Advertisement
E-Paper

লাইনে ৩টি দেহ, পাশে তাজা রক্ত

মঙ্গলবার ভোরে এমন দৃশ্য দেখে চোখের জল চাপতে পারছিলাম না। এই হাতিরাই আমাদের এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় ফসলের ক্ষতি করে, ঘর ভাঙে। কিন্তু ওদের দোষ দিয়ে কী লাভ। দোষ তো মানুষের। আমরাই তো ওদের গতিপথ সঙ্কুচিত করে দিয়েছি। 

বাপি মাইতি (ডুমুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা)

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৮ ০১:০২
নিথর: রেললাইন থেকে সরানো হচ্ছে হাতির দেহ। ঝাড়গ্রামের জামবনিতে। ইনসেটে বাপি মাইতি। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

নিথর: রেললাইন থেকে সরানো হচ্ছে হাতির দেহ। ঝাড়গ্রামের জামবনিতে। ইনসেটে বাপি মাইতি। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

রেল লাইনের দু’ধারে পড়ে নিথর দু’টি হাতির দেহ। বেশ কিছুটা দূর পর্যন্ত রক্তের টাটকা দাগ। আর প্রায় দুশো মিটার দূরে রেল লাইনের মাঝে দলা পাকানো হস্তিশাবকের দেহ।

মঙ্গলবার ভোরে এমন দৃশ্য দেখে চোখের জল চাপতে পারছিলাম না। এই হাতিরাই আমাদের এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় ফসলের ক্ষতি করে, ঘর ভাঙে। কিন্তু ওদের দোষ দিয়ে কী লাভ। দোষ তো মানুষের। আমরাই তো ওদের গতিপথ সঙ্কুচিত করে দিয়েছি।

ঝাড়খণ্ড লাগোয়া আমাদের গ্রাম। গ্রামের দক্ষিণ দিকে রেল লাইনের ধারের জঙ্গল চলে গিয়েছে ঝাড়খণ্ডের কানিমহুলি পর্যন্ত। আর উত্তর দিকে আমাদের গ্রাম ডুমুরিয়া। তারপর ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া ঝাড়গ্রাম জেলার শেষ গ্রাম ঢ‍্যাংবহড়া। দু’দিনের প্রবল বৃষ্টিতে গোটা গ্রাম কার্যত ঘরবন্দি ছিল। তাই সোমবার রাতে এলাকার জঙ্গলে হাতি আসার ব্যাপারে টের পাননি বাসিন্দারা। রাত দেড়টা নাগাদ রেল লাইনের দিকে একটা ভীষণ জোরে ধপ শব্দ শুনে প্রথমে বিষয়টাকে ঠাহর করতে পারিনি। গ্রামের এক-দু’জন রাত জেগে বানভাসি পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়া ঠেকাতে নজরদারি করছিলেন। তারাই শব্দ পেয়ে প্রথমে ছুটে যান। কিছু পরে আমিও যাই। জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের তলায় শাবকের দেহটি দলা পাকিয়ে আটকে ছিল।

আমাদের এলাকার জঙ্গলে প্রায়ই হাতি আসে। গত বছরও গ্রামে ঢুকে হাতি ধান খেয়েছিল। তবে কোনওদিন হাতি রেললাইন পেরোয়নি। আর এমন মৃত্যুও দেখিনি।

এ দিন মৃত হাতির কপালে সিঁদুর দিয়ে, ফুল দিয়ে প্রণাম করেছেন অনেকে। গিধনি ভূমি দফতরের ঠিকা সাফাইকর্মী মঞ্জু মাহাতোর মতো অনেকে আবার মৃত হাতির লোম সংগ্রহ করেছেন। প্রচলিত বিশ্বাস, হাতি ঠাকুরের লোম দিয়ে মাদুলি করে পরলে মঙ্গল হয়।

ট্রেনের কয়েকজন যাত্রী মৃত হাতি দেখতে নেমেছিলেন। খুঁটি ভেঙে ওভারহেড তার ছিঁড়ে যাওয়ায় ডিজেল ইঞ্জিন এনে ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ট্রেনটি গন্তব্যে চলে যায়। ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার ওঁরা আর ট্রেনে উঠতে পারেননি। অথচ মালপত্র ট্রেনে। এমনই এক মহিলা-সহ ছ’জন যাত্রীকে বুদ্ধদেব মাইতি, শানু মাইতি, সিভিক ভলান্টিয়ার টিঙ্কু মহাপাত্রেরা গাড়িতে ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়া স্টেশনে পৌঁছে দেন। কিন্তু সেখানে জ্ঞানেশ্বরী থামে না। অগত্যা তাঁরা বাসে জামশেদপুর রওনা দেন।

Elephant Jhargram ঝাড়গ্রাম হাতি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy