুলশিক্ষক বদলি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য। তবে সেই সময় বিশেষ ক্ষেত্রে বদলি এবং বদলির আবেদন করার প্রক্রিয়া চালু ছিল। পঞ্চায়েত ভোটের পরে বদলি প্রক্রিয়া আবার শুরু হয়ে যায়। এমনকি এ বার শিক্ষক দিবসে সরকারি অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, শিক্ষিকারা যাতে নিজের নিজের জেলায় বদলি হতে পারেন, তা দেখা হচ্ছে। বদলি বন্ধের সিদ্ধান্তে সবই থমকে গেল।
স্কুলশিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক অবশ্য জানান, শিক্ষামন্ত্রীর বিবেচনার ভিত্তিতে যে-বিশেষ বদলি হয়, তা হয়তো বন্ধ হবে না। আর যাঁদের বদলির আদেশ ইতিমধ্যে বেরিয়ে গিয়েছে, সেগুলো রদ হবে না বলেই আশা করা হচ্ছে।
বদলি বন্ধের ব্যাপারে স্কুলশিক্ষা দফতরের ওয়েবসাইটে কারও স্বাক্ষর ছাড়া এবং মেমো নম্বর ছাড়াই যে-ভাবে দু’লাইনের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে সরব হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। এবিটিএ-র সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ঠিক পরিকল্পনার অভাবেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়।’’ বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘আগে যে-সব বদলির আদেশ হয়েছে, আশা করি, সেগুলো বাতিল করা হবে না। নিয়োগ নিয়ে ডিআই অফিসের বিরুদ্ধে অভিযোগও গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy