গোবরডাঙা হাসপাতাল। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
প্রবীণ পুরপ্রধান উঠে দাঁড়িয়ে জানতে চেয়েছিলেন, তা হলে এলাকায় ফিরে কী বলবেন?
উত্তর মিলল, ‘‘বলে দেবেন, হবে না।’’ বসে পড়লেন হতাশ মানুষটি।
গোবরডাঙা হাসপাতাল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান পরিষ্কার হয়েছে মঙ্গলবার, ব্যারাকপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে। কিন্তু গোবরডাঙার পুরপ্রধান তৃণমূলের সুভাষ দত্তের মুখ চুন। এলাকায় ফিরে ‘হবে না’ বলে দেওয়াটা তাঁর পক্ষে খুব সহজ নয়। কারণ, এই বন্ধ হাসপাতালটি ফের চালু করার দাবি দীর্ঘ দিনের। এ নিয়ে আন্দোলন, এমনকী অনশনও হয়েছে।
পুর এলাকা ছাড়াও আশেপাশের ১৫টি পঞ্চায়েতের ৫ লক্ষ মানুষের ভরসা গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতাল।
২০০০ সালে সেটি স্বাস্থ্য দফতরের হাত থেকে জেলা পরিষদের হাতে দেওয়া হয়েছিল। তৃণমূল সরকার আসার পর জেলা পরিষদ এটি চালাবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়। স্বাস্থ্য দফতরও আর দায়িত্ব ফেরায়নি। ফলে কার্যত অনাথ হয়ে গিয়েছে হাসপাতালটি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা আসা বন্ধ করেছেন। ৩০ শয্যার হাসপাতালটিতে আগে ছোটখাট অস্ত্রোপচারও হতো। এখন সে সবও বন্ধ। বহির্বিভাগে একজন মাত্র চিকিৎসক আসেন এখন। তা-ও সপ্তাহের সব দিন পাওয়া যায় না তাঁকে। এলাকার মানুষের বক্তব্য, রাতবিরেতে কিছু হলে এলাকায় একটা ইঞ্জেকশন দেওয়ার লোকও মেলে না।
তাই প্রতিবারই বিভিন্ন ভোটের মুখে হাসপাতালটি চালুর দাবিতে হাওয়া গরম হয় গোবরডাঙায়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। প্রতিশ্রুতি দেন এলাকার নেতারা। মানুষ ভরসায় থাকেন। আর তাই মুখ্যমন্ত্রী ‘না’ বলে দেওয়ার পরে সুভাষবাবুর মতো নেতাদের তাই এখন এলাকায় মুখ লুকিয়ে ঘুরতে হয়। তৃণমূলের নেতারাই এখন বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যত সহজে হাসপাতাল হবে না বলে সবাইকে বলে দিতে বললেন, তা করলে এলাকায় একটা ভোটও আমাদের বাক্সে পড়বে না।’’
এ দিন সেই তুষের আগুনের মতো ধিকিধিকি জ্বলা ক্ষোভের আঁচ পান এলাকার নেতারা। প্রশাসনিক বৈঠকে গোবরডাঙা হাসপাতালের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন বিধায়ক পুলিনবিহারী রায়, পুরপ্রধান সুভাষ দত্তেরা। তাঁদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কথোপকথনের ভিডিও হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে গোবরডাঙাবাসীর কাছে। ট্রেনেও এ নিয়েই আলোচনা। সুভাষবাবুর বাড়িতেও ভিড়। ফোন বাজছে। সকলেরই জিজ্ঞাস্য, তা হলে কি হাসপাতাল নিয়ে কিছুই করার নেই? সুভাষবাবু বলছেন, ‘‘সবই তো জেনেছেন টিভিতে-খবরের কাগজে। নতুন করে আর কী বলব।’’ তেমন মন্তব্য করতে চাননি পুলিনবাবুও।
অন্য যুক্তি ‘গোবরডাঙা পৌর উন্নয়ন পরিষদ’-এর সহ সভাপতি পবিত্রকুমার মুখোপাধ্যায়ের কাছে। বলেন, ‘‘নতুন হাসপাতাল নয়, পুরনো হাসপাতালের সংস্কার চাইছি। মুখ্যমন্ত্রী নতুন হাসপাতাল হবে না বলেছেন। একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। ওনাকে বিষয়টা বোঝানো গেলে কাজ হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy