Advertisement
২০ মে ২০২৪

আপত্তি উড়িয়ে প্রার্থী সেই চুরিতে অভিযুক্ত সোহরাব

শ্রমমন্ত্রীর কথা কার্যত নস্যাৎ করে চুরিতে অভিযুক্ত বিধায়ক সোহরাব আলিকে আসানসোল পুরভোটে প্রার্থী করল তৃণমূল। বুধবারই তিনি ৮২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন। একই কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা করেছেন তাঁর স্ত্রী নার্গিস বানোও।

প্রতিদ্বন্দ্বী। মনোনয়ন জমা দিচ্ছেন সোহরাব আলি। পাশে তাঁর স্ত্রী নার্গিস। একই কেন্দ্রে তিনি দাঁড়িয়েছেন নির্দল প্রার্থী হয়ে। ছবি:শৈলেন সরকার।

প্রতিদ্বন্দ্বী। মনোনয়ন জমা দিচ্ছেন সোহরাব আলি। পাশে তাঁর স্ত্রী নার্গিস। একই কেন্দ্রে তিনি দাঁড়িয়েছেন নির্দল প্রার্থী হয়ে। ছবি:শৈলেন সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৭
Share: Save:

শ্রমমন্ত্রীর কথা কার্যত নস্যাৎ করে চুরিতে অভিযুক্ত বিধায়ক সোহরাব আলিকে আসানসোল পুরভোটে প্রার্থী করল তৃণমূল। বুধবারই তিনি ৮২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন। একই কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা করেছেন তাঁর স্ত্রী নার্গিস বানোও।

রেলের যন্ত্রাংশ চুরির মামলায় দু’বছর কারাদণ্ড হলেও উচ্চ আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়েছেন রানিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সোহরাব। এই পরিস্থিতিতে যদি দল তাঁকে পুরভোটে প্রার্থী কর বে কি না, তা নিয়ে দলে যথেষ্ট জল্পনা ছিল। কেননা তৃণমূলের একটি অংশের আশঙ্কা ছিল, সোহরাবকে প্রার্থী করলে দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি হবে। দু’দিন আগে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী তথা আসানসোল উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক মলয় ঘটক বলেই দেন, সোহরাবকে পুরভোটে দাঁড় করানোর কথা তাঁরা ভাবছেন না।
সেই দাবি যে কতটা অসার, এ দিন তা প্রমাণ হয়ে গেল।

কেন সোহরাবকে প্রার্থী করা হল?

স্পষ্ট ব্যাখ্যা মেলেনি কোনও তরফেই। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আসানসোলে কাকে প্রার্থী করা হবে বা হবে না, তা নিয়ে রাজ্যস্তরে কোনও আলোচনা হয়নি।’’ রাজ্য নেতৃত্বের তরফে বর্ধমান জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এখন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পাহাড় সফরে। তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।
তবে তৃণমূল সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রার্থীদের প্রতীক বণ্টনের দায়িত্ব স্থানীয় নেতৃত্বের হাতেই ছিল।

কী বলছেন আসানসোলের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা মলয়বাবু?

শ্রমমন্ত্রী গোড়ায় দাবি করেছিলেন, ৮২ নম্বরে কে দাঁড়িয়েছেন, তা তাঁর জানা নেই। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, তাঁদের না জানিয়েই সোহরাব দলীয় প্রতীকে মনোনয়ন জমা দিয়ে দিলেন? মনোনয়ন জমা দিয়ে বেরিয়ে সোহরাব নিজেও দাবি করেন, ‘‘দল বলেছে বলেই আমি ৮২ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী হয়েছি।’’ পরে মলয়বাবু বলেন, ‘‘ওই এলাকায় প্রার্থী দেওয়ার দায়িত্ব আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়কের ছিল। কেন কাকে দাঁড় করিয়েছেন, তিনিই বলতে পারবেন।’’ সেই বিধায়ক তথা আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, সোহরাবকে প্রার্থী না করার কোনও নির্দেশ দলের তরফে তাপসবাবুকে দেওয়া হয়নি। তাপস-মলয় সংঘাতের ইতিহাস আসানসোলের তৃণমূল কর্মী মাত্রেই জানেন। তবে তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, আসলে তাপসবাবুদের হাত-পা বাঁধা। বার্নপুরের যে ওয়ার্ডের জন্য সোহরাবের মনোনয়ন, তা ছাড়াও পাশে আরও চার-পাঁচটি ওয়ার্ডে তাঁর প্রভাব আছে। প্রথমে যে প্রার্থিতালিকা তৈরি হয়, তাতে সোহরাবের নাম ছিল না। বরং তাঁর স্ত্রীকে দাঁড় করানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সোহরাব তা মানেননি।
তাঁর চাপের কাছে নতিস্বীকার করেন নেতারা।

সোহরাবের জনপ্রিয়তায় যে ভাটা পড়েনি, তার প্রমাণ দিতে মনোনয়ন জমার সময়েই কয়েকশো অনুগামী তাসা-ব্যান্ড নিয়ে এসে হইচই জোড়েন। বিরোধীরা অবশ্য এই ‘জনপ্রিয়তা’র অন্য ব্যাখ্যা করছেন। ২০১১-র বিধানসভা ভোটের আগেই সোহরাবের বিরুদ্ধে লোহাচুরিতে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে পোস্টার দেয় সিপিএম। দলের প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীর কটাক্ষ, ‘‘সোহরাবের মতো কিছু লোকের টাকাতেই তো ভোট করে তৃণমূল। তাদের প্রার্থী না করে, কথা না শুনে উপায় কী?’’

সোহরাবের স্ত্রী নার্গিস হঠাৎ একই কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াতে গেলেন কেন?

সোহরাব বলেন, ‘‘আমি জানি না। তবে দাঁড়াতে তো পারেই।’’ নার্গিস বলেন, ‘‘আমি এখন কিছু বলব না।’’ তবে তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, কারাদণ্ডে স্থগিতাদেশ মিললেও পরে কোনও আইনি জটিলতা তৈরি হবে কি না, তা নিয়ে দলীয় নেতৃত্ব এখনও নিশ্চিত নন। যদি কোনও জটিলতায় সোহরাবের মনোনয়ন বাতিল হয়, তবে নার্গিসকেই ‘তৃণমূল সমর্থিত নির্দল’ হিসেবে জিতিয়ে আনার চেষ্টা হবে। অন্যথায়, পরে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE