এর শেষ কোথায়!
ছ’মাস ভেন্টিলেশনে থাকা একটি দেড় বছরের মেয়ের চিকিৎসক বাবার আকুতিতে তোলপাড় স্বাস্থ্য ভবন। তাঁর শিশুকন্যার চিকিৎসায় লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে। উন্নতি হয়নি। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর রামচন্দ্র ভদ্র বিভ্রান্ত। স্ত্রীও চিকিৎসক। কিন্তু তাঁদের কী করা উচিত, দিশা দেখাতে পারছেন না চিকিৎসক বন্ধু বা বিশেষজ্ঞ। মেয়ের অবস্থাও দেখতে পারছেন না দম্পতি। স্বাস্থ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে রামচন্দ্রবাবুর প্রশ্ন, ‘‘এর শেষ কোথায়!’’
প্রথম তিন মাস অরুন্ধতী ছিল শহরের দু’টি নামী কর্পোরেট হাসপাতালে। খরচ হয় অন্তত ৩৯ লক্ষ টাকা। উন্নতি হয়নি। পরে হাসপাতাল তাকে বাড়িতেই ভেন্টিলেটরে রাখার পরামর্শ দেন। কেটেছে আরও তিন মাস। প্রতি মাসে খরচ ১ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা!
রামচন্দ্রবাবুর লেখা ২৮ ফেব্রুয়ারির চিঠিটি নাড়িয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্যকর্তাদের। তিনি লিখেছেন, ‘‘মেয়ের ব্রেনস্টেম রিফ্লেক্স নেই, মস্তিষ্কের ইইজি-তে সোজা-সোজা লাইন। শরীরের বাকি রিপোর্ট থেকে চিকিৎসক হিসাবে জানি, কিচ্ছু হওয়ার নেই। কিন্তু হাসপাতাল লিখিত ভাবে ‘ব্রেন ডেথ’ বলতে পারছে না।’’
তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ডাক্তাররা বলছেন, ‘যেন মনে হলো পা-টা একটু নড়ল, বা হয়তো একটু শ্বাস নিয়েছিল!’ শুধু এর ভিত্তিতে ভেন্টিলেশন! কোনও উপায় কি নেই?’’ স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, তাঁরা অসহায়। চিকিৎসকেরা যদি মনে করেন, রোগীর মস্তিষ্কের মৃত্যু হয়েছে তা হলে পরিবারকে জানিয়ে তাকে ভেন্টিলেটর থেকে বার করে দিতে পারেন— এমন নীতি নেই ভারতে। কারণ, এতে রোগীর পরিবার ও চিকিৎসক খুনের দায়ে পড়তে পারেন।
স্বাস্থ্যকর্তাদের ভয় অন্যত্র। তাঁরা মানছেন, আইনের এই ফাঁকের জেরে আর্থিক সুবিধা লোটে কিছু কর্পোরেট হাসপাতাল। রোগী আর নেই জেনেও হাসপাতাল তাঁকে ভেন্টিলেশনে রেখে টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ জমা পড়ে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’য় (এমসিআই)। তাদেরও কিছু করার নেই। এমসিআই-এর অজয়কুমারের বক্তব্য, ‘‘এত স্পর্শকাতর মেডিকো-লিগাল বিষয়ের জন্য সর্বোচ্চ স্তরে আইন প্রণয়ন দরকার।’’
স্বাস্থ্য দফতরের অতিরিক্ত স্বাস্থ্যঅধিকর্তা অদিতি কিশোর সরকার জানাচ্ছেন, শুধু মরণোত্তর অঙ্গদানের ক্ষেত্রে ভেন্টিলেটরে থাকা রোগীর মস্তিষ্কের মৃত্যু ঘোষণা করতে পারে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের বৈধ ব্রেনডেথ ডিক্লেয়ার কমিটি। এ ছাড়া এমন কোনও আইন নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy