Advertisement
E-Paper

কলকাতার তিন হাসপাতাল ফেরাল কিশোরকে

গরিব মানুষের জন্য নিখরচায় উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা— বারবারই এই প্রতিশ্রুতি দেন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্ঘটনায় মাথায় চোট পাওয়া বছর সতেরোর ছেলেটির পরিজনেরা ভেবেছিলেন, কলকাতার বড় হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভাল চিকিত্‌সা হবে।

সোমা মুখোপাধ্যায় ও বরুণ দে

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৫২
মেদিনীপুর মেডিক্যালে শ্যামল মণ্ডল। পাশে মা সন্ধ্যাদেবী। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

মেদিনীপুর মেডিক্যালে শ্যামল মণ্ডল। পাশে মা সন্ধ্যাদেবী। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

গরিব মানুষের জন্য নিখরচায় উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা— বারবারই এই প্রতিশ্রুতি দেন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্ঘটনায় মাথায় চোট পাওয়া বছর সতেরোর ছেলেটির পরিজনেরা ভেবেছিলেন, কলকাতার বড় হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভাল চিকিত্‌সা হবে। কিন্তু সারা রাত মহানগরীর তিন হাসপাতাল ঘুরে অন্য অভিজ্ঞতা নিয়ে মেদিনীপুরে ফিরলেন শ্যামল মণ্ডলের পরিজনেরা। তিন হাসপাতালের কোথাও ঠাঁই হল না ওই কিশোরের!

বুধবার কেশপুরের বাস দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শ্যামল। মেদিনীপুর মেডিক্যাল থেকে তাকে ‘রেফার’ করা হয় এসএসকেএমে। কিন্তু সেখানে জায়গা হয়নি। পরে এনআরএস এবং বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজিতে গিয়েও শুনতে হয়েছে, ‘বেড নেই। রোগীকে ভর্তি নেওয়া যাবে না।’ বৃহস্পতিবার সকালে ফের মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এনেই ভর্তি করানো হয়েছে ওই কিশোরকে। তার মা সন্ধ্যাদেবীর আক্ষেপ, ‘‘সরকারি হাসপাতালে নিখরচায় ভাল চিকিৎসার কথা তো শুনি। কিন্তু তিন-তিনটে হাসপাতাল ঘুরেও ছেলেটাকে ভর্তি করাতে পারলাম না। কেউ কোনও কথাই শুনল না।’’

কিন্তু কেন তাকে ফিরিয়ে দিল কলকাতার তিন হাসপাতাল? এনআরএস কর্তৃপক্ষের যুক্তি, তাঁদের ইমার্জেন্সি নিউরোসার্জারির ব্যবস্থা নেই। মাথায় জমে থাকা রক্ত বার করার জন্য রাতেই অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারত। তাই রাতে মাথায় চোটের রোগীকে ভর্তি করা সম্ভব হয়নি।

এসএসকেএম এবং বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজি কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁদের মেঝেতেও তিল ধারণের জায়গা নেই। তাই নিরুপায় হয়েই রোগী ফেরাতে হয়েছে।

তবে এ ভাবে রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া যে ঠিক হয়নি, তা মানছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রোগীর অবস্থা খুব গুরুতর হলে কোনওভাবেই ফিরিয়ে দেওয়ার কথা নয়। আগে তাকে স্থিতিশীল করা জরুরি ছিল।’’ এ ক্ষেত্রে কেন ছেলেটিকে কোনও চিকিৎসা না দিয়ে আবার অত দূর ফেরত পাঠানো হল, তা খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন সুশান্তবাবু।

এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে, ইমার্জেন্সি নিউরোসার্জারির ব্যবস্থা যদি না-ও থেকে থাকে, তা হলে রাতে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারকে ডেকে এনে সেই ব্যবস্থা কি করা যেত না? না হলে পরিকাঠামো না থাকায় তো এ ভাবে রোগী প্রত্যাখান চলতেই থাকবে! স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, শুধু ডাক্তার ডেকে এনে এই ধরনের অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়, এর জন্য পূর্ণাঙ্গ টিম দরকার। রাতের বেলায় আচমকা এই ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়।

কেন কলকাতায় আসার দরকার পড়ল শ্যামলের? জেলায় বসেই যাতে আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবার সুযোগ মেলে, সেই লক্ষ্যে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ে তুলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ইতিমধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরে চালুও হয়ে গিয়েছে নয়াগ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। নিয়মমাফিক সেখানেই সব বিষয়ে ‘স্পেশ্যালাইজড’ চিকিৎসা হওয়ার কথা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, আপাতত সেখানে চালু হয়েছে শুধুই আউটডোর। ইমার্জেন্সিটুকুও নেই। হাসপাতালের দোরে দোরে ঘুরে প্রত্যাখ্যানের এই ঘটনার পরে তাই বড় হয়ে উঠছে একটি প্রশ্ন— ডাক্তার না থাকা সত্ত্বেও জেলায় জেলায় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল খোলা হচ্ছে কীসের ভিত্তিতে? তার সদুত্তর অবশ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে নেই।

বুধবার দুপুরে কেশপুরের বুড়াপাট পাঁচখুরিতে বেসরকারি বাসের চাকা খুলে উল্টে যায়। মৃত্যু হয় ৯ জনের। আহত প্রায় ৬০ জন। এঁদেরই এক জন কেশপুরের ঘোষডিহা হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র শ্যামল। তার মাথায় আঘাত রয়েছে দেখে প্রাথমিক চিকিত্‌সার পরে তাকে এসএসকেএমে ‘রেফার’ করেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ। অভাবের পরিবারে কলকাতায় যাওয়ার টাকাটুকুও ছিল না। শেষে পুলিশ অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে দেয়। বুধবার রাত ১১টা নাগাদ মেদিনীপুর থেকে রওনা হয় শ্যামল। কলকাতায় তিনটি হাসপাতাল ঘুরে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা নাগাদ ফের মেদিনীপুর মেডিক্যালে ফিরিয়ে আনা হয় শ্যামলকে।

teenager hospital soma mukhopadhay barun dey
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy