Advertisement
০১ মে ২০২৪
Neelkanth Bird

কৈলাসে কে দেবে পৌঁছ-সংবাদ, কমছে নীলকণ্ঠ

একসময় দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা নীলকণ্ঠ পাখির পছন্দ খোলামেলা সবুজ ঘাসজমি আর জলা। হাওড়া, হুগলি বা রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে হামেশাই দেখা মিলত ছোট্ট নীলকণ্ঠের।

নীলকণ্ঠ।

নীলকণ্ঠ। ছবি: অভিষেক দাস।

রবিশঙ্কর দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৫০
Share: Save:

যদি সেই দিন আসে তবে কৈলাসে, শিবের কাছে কে বয়ে নিয়ে যাবে পার্বতীর ফেরার খবর?

কল্পনার সে দায়িত্ব অন্য কেউ কাঁধে নিলেও নীলকণ্ঠের কী হবে, তা ভাবনার। বাঙালির আচার আর আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নীলকণ্ঠ পাখি বিপন্ন হয়ে উঠেছে বাংলার মাটিতেই। গত ১২ বছরে নীলকণ্ঠের সংখ্যা কমে গিয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। শুধু নীলকণ্ঠই নয়, মদনটাক, চখাচখি, পুলি শালিক, ধনেশের মতো নানা রকম পাখিই ক্রমেই কমছে এ রাজ্যে। শুধু রাজ্যেই নয়, দেশেও পরিচিত অনেক পাখির সংখ্যাই কমেছে এই এক যুগে।

একসময় দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা নীলকণ্ঠ পাখির পছন্দ খোলামেলা সবুজ ঘাসজমি আর জলা। হাওড়া, হুগলি বা রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে হামেশাই দেখা মিলত ছোট্ট নীলকণ্ঠের। ঘাসপোকা খুটে খেয়েই জীবন। কিন্তু নগরায়ন ও জলা ভরাটের কারণে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তার জেরেই নীলকণ্ঠকে বিপদগ্রস্ত বলে মনে করছেন
পাখি পর্যবেক্ষকেরা। তবে শুধু নীলকণ্ঠই নয়, এই হিসেবে রাজ্যে ২০ টি প্রজাতির জরুরি সংরক্ষণের প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে বাংলার চারটি ‘ইয়েলো ব্রেস্টেড বান্টিং’, ‘রুফাস নেকড হর্নবিল’, ‘ব্রাউন উইংড কিংফিশার’, ‘গ্রেট প্যারটবিল’ অতিসংকটাপন্ন বলে চিহ্নিত হয়েছে। বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অবশ্য বলেন, ‘‘নীলকণ্ঠ-সহ কয়েকটি প্রজাতি কমেছে। রাজাভাতখাওয়ায় প্রজননের
ব্যবস্থা হচ্ছে।’’

গত ৩ বছর ধরে দেশের ৩০ হাজার পর্যবেক্ষকের তিন কোটি অনুসন্ধান রিপোর্ট জমা পড়েছে ‘স্টেট অব ইন্ডিয়াস বার্ড- ২০২৩’-এর কাছে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কমবেশি ১৩ টি সংগঠনের অংশগ্রহণ ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। ‘বার্ড ওয়াচার সোসাইটি’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কণাদ বৈদ্যের কথায়, ‘‘বিভিন্ন প্রজাতির পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রাথমিক কিছু কারণ শনাক্ত করা গেছে। তবে নীলকণ্ঠের এই বিপন্নতা কেন, তা সবিস্তার পর্যালোচনা করা হবে।’’ তাঁর আবেদন, ‘‘সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তিগত ভাবে সংগৃহীত তথ্য সংরক্ষণে সকলকে যত্নবান হতে হবে। তাহলেই কারণগুলি বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা যাবে।’’

ভারতের প্রায় ১৩০০ পাখির মধ্যে ৯৪২ টিকে এ বারের এই পর্যবেক্ষণে পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে ১৭৮ টি প্রজাতির পাখিকে জরুরি ভিত্তিতে সংরক্ষণের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। মাত্র তিন বছর আগে এই বন্ধনীতে চিহ্নিত ছিল ১০১ টি প্রজাতি। গোটা ভারতে দ্রুত কমছে খুন্তে হাঁস, জংলী খঞ্জনা, খৈরি, টেরেক স্যান্ডপাইপার (কুশিয়া বালুবাটান), লিটল রিংড্ প্লোভার (জিরিয়া), স্পট-উইংগড্ স্টারলিং (পুলি শালিক), গ্রেট গ্রে শ্রাইক ( দুধ লাটোরা)।

কয়েক প্রজাতির এই বিপন্নতার মধ্যে ময়ূর বা কোকিলের মতো প্রজাতির বৃদ্ধি অবশ্য যথেষ্ট সন্তোষজনক। পর্যবেক্ষকদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশে ময়ূরের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দেড়শো শতাংশ। তাতে এ রাজ্যের সংখ্যাও ঊর্ধমুখী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Bird
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE