Advertisement
E-Paper

করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যর্থই সরকার, বলল তর্কসভা

করোনাদিনে এখনও বেঁচে থাকার আনন্দ নয়, করোনায় দেড় লক্ষাধিক ভারতীয়ের মৃত্যুই ঢের বেশি দুঃখের বলে সভার মেজাজ বেঁধে দিয়েছিলেন সঞ্চালক। করোনায় মৃতদের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করে শুরু হল বিতর্কসভা।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২১ ০৭:০২
বিতর্কে অংশগ্রহণকারী: (বাঁ দিক থেকে) মহুয়া মৈত্র, কুণাল সরকার, সঞ্জয় হেগড়ে,  হর্ষ নেওটিয়া, প্রসেনজিৎ কে বসু, তথাগত রায়।

বিতর্কে অংশগ্রহণকারী: (বাঁ দিক থেকে) মহুয়া মৈত্র, কুণাল সরকার, সঞ্জয় হেগড়ে, হর্ষ নেওটিয়া, প্রসেনজিৎ কে বসু, তথাগত রায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

সমালোচনার ঝড় বইলেও করোনাকে প্রায় হারিয়েই ফেলেছি আমরা! কথাটা বলেছিলেন ইতিহাস লেখক হয়ে ওঠায় উৎসাহী, প্রবীণ বিজেপি নেতা তথাগত রায়। শুনে বিতর্কসভার সঞ্চালক, স্নায়ুশল্য বিশারদ সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়ের ভিতরের চিকিৎসক সত্তাটি যেন রে-রে করে উঠল। আঁতকে উঠে তিনি বলে ফেললেন, সর্বনাশ! এর পরে তো আবার লোকজন মাস্ক নাক থেকে নামিয়ে ঘুরে বেড়াবে।

শনিবার সন্ধ্যা। ক্যালকাটা ক্লাবে সুভাষ বোস ইনস্টিটিউট অব হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিবেদিত ‘দ্য টেলিগ্রাফ ন্যাশনাল ডিবেট’-এর আসর। করোনাদিনে এখনও বেঁচে থাকার আনন্দ নয়, করোনায় দেড় লক্ষাধিক ভারতীয়ের মৃত্যুই ঢের বেশি দুঃখের বলে সভার মেজাজ বেঁধে দিয়েছিলেন সঞ্চালক। করোনায় মৃত সেই সহনাগরিকদের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করে শুরু হল বিতর্কসভা।

সভার উপজীব্য, অতিমারিতে জীবন-জীবিকার ভারসাম্য রক্ষায় ব্যর্থ ভারত। গত বছরে ভাইরাসের ভয় হয়তো একদা মিলিয়ে দিয়েছিল এ রাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে। তবে সেই ঐক্য এই সভায় স্থায়ী হয়নি। সভার মতের বিরুদ্ধে বক্তাদের নেতা তথাগত রায়। তাঁর বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিলেন সুবক্তা বলে পরিচিত তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। মহুয়াকে ফিসফিস করে বার বার উস্কে দিলেন কুণাল সরকার। সঞ্চালকের ভাষায় তিনি আবার এই বিষয়ের হৃদয়ের গভীরে ডুব মারা হৃদ্‌রোগ চিকিৎসক।

তবে ৫০ বছর আগে পুব সীমান্তে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে শামিল ভারতের সঙ্গে আজকের ভারতের তুলনা টেনে ধরতাইটা দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তথা মানবাধিকার কর্মী সঞ্জয় হেগড়ে। তিনি বোঝালেন, তখনও ইন্দিরা গাঁধী রেগে গেলেও সেনাপ্রধান স্যাম মানেকশ’ বুঝিয়েছিলেন রণকৌশলটা তাঁর পথেই নিতে হবে। এই ভারতে অপরিমাণদর্শী রাজনৈতিক নেতৃত্বের মুখের উপরে সেটুকু বলার বুকের পাটা কারও নেই। ঢিমে তালে প্রতিষেধক উৎপাদন নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের প্রশ্ন, তুলে ধরেন সঞ্জয়। বিহার ভোটে সবাইকে ভ্যাকসিন আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, বাংলার ভোটে কী বলা হচ্ছে, খোঁচা দিলেন তিনি।

শিল্পপতি হর্ষ নেওটিয়া বা এশিয়ার অর্থনীতি বিশারদ লেখক প্রসেনজিৎ কে বসুরা পাল্টা আশাবাদের মন্ত্রে সভাকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছিলেন। হর্ষ সরস ভঙ্গিতে বোঝান, অতিমারিতে সম্পদ ও ওজন— দুটোই কমেছে তাঁর। তবে দেশ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। লোকে কেনাকাটা করছে। তা ছাড়া, অনেক দেশের তুলনাতেই ভারত ঢের ভাল করেছে। প্রসেনজিৎবাবু, ‘ঋণনির্ভর’ নেহরু যুগকে টেনে এনে বোঝালেন, ‘‘এই দুর্যোগেও দেশে বেকারত্ব নিয়ন্ত্রণে। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় বেড়েছে। সামনে উজ্জ্বল অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ।’’

তখনই মহুয়া মৈত্র শুনিয়েছেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা, যাঁরা করোনা নয় খিদেকেই প্রধান শত্রু ভেবেছিলেন। মহুয়ার কাছে করোনা তুলে ধরেছে, গল্পে শোনা বাংলাদেশ যুদ্ধকালীন বিপন্ন মহামিছিলের ছবি। তাঁর কথায়, ‘‘গরিবের জীবন মানেই জীবিকা। এ দেশে গরিবকে মানুষ ভাবা হয়নি।’’ তথাগত রায়ের চোখে অবশ্য জীবন, জীবিকা আলাদা বিষয়। তাঁর মতে, ‘‘সীমাহীন অনিশ্চয়তার মধ্যে আমরা চেষ্টা করেছি। আর থালা বাজালে করোনা পালাবে কেউ বলেনি, কিন্তু সবাইকে একটা ধাঁচে ফেলে সচেতন করার চেষ্টা হয়েছিল।’’ কুণালবাবুর মতে, ‘‘সমস্যার মোকাবিলায় কৃতিত্ব দিতে হলে দুর্গাপুজোর সংযত কলকাতাকে দিতে হবে। কিংবা মুম্বইয়ের ধারাভি বস্তি বা কলকাতার বেলগাছিয়ার সচেতনতাকে। এই লড়াই বড়দিন, থ্যাঙ্কসগিভিংয়ের আমেরিকাও পারেনি।’’ সভার মতের হয়ে এই জোরালো সওয়ালে উড়ে গিয়েছে প্রতিপক্ষ।

Coronavirus in West Bengal coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy