পরিচিত বাসচালকের হাত দিয়ে শ্বশুরবাড়িতে কিছু পাঠাতে চান। তাই ফোন করেছিলেন। বাস তখন ঝোড়ো গতিতে চলছে। মাত্র ২৯ সেকেন্ড। তার পরেই মুর্শিদাবাদের বালির ঘাট সেতু থেকে বাস পড়ল ভাণ্ডারদহ বিলে। বিলের জল ঠেলে চালক, ডোমকলের সেন্টু বিশ্বাস আর উঠতে পারেননি। দুর্ঘটনার বলি ৪৪।
নদিয়ার করিমপুর থেকে বহরমপুর ছুঁয়ে মালদহ পর্যন্ত যেত বাসটা। সোমবার সকালে বহরমপুর যাওয়ার পথেই আসে ওই ফোন। ও প্রান্তে যিনি ছিলেন, তাঁর শ্বশুরবাড়ি করিমপুরে। সেন্টু যেন যাওয়ার পথে তাঁর কাছ থেকে জিনিসটা নিয়ে যান, সেই আর্জি নিয়েই ফোন।
দূরপাল্লার বাসে চেনা চালক বা কন্ডাক্টরের হাতে এটা-ওটা পাঠানো জেলার শহর-গাঁ-মফস্সলের দস্তুর। ফোনের ও প্রান্তের লোকটি তাই অন্যায্য কিছু চাননি। বাস তখন কোথায়, কতক্ষণে বহরমপুরে ঢুকবে, সেটা জেনে নিতে চাইছিলেন। সে চাওয়ায় যে এত বড় বিপদ হবে, তা তিনি কী করে বুঝবেন! ওই সময়ে চালকের একটি আসন পিছনে বসেছিলেন হোগলবেড়িয়ার সাধন মণ্ডল। জলে পড়েও তিনি বেঁচে যান। তিনি জানান, দুর্ঘটনার ঠিক আগের মুহূর্তে চালককে তিনি ফোনে বলতে শোনেন, ‘বালির ঘাট পৌঁছে গিয়েছি। আর দশ মিনিটে বহরমপুরে ঢুকব।’ তার মধ্যেই বাসটা বাঁক নিয়ে সেতুর ডান দিকে সরে যাচ্ছিল। সাধন চিৎকার করে বলেন, ‘‘বাস ঝাঁকুনি খাচ্ছে আর আপনি মোবাইলে কথা বলছেন!’’ এই বলতে-বলতেই বাসটা রেলিং ভেঙে জলে পড়ে যায়।
সন্ধ্যায় বাস তুলে বহরমপুর থানায় রাখা হয়। তিনটি মোবাইল মেলে। তার কোনওটি চালকের কি না, তা শুক্রবার জানা যায়নি। আগেই পুলিশ সেন্টুর ফোন নম্বর জোগাড় করে ‘কল লিস্ট’ বের করে। দেখা যায়, দুর্ঘটনার ঠিক আগে শেষ ফোনের ‘কল লোকেশন’ বালির ঘাট। ফোন আসে সকাল ৭টা ৪ মিনিটে। কথা হয় ২৯ সেকেন্ড। বহরমপুরের ওই ব্যক্তিকে ডেকে কথা বলে পুলিশ। মুর্শিদাবাদের এসপি মুকেশ কুমার বলেন, “উনিই জানান, করিমপুরে কিছু পাঠাতে চেয়ে সেন্টুকে ফোন করেছিলেন। নিরাপত্তার স্বার্থে ওঁর পরিচয় গোপন রাখছি।” পুলিশকে তিনি জানান, দুর্ঘটনা যে ঘটেছে তা বুঝতে পারেননি। বাসের অপেক্ষায় ছিলেন। সকাল সাড়ে ৭টা এবং সাড়ে ৮টা নাগাদ ফোন করে দু’বারই শোনেন, ‘ফোন ব্যস্ত।’ এর পর খবর আসে দুর্ঘটনার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy