Advertisement
E-Paper

এক দিনের ডাক্তার তিন খুদে, আড়ালে কাঁদলেন মায়েরা

আশৈশব শরীরে বাসা বাঁধা রোগ ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছে। তাতে কী, কল্পনার আকাশে ইচ্ছের ডানা মেলতে তো কোনও বাধা নেই!

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৬ ১৯:১০
তিন খুদে।— নিজস্ব চিত্র।

তিন খুদে।— নিজস্ব চিত্র।

আশৈশব শরীরে বাসা বাঁধা রোগ ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছে। তাতে কী, কল্পনার আকাশে ইচ্ছের ডানা মেলতে তো কোনও বাধা নেই!

কখনও পিঁপড়ে, আবার কখনও বিড়ালকে রোগী বানিয়ে ঘন্টার পর ঘণ্টা চলে ডাক্তারি-ডাক্তারি খেলা। স্বপ্নিল তার দু’টো চোখ। ‘‘বড় ডাক্তার হতে চাই। প্রেসক্রিপশন লিখব, ওষুধ খাওয়াবো। জানো, আমাকে ডাক্তার দিদিও ওই ভাবে আমাকে দেখে, কত ভালবাসে,’’ বলছে শ্রীরামপুরের সৌমজিৎ কোলে। এখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। জীবন তাকে, বলা ভাল তার রোগ সৌমজিৎকে ডাক্তার হতে দেবে কি না, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ, ছ’মাস বয়স থেকে সে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত।

তাই, পাছে যদি দেরি হয়ে যায় সেই ইচ্ছে পূরণের! আর দেরি না করে সত্যি সত্যিই ডাক্তার বানানো হল সৌমজিৎকে। এক দিনের জন্য।

ওর সঙ্গেই ডাক্তার হল আরও দু’জন। খড়্গপুরের অঙ্কিতা মণ্ডল ও হাওড়ার অর্ঘ্যকমল সরকার। অঙ্কিতা নবম শ্রেণির ও অর্ঘ্যকমল অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। সৌমজিতের মতো ওরাও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। আবার সৌমজিতের মতো ওদেরও দু’জনের চোখে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ঝিলিক দিচ্ছে।

একটি স্বেচ্ছ্বাসেবী সংস্থার উদ্যোগে পার্ক স্ট্রিটে নেতাজি সুভাসচন্দ্র বসু ক্যানসার রিসার্চ ইন্সটিটউটে শনিবার সকালে হাজির খুদে ডাক্তারের দল। রীতিমতো গলায় স্টেথো ঝোলানো, গায়ে সাদা অ্যাপ্রন। সঙ্গে অবশ্য তাদের অভিভাবকেরা।

অঙ্কিতা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘দেখো তো মা, আমাকে কেমন লাগছে?’’ ছলছলে চোখেও হেসে মা দীপা মণ্ডল বলেন, ‘‘খুব ভাল লাগছে।’’ আর অর্ঘ্য তো ভেবে আকুল, অ্যাপ্রনটা সে কী ভাবে পরবে, তা নিয়ে। বাবা অপূর্ব সরকারকে সে বার বার জিজ্ঞেস করছে, ‘‘আচ্ছা, অ্যাপ্রনের উপরের বোতামটা খুলে রাখবো, নাকি আটকাব? কোনটা ভাল লাগবে বাবা? বলো না তাড়াতাড়ি।’’

ডাক্তারের সাজগোজ না হয় হল। কিন্তু রোগী কোথায়? সে ব্যবস্থাও করে দিলেন হাসপাতালের চিকিৎসক আশিস মুখোপাধ্যায়। হাসপাতালে যাঁরা ভর্তি, তাঁদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেওয়া হয় এই ‘নতুন ডাক্তারদের’। আগ্রহ নিয়ে ‘চিকিৎসা’ করাতে এগিয়ে এলেন রোগীরা। খুদে ডাক্তাররা তাঁদের বুকে স্টেথো লাগিয়ে বলল, ‘‘জোরে জোরে শ্বাস নিন।’’ জিজ্ঞেস করল, ‘‘কী, খাওয়া দাওয়া করছেন তো ঠিক মতো!’’ রোগী দেখে কায়দা করে প্রেসক্রিপশনও লিখল ডাক্তাররা।

কিছুই না, জটিল রোগে আক্রান্ত ওই কিশোর-কিশোরীদের মনের ইচ্ছেপাখিটাকে উড়তে দেওয়া। শরীর সারবে কি না পরের কথা, মনটা তো তাদের ভাল থাকবে!

কী ভাবে চলে ইচ্ছের খোঁজ?

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির কলকাতা শাখার প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর সাহানা সেন জানান, স্বেচ্ছাসেবকেরা হাসপাতালে নিয়মিত পরিদর্শনে যান। যে সব নাবালক-নাবালিকা জটিল রোগে আক্রান্ত তাদের কী নিতে, কোথায় যেতে, কার সঙ্গে দেখা করতে এবং বড় হয়ে কী হতে ইচ্ছে, এই চারটি প্রশ্ন করা হয়। সেই মতো চেষ্টা করা হয় ইচ্ছেপূরণের।

যেমন, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হুগলির আকাশ দেবনাথের ইচ্ছে ভাল ক্রিকেট ব্যাট পাওয়ার। তার স্বপ্নের ক্রিকেটার বিরাট কোহলি। আকাশের হাতে শনিবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে শুধু ক্রিকেট ব্যাট নয়, তুলে দেওয়া হল ক্রিকেটের আরও নানাবিধ সরঞ্জাম।

যাতে আকাশের ব্যাটের তেজে বলটা যাবতীয় অনিশ্চয়তার বাউন্ডারি লাইনকে টপকে যেতে পারে।

doctor kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy