Advertisement
২৩ মার্চ ২০২৩
Bharatpur

বিদ্যাচর্চার প্রাচীন কেন্দ্রের খোঁজ মিলল ভরতপুরে

১৯৭১-৭২ সালে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে এই এলাকায় খননকার্য হয়। তখনই একটি বৌদ্ধ স্তূপের সন্ধান মেলে।

Excavation is going on at Bharatpur in East Burdwan.

পূর্ব বর্ধমানের ভরতপুরে চলছে খননকার্য। নিজস্ব চিত্র

অলখ মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:১০
Share: Save:

এক রকম বিস্মৃত একটি প্রাচীন বিদ্যাপীঠের সন্ধান মিলল মাঘের এই শুক্ল পক্ষে। পূর্ব বর্ধমানের বুদবুদের কাছে ভরতপুর গ্রামে গত দশ দিনে উৎখনন করে একটি বৌদ্ধ বিহারের অস্তিত্বের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ এই উৎখনন করছে। সর্বেক্ষণের কলকাতা মণ্ডলের প্রধান শুভ মজুমদার বলেন, ‘‘নবম-দশম শতকের একাধিক স্থাপত্যের নিদর্শন মিলেছে। তার মধ্যে রয়েছে একটি ঘর বা কক্ষ। ওই কক্ষের বাইরে একটি প্রাচীরের নিদর্শনও পাওয়া গিয়েছে।’’ পুরাতত্ত্ববিদদের মতে, এটি উপাসনাস্থল এবং বিদ্যাচর্চা কেন্দ্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

Advertisement

পুরাতত্ত্ববিদের মতে, এমন বিহারে উপাসনা, পূজা-অর্চনা এবং অধ্যয়ন-অধ্যাপনা করা হত। পুরাতত্ত্ববিদ রূপেন্দ্র কুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিহারটি বেশ কিছু সময় ধরে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের ব্যবহার্য ছিল বলে ধরে নেওয়া যায়। অনুমান করে নেওয়া যেতে পারে, এটি একটি বৌদ্ধ ধর্মচর্চা কেন্দ্র বা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল।’’

১৯৭১-৭২ সালে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে এই এলাকায় খননকার্য হয়। তখনই একটি বৌদ্ধ স্তূপের সন্ধান মেলে। পাওয়া যায় ভূমিস্পর্শ মুদ্রায় বুদ্ধের ছোট ছোট প্রতিমা। সেই স্তূপ সংলগ্ন এলাকা থেকেই এ বার পাওয়া গেল ওই কক্ষটি। শুভ বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত কক্ষটির দেওয়ালে পরপর ষোলোটি ইটের স্তর পাওয়া গিয়েছে। এই দেওয়ালটি সম্ভবত কক্ষটির একেবারে নীচের অংশ। সে ক্ষেত্রে এটি একটি বড় ঘরই ছিল বলে অনুমান করা যেতে পারে।’’

এখনও পর্যন্ত সেই ইট ও গাঁথনি দেখে মনে হচ্ছে, নবম-দশম শতকে তা তৈরি হয়েছিল। শুভ বলেন, ‘‘আমরা আরও খনন করে কক্ষটি সম্পূর্ণ বার করে আনতে চাই। পাশাপাশি কয়েকটি ঘর ছিল কি না, তা-ও সন্ধান করতে হবে।’’ স্তূপটিও হাজার বছরের পুরনো বলেই অনুমান। স্তূপের উত্তর দিকে উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্বে ইটের একটি প্রাচীরের অস্তিত্বও বোঝা গিয়েছে। যা সম্ভবতগুপ্ত পরবর্তী যুগের বলে অনুমান করা যায়।

Advertisement

তবে এই এলাকায় মানুষের বসবাসের প্রমাণ মিলেছে খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয়-প্রথম সহস্রাব্দ থেকেই। সাম্প্রতিক উৎখননেও তার নিদর্শন মিলেছে। রূপেনবাবু বলেন, ‘‘নদীর তীর ঘেঁষা উর্বর এই ভূমিখণ্ডে একটি সুপ্রাচীন কৃষিভিত্তিক সভ্যতার জন্ম হয়েছিল।’’ তারও বহু শতক পরে দামোদরের ধারে হাজার বছর আগে এমনই কোনও মাঘের শুক্ল পক্ষে, যখন দীপশিখা থাকে নিষ্কম্প, হয়তো কোনও দুই সন্ন্যাসী ভূমিস্পর্শ মুদ্রায় উপবিষ্ট বুদ্ধমূর্তির সামনে বসে এই ঘরে বিদ্যাচর্চা করেছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.