Advertisement
E-Paper

বাড়ি পেয়েও ধর্ষণের বয়ান কেন, হুমকি

ধর্ষণের অভিযোগ ঢাকতে নির্যাতিতার নামে নিজেদের বাড়ি লিখে দিয়েছিল অভিযুক্তের পরিবার। শর্ত ছিল, ধর্ষণের কথা মেয়েটি আদালতে জানাবে না। ওই নাবালিকা কিন্তু আদালতে গিয়ে নিজের বয়ান বদলায়নি। সাক্ষ্যের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দু’বছর আগে তার সঙ্গে যা যা হয়েছিল, সব সে জানায় বিচারককে। অভিযোগ, সেই আক্রোশে আদালত চত্বরে মেয়েটিকে হুমকি দেয় অভিযুক্ত যুবক ও তার সঙ্গীরা। আর সেই রাতেই মেয়েটি গলায় ওড়না জড়িয়ে আত্মঘাতী হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৫ ০৪:১৮
অভিযুক্ত ধীমান সরকার। — নিজস্ব চিত্র।

অভিযুক্ত ধীমান সরকার। — নিজস্ব চিত্র।

ধর্ষণের অভিযোগ ঢাকতে নির্যাতিতার নামে নিজেদের বাড়ি লিখে দিয়েছিল অভিযুক্তের পরিবার। শর্ত ছিল, ধর্ষণের কথা মেয়েটি আদালতে জানাবে না। ওই নাবালিকা কিন্তু আদালতে গিয়ে নিজের বয়ান বদলায়নি। সাক্ষ্যের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দু’বছর আগে তার সঙ্গে যা যা হয়েছিল, সব সে জানায় বিচারককে। অভিযোগ, সেই আক্রোশে আদালত চত্বরে মেয়েটিকে হুমকি দেয় অভিযুক্ত যুবক ও তার সঙ্গীরা। আর সেই রাতেই মেয়েটি গলায় ওড়না জড়িয়ে আত্মঘাতী হয়েছে।

শনিবার রাতে উত্তর দিনাজপুরের বাঘন এলাকার এই ঘটনার পরে মৃতার দাদা স্থানীয় কালিয়াগঞ্জ থানায় ধীমান সরকার নামে ওই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্ত পলাতক। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা বলেন, ‘‘বছর ছাব্বিশের অভিযুক্ত যুবক ও তার পরিবারের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে হুমকি ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত কিশোরীর বাবা, মা ও দাদা, সবাই দিনমজুর। ২০১৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর পেশায় দিনমজুর ও তাঁদের পড়শি ধীমান ওই কিশোরীর ঘরের বেড়ার দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে তাকে খুনের হুমকি দিয়ে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। মেয়েটির বাবা-মা বাড়ির অন্য একটি ঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন। দাদা বাড়িতে ছিলেন না। তখন মেয়েটির বয়স বছর পনেরো। পর দিন ওই কিশোরী পুলিশে অভিযোগ করে। পুলিশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধীমানকে গ্রেফতার করে ধর্ষণের মামলা দায়ের করে। রায়গঞ্জের মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালত ধীমানের জামিনের আবেদন নাকচ করে তাকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয়। সে জেল হেফাজতে থাকাকালীন ৪৫ দিনের মাথায় পুলিশ ওই মামলার চার্জশিট দেয়। তিন মাসের মাথায় অভিযুক্তের জামিন মঞ্জুর করে আদালত।

সেই থেকে ধর্ষণের মামলাটির শুনানি চলছিল। ইতিমধ্যে ধীমানের বিয়েও হয়ে যায়। মৃত কিশোরীর পরিবার সূত্রেই জানা যাচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে মাস দুয়েক আগে ধীমান, তার বাবা পেশায় গৃহশিক্ষক বিশ্বনাথ সরকার ও মা ঝুমাদেবী ওই কিশোরীর পরিবারের লোকজনকে ক্ষতিপূরণ বাবদ তাঁদের বাড়িটি ওই কিশোরীর নামে লিখে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে মামলাটি মিটিয়ে নিতে বলেন। কিশোরীর পরিজনেরা তাতে রাজি হলে বিশ্বনাথবাবু আইনগত পদ্ধতিতেই তাঁদের বাড়িটি ওই কিশোরীর নামে লিখে দেন। অভিযুক্তের পরিবার শর্ত দেয়, ওই কিশোরী আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে এমন কোনও বয়ান দেবে না, যাতে অভিযুক্ত ধীমানের শাস্তি হয়। এই মামলার সরকারি আইনজীবী শেখর পাল বলেন, ‘‘শনিবার দুপুরে ওই কিশোরী রায়গঞ্জের ফাস্ট ট্র্যাক ২ আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময়ে ঘটনার দিন কী ভাবে অভিযুক্ত তার উপরে অত্যাচার চালিয়েছিল, সেই বয়ান দেয়। এর পরেই কয়েক জন আইনজীবীর উপস্থিতিতে অভিযুক্ত যুবক-সহ কয়েক জন ওই কিশোরীকে নানা রকম হুমকি দেয়।’’ ওই কিশোরীর কাকু বলেন, ‘‘আদালতে সত্যি বয়ান দেওয়ায় ওই দিন ধীমান ও অজ্ঞাতপরিচয় কয়েক জন আদালতের বারান্দায় আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের সামনে ভাইঝিকে হুমকি দেয়। ভয়ে ও লজ্জায় এর পর ভাইঝি বাড়ি ফিরে গলায় ওড়নার ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।’’

পুলিশ জানিয়েছে, ধীমানের হয়ে কোনও আইনজীবীও হুমকি দিয়েছিলেন কি না, তা দেখা হচ্ছে। জেলার এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘ঘটনার দিন আদালতে হাজির কিছু আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। আপাতত যতটুকু জানা গিয়েছে, ওই দিন সাক্ষ্য দেওয়ার পরে ওই কিশোরীর সঙ্গে এক আইনজীবীর বাদানুবাদ হয়। সেই সময়ে অভিযুক্ত যুবকের ভূমিকা কী ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ তবে, অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী স্বরূপ বসাকের দাবি, ‘‘কোনও আইনজীবী ওই দিন আদালত চত্বরে ওই কিশোরীকে হুমকি দেননি।’’ তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কেউ যদি ওই কিশোরীকে আদালতে হুমকি দিয়ে থাকে, তা হলে ওই কিশোরীর পরিজন ও সরকারি আইনজীবীরা বিচারককে জানালেন না কেন?’’

পুলিশ সূত্রের খবর, নির্যাতিতা কিশোরীকে বাড়ি লিখে দেওয়ার পর থেকে গত দু’মাস ধরে অভিযুক্ত ধীমান তার স্ত্রী, বাবা ও মাকে নিয়ে বালুরঘাটে এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছেন। তবে, বাড়ির ঠিকানা তাঁদের কাছে নেই বলেই মৃত কিশোরীর বাড়ির লোকের দাবি। পুলিশ ঠিকানা খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছে।

Kaliyaganj Teenage girl suicide police rape
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy