Advertisement
E-Paper

দক্ষিণেশ্বরে গঙ্গা দূষণ, দায় কি বালিখালের

পুজোর জায়গা নিষ্কলুষ, পরিষ্কার, রাখাটাই দস্তুর। অথচ পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গার দূষণ সবচেয়ে বেশি দক্ষিণেশ্বরে। যদিও ভবতারিণীর মন্দির লাগোয়া সেই গঙ্গায় স্নান করলে পুণ্য হয়, পাপ ধুয়ে যায় বলে অনেকেরই বিশ্বাস।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:২৪
কলুষিত: গঙ্গার এই অংশেই মিলেছে সবচেয়ে দূষিত জল। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

কলুষিত: গঙ্গার এই অংশেই মিলেছে সবচেয়ে দূষিত জল। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

পুজোর জায়গা নিষ্কলুষ, পরিষ্কার, রাখাটাই দস্তুর। অথচ পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গার দূষণ সবচেয়ে বেশি দক্ষিণেশ্বরে। যদিও ভবতারিণীর মন্দির লাগোয়া সেই গঙ্গায় স্নান করলে পুণ্য হয়, পাপ ধুয়ে যায় বলে অনেকেরই বিশ্বাস।

ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা বা গঙ্গাকে নির্মল করার জাতীয় উদ্যোগের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সন্দীপ জানাচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গা সবচেয়ে বেশি দূষিত দক্ষিণেশ্বরে। তাঁর দাবি, বালিখালই এই দূষণের মূল কারণ। ফলে দক্ষিণেশ্বরে গঙ্গা যে আদৌ স্নানের উপযুক্ত নয়, সেটা পরিষ্কার হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের অনুসন্ধান থেকে। কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক স্নান করার উপযুক্ত জলের যে মান নির্ধারণ করেছে, তাতে ১০০ মিলিলিটার জলে ৫০০-র কম ফিকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া থাকা উচিত। আর পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সর্বশেষ তথ্য বলছে, দক্ষিণশ্বরের কাছে গঙ্গায় ফিকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ প্রতি ১০০ মিলিলিটার জলে ২ লক্ষ ৪০ হাজার। পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রের কথায়, ‘‘এই পরিস্থিতি গঙ্গার স্বাস্থ্যের জন্য তো বটেই, জনস্বাস্থ্য ও ভূবৈচিত্র্যের পক্ষেও বিপজ্জনক।’’

ফিকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া মানুষ বা অন্যান্য উষ্ণ রক্তের প্রাণীর মলের সঙ্গে বেরোয়। স্নানের সময়ে ওই ব্যাকটেরিয়া পেটে গেলে পেটের নানা রকম অসুখ হতে পারে, ত্বকের সংস্পর্শে এলে হতে পারে চর্মরোগও। সন্দীপের বক্তব্য, একটা সময়ে ধারণা ছিল দক্ষিণেশ্বরে গঙ্গায় অসংখ্য মানুষ স্নান করেন বলে ওখানে অবস্থা এত খারাপ। কিন্তু স্নানের জন্য এত বিপুল পরিমাণ ফিকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া হতে পারে না। সন্দীপের ব্যাখ্যা, দক্ষিণেশ্বরের কাছে বালিখাল মিশছে গঙ্গায়। উল্টো দিকে বালিখাল ডানকুনি পর্যন্ত বিস্তৃত। কলকাতা ও আশপাশ থেকে সমস্ত খাটাল উচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে ওই এলাকায়। ওই সব গবাদি পশুর মল সরাসরি পড়ছে বালিখালে। আর বালিখাল ওই নোংরা বয়ে এনে দক্ষিণেশ্বরের কাছে গঙ্গায় ফেলছে। ‘‘বালিখালই এই ভাবে দক্ষিণেশ্বরে গঙ্গাকে দূষিত করছে,’’ বলেন সন্দীপ। পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণবাবুর কথায়, ‘‘এই দূষণ থেকে মুক্তি পেতে বালিখাল নিয়ে অবিলম্বে কিছু একটা ভাবতেই হবে।’’

বালিখাল আসলে সেচখাল। যা সেচ দফতরের হুগলি ডিভিশনের অধীন। রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গঙ্গা দূষণ নিয়ে আমরাও উদ্বিগ্ন। বালিখাল নিয়ে কী করা যায়, সেটা খতিয়ে দেখছি।’’ সেচ দফতর সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে তারা একটি ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করতে চলেছে।

রাজ্য পরিবেশ দফতর সূত্রের খবর, বালিখালের জন্য একটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বা পরিশোধন প্রকল্পের কথা বারবার বলা হয়েছিল। কিন্তু ওই প্রকল্প তৈরির উপযুক্ত জায়গা ও প্রয়োজনীয় অর্থ নেই বলে তাঁদের জানানো হয়েছে, এমনই দাবি পরিবেশ দফতরের এক কর্তার।

তবে দক্ষিণেশ্বরে গঙ্গার জল মাত্রাতিরিক্ত দূষিত হওয়ার জন্য কেবল বালিখালকে দায়ী করতে রাজি পরিবেশ দফতরের বিজ্ঞানীদের একাংশ। তাঁদের মতে, দক্ষিণেশ্বরে গঙ্গা দূষণের অন্যতম কারণ অবশ্যই বালিখাল, তবে দূষণের আরও কারণ আছে। তাঁরা বলছেন, খড়দহ খাল, সার্কুলার ক্যানালের মতো কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনার তরল বর্জ্য ফেলার বহু খাল বা নিকাশি নালা দক্ষিণেশ্বরে গঙ্গার উজান ও ভাটিতে অবস্থান করছে। সে সব খাল থেকে তরল বর্জ্য কোনও রকম পরিশোধন না হয়ে সরাসরি গঙ্গায় পড়ে জলকে বিষিয়ে তুলছে। সেই জন্য দক্ষিণেশ্বরে গঙ্গার দূষণ সবচেয়ে বেশি মালুম হয় বলে ওই বিজ্ঞানীদের অভিমত।

পরিবেশ দফতরের একটি সূত্রের খবর, নিকাশি নালার যে জল গঙ্গায় পড়ে দূষণ ঘটাচ্ছে, সেই জল শোধনে রাজ্যে ৩০টি প্রকল্প তৈরি হয়েছিল। তার মধ্যে একটিও কাজ করছে না।

Dakshineswar দক্ষিণেশ্বর Ganges
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy