Advertisement
E-Paper

দিদি, বিয়ে দিচ্ছে, তোমরা আটকাও

বেলডাঙার শক্তিপুর গার্লস হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী স্বাতী দাস ফোন নম্বরটা পেয়েছিল সহপাঠী পাপিয়া মণ্ডলের কাছ থেকে। পাপিয়া কন্যাশ্রীযোদ্ধা। স্থানীয় সোমপাড়া হাইস্কুলের সুমি খাতুনকে ফোন করার বুদ্ধিটা সে-ই দিয়েছিল।

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৭ ০৩:৫৮
স্বাতী দাস। —নিজস্ব চিত্র।

স্বাতী দাস। —নিজস্ব চিত্র।

চেনা এক জনের কাছ থেকে ফোন নম্বর জোগাড় করে ফোন করেছিল মেয়েটা— ‘দিদি, বাবা-মা আমার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। আমি এখনই বিয়ে করতে চাই না। অন্তত মাধ্যমিক পরীক্ষাটা দিতে চাই।’’

ফোনের ও প্রান্তে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী। কন্যাশ্রীযোদ্ধা। অর্থাৎ, নাবালিকা বিয়ে রুখতে ক্লাস টেন-টুয়েলভ বা কলেজে ঢোকা মেয়েদের নিয়ে মুর্শিদাবাদের কিছু এলাকায় যে ‘যোদ্ধা’ বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছে, তারই এক সদস্য সে।

বেলডাঙার শক্তিপুর গার্লস হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী স্বাতী দাস ফোন নম্বরটা পেয়েছিল সহপাঠী পাপিয়া মণ্ডলের কাছ থেকে। পাপিয়া কন্যাশ্রীযোদ্ধা। স্থানীয় সোমপাড়া হাইস্কুলের সুমি খাতুনকে ফোন করার বুদ্ধিটা সে-ই দিয়েছিল।

প্রায় মরিয়া হয়ে স্বাতী বলছিল, ‘‘পাত্র চাকরি করে। বাবা-মা বলছে, এমন পাত্র বারবার পাওয়া যাবে না! দিদি, তোমরা কিছু একটা করো!’

সুমি জানতে চায়: ‘‘কবে বিয়ে?’’

স্বাতী: ‘‘এই বিশে আষাঢ়।’’

সুমি: ‘‘তবে তো আর দু’সপ্তাহও হাতে নেই! আচ্ছা... তুমি ঘাবড়িও না। একটা দিন অপেক্ষা করো, আমরা দল বেঁধে তোমার বাড়ি যাব।’’

যেমন কথা, তেমন কাজ।

শনিবার সকালেই শক্তিপুর থানার কামনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের মশিমপুর গ্রামে স্বাতীদের বাড়িতে গিয়ে হাজির কন্যাশ্রীযোদ্ধারা। বাড়িতে ঢুকতেই ধেয়ে আসেন স্বাতীর বাবা গৌর ও মা সরাবতী দাস— ‘‘কে তোমরা?’’

গলা তুলে মেয়েরা বলে: ‘‘আমরা কন্যাশ্রীযোদ্ধা। আপনার মেয়ে বিয়ে করতে রাজি নয়, আপনারা জোর করে কেন ওর বিয়ে দিচ্ছেন?’’

গৌর-সরাবতী পাল্টা বলেন— ‘‘কে বলেছে বিয়ে? কী প্রমাণ আছে? যত্ত সব মিথ্যে কথা!’’

সোজা কথায় কাজ হবে না বুঝে মেয়েরা ফোনে ব্লক অফিস ও স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে খবর দেয়। খানিক ক্ষণের মধ্যে ব্লক অফিস থেকে লোকজন চলে আসেন। গৌর-সরাবতীকে তাঁরা বলেন, ‘‘নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিয়ে ভুল করছেন। এখন অস্বীকার করছেন, করুন। কিন্তু বিয়ের দিন পুলিশ নিয়ে আসব। ক্ষমতা থাকলে বিয়ে দেবেন!’’

এর পরেই ঘাবড়ে যান স্বাতীর বাড়ির লোকজন। তার বাবা মুচলেকা দেন, ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। মিনমিন করে তিনি বলেন, ‘‘জমি বিক্রি করে বিয়ে দিচ্ছিলাম। কিন্তু সেটা বেআইনি, তাই আর এগোচ্ছি না।’’ বেলডাঙা ২-এর বিডিও সমীররঞ্জন মান্না বলেন, ‘‘ছাত্রীদের চেষ্টাতেই এই বিয়ে রোখা গিয়েছে। মেয়েটির পড়ার ব্যাপারেও আমরা সাহায্য করব।’’

Minor Marriage Study Sister Family Child Marriage
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy