Advertisement
১৮ মে ২০২৪

দফতরই অ-প্রস্তুত, বিপর্যয়ের মোকাবিলা করবে কে

রাজ্যে বিপর্যয় মোকাবিলার হাল কী, সোমবারের এই ঘটনাই সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। প্রশাসনের অনেকেই বলছেন, বিপর্যয় সামাল দেওয়ার জন্য আস্ত একটা দফতর রয়েছে, তার জন্য রয়েছে আলাদা বাজেট।

ডুবল বাস: চলছে দেহ উদ্ধার। ছবি: গৌতম প্রামাণিক ও সাফিউল্লা ইসলাম

ডুবল বাস: চলছে দেহ উদ্ধার। ছবি: গৌতম প্রামাণিক ও সাফিউল্লা ইসলাম

সোমনাথ চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:০১
Share: Save:

সেতু থেকে খালে পড়ে গিয়েছে যাত্রীতে ঠাসা বাস। কিন্তু গোটা মুর্শিদাবাদ জেলায় তন্নতন্ন করে খুঁজেও ডুবুরি মেলেনি! শেষে ডুবুরি আনতে হয়েছে কৃষ্ণনগর থেকে।

রাজ্যে বিপর্যয় মোকাবিলার হাল কী, সোমবারের এই ঘটনাই সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। প্রশাসনের অনেকেই বলছেন, বিপর্যয় সামাল দেওয়ার জন্য আস্ত একটা দফতর রয়েছে, তার জন্য রয়েছে আলাদা বাজেট। রয়েছেন মন্ত্রী, সচিবও। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে, উঠছে বারবার। এবং সেই প্রশ্ন যে অবান্তর নয়, এ দিনই তার প্রমাণ মিলেছে।

রাজ্যে দুর্ঘটনা বা বিপর্যয় এই প্রথম নয়। নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা বারে বারেই ঘটে। প্রতি বারেই প্রশাসন আশ্বাস দেয়, আরও জোরালো পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। কিন্তু আদতে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর যে নিতান্ত নিধিরাম সর্দার হয়েই থেকে যায়, সেটা ঠারেঠোরে মেনে নিচ্ছেন প্রশাসনের অনেকেই। অথচ পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী ওডিশাই বিপর্যয় মোকাবিলার দক্ষতার নিরিখে দেশের ‘মডেল’ বা আদর্শ বলে গণ্য হয়। নির্দিষ্ট বাহিনীর সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি পরিবারে এক জন করে প্রশিক্ষিত বিপর্যয় মোকাবিলা স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করেছে ওডিশা সরকার। তার ফলে কোনও বিপদে বাহিনী পৌঁছনোর আগেই স্বেচ্ছাসেবকেরা প্রাথমিক কাজ শুরু করে দিতে পারেন। ‘‘অথচ এখানে কোনও ঘটনা ঘটলে প্রথমেই বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী দেরিতে পৌঁছনোর অভিযোগ ওঠে,’’ খেদের সঙ্গে বললেন প্রশাসনের এক কর্তা।

বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন এনডিআরএফ বা জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ধাঁচে রাজ্যেও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী গড়া হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তাদের পরিসর ও পরিকাঠামো অপ্রতুল। রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের সাতটি কোম্পানিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে রায়গঞ্জ, ব্যারাকপুর, কৃষ্ণনগর, শিলিগু়ড়ি ও বড়জোড়ায় মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু বিপর্যয় ঘটলে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাওয়ার মতো পরিকাঠামো অনেক সময়েই থাকে না। ‘‘আদতে এখানে বিপর্যয় মোকাবিলার পরিকল্পনা রয়েছে শুধু কাগজে-কলমে। বাস্তবায়ন খুব কম,’’ মন্তব্য দফতরের এক অফিসারের।

বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের এক শীর্ষ কর্তা অবশ্য জানাচ্ছেন, কোনও মানুষ জলে ডুবে গেলে তিন মিনিটের মধ্যে মারা যান। কোনও উদ্ধারকারী দলের পক্ষে তিন মিনিটের মধ্যে অকুস্থলে পৌঁছনো সম্ভব নয়। এ দিনও কোনও গাফিলতি ছিল বলে মনে করেন না তিনি। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুর্শিদাবাদ গেলেও দুর্ঘটনাস্থলে যাননি বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী জাভেদ খান। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিটি জেলায় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের অফিসার এবং স্বেচ্ছাসেবক আছেন জেলাশাসকের অধীনে। কাজের সুবিধার জন্য কোচবিহার, বর্ধমান, মালদহ, শিলিগুড়ি এবং সাগরে বাড়তি বাহিনী রয়েছে। ডুবুরিদের প্রশিক্ষণ চলছে।’’

দফতরের কোনও কোনও কর্তা স্বীকার করেছেন, কাজ করলে ভাতা মিলবে, এই শর্তে নিয়োগ করা স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা সম্ভব নয়। স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণের মান নিয়েও প্রশ্ন আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE