জেল আগেই ‘সংশোধানাগার’ হয়েছে। ঘেরাটোপের আড়ালে পাথর ভাঙা বা মাটি কাটার মতো হাড়ভাঙা খাটুনির দিনও প্রায় শেষ। কারা-কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বন্দিরা এখন নানা রকম হাতের কাজের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। পাল্লা দিয়ে জেলগুলিও নিত্যনতুন আয়ের পথ খুঁজছে। আর তাতেই ‘উন্নয়ন তহবিল’-এর আয় বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
ওই টাকায় কী করে কারা দফতর?
এক কারাকর্তা জানাচ্ছেন, বন্দিদের হাতেকলমে কাজ শেখানোর উপরে জোর দিয়েছে সরকার। কলের মিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি কিংবা ইলেকট্রিকের কাজ শেখানোর মতো বিবিধ পেশার প্রশিক্ষণ চলে বছরভর। সেই খরচ চলে তহবিলের আয়ে। সেই সঙ্গে বন্দিদের পরিবারের নানা রকম সামাজিক দায়িত্ব পালন করে কারা দফতর। যেমন বন্দিদের ছেলেমেয়েকে বইখাতা কিনে
দেওয়া, পড়াশোনার খরচ চালানো, বিয়ে, বাবা-মায়ের চিকিৎসা, পারলৌকিক কাজে অর্থ সাহায্য দেওয়া হয় তহবিল থেকে। তহবিলের আয় বাড়ায় এ-সব কাজে আগের চেয়ে অনেক বেশি টাকা বরাদ্দ করতে পারছে কারা দফতর।
কারা দফতর সূত্রের খবর, বছর ছয়েক আগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে উপার্জিত টাকাই ছিল আয়ের একমাত্র পথ। রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী নাটক মঞ্চস্থ করতে এক সময় এক লক্ষ টাকা নিত বন্দিদল। এখন তার পাশাপাশি জেলের তাঁতকলে নিজেদের ও কারাকর্মীদের ইউনিফর্ম বানাচ্ছেন বন্দিরা। কলকাতার নামী স্কুলের পোশাক তৈরির বরাতও আসছে। তাঁতকলেই তৈরি হচ্ছে জিন্স, কুর্তি, রংবেরঙের শাড়ি, বাহারি কার্পেট, গামছা। শৌখিন পোশাক তৈরিরও প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বন্দিরা। ‘‘স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ওই সব সামগ্রী বিক্রি হয় খোলাবাজারে। তা থেকে পাওয়া টাকার একটা অংশ জমা পড়ে উন্নয়ন তহবিলে,’’ বলেন এক কারাকর্তা।
তবে উন্নয়ন তহবিলের আয়ের অধিকাংশই জোগাচ্ছে জেলের ক্যান্টিন। কারা দফতরের সূত্র জানাচ্ছে, স্বনির্ভর গোষ্ঠী পরিচালিত ওই সব ক্যান্টিন আগে লাভের পুরো টাকা নিজেরা নিয়ে নিত। বছর দেড়েক আগে সেই নিয়মে ছেদ টানেন কারা-কর্তৃপক্ষ। বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি বন্দিদের খাবার বেচে যে টাকা আয় করবে, তার ৫০ শতাংশ জমা দিতে হবে উন্নয়ন তহবিলে। এক কারাকর্তার কথায়, ‘‘বিভিন্ন কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে এই খাতে অনেক টাকা পাওয়া যাচ্ছে। সব জেলেই বন্দিদের ধারে খাবার দেওয়ার রেওয়াজ আছে। মাস ফুরোলে বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেন বন্দিরা।’’
কারা দফতরের হিসেব, ২০১৩-’১৪ আর্থিক বছরে ১০ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা জমা পড়েছিল উন্নয়ন তহবিলে। গত বছরে তা বেড়ে হয়েছে ৪২ লক্ষ ১২ হাজার। এ বছর আয় কোটির কাছাকাছি পৌঁছে যাবে বলে আশা করছেন কারাকর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy