Advertisement
E-Paper

ফের ধর্ষণ-সালিশিতে অভিযুক্ত তৃণমূল

ধর্ষণে অভিযুক্তকে বাঁচাতে সালিশি সভা বসানোর অভিযোগ ফের উঠল শাসকদলের বিরুদ্ধে। এ বার ঘটনাটি ঘটল খোদ বনমন্ত্রীর বাড়ির এলাকায়। অভিযোগের তির মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ দুই তৃণমূল নেতার দিকে। তাঁদের একজন তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৫ ০৪:০৯
তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য দীনেশ বর্মন। — নিজস্ব চিত্র।

তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য দীনেশ বর্মন। — নিজস্ব চিত্র।

ধর্ষণে অভিযুক্তকে বাঁচাতে সালিশি সভা বসানোর অভিযোগ ফের উঠল শাসকদলের বিরুদ্ধে। এ বার ঘটনাটি ঘটল খোদ বনমন্ত্রীর বাড়ির এলাকায়। অভিযোগের তির মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ দুই তৃণমূল নেতার দিকে। তাঁদের একজন তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য। তাঁর উপস্থিতিতে সালিশি সভায় নির্যাতিতা বধূ ও তাঁর পরিবারের উপর থানা থেকে অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য চাপ তৈরি করা হয়, এই গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে বুধবার, ঘটনার প্রায় ১৮ দিন পরে, অভিযোগ দায়ের করে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

কোচবিহারের এসপি রাজেশ যাদব বলেন, “এ দিনই ঘটনা জানতে পেরে মামলা রুজু করার নির্দেশ দিই। থানা অভিযোগ নেয়নি বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। সালিশি সভা নিয়েও তদন্ত শুরু করা হয়েছে।”

বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “ওই ঘটনা আমি জানি না। কলকাতায় ছিলাম। তবে কোনও মামলার সালিশি করতে স্পষ্ট নিষেধ করা হয়েছে দলের পঞ্চায়েত সদস্যদের।” তবে তাঁরই দলের পঞ্চায়েত সদস্য দীনেশ বর্মন সালিশি সভায় নিজের উপস্থিতি নিয়ে কোনও রাখঢাক করছেন না। বিরোধীদের অভিযোগ, বনমন্ত্রীর বাড়ির কাছের ঘটনা বলে দল তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।

ধর্ষণ ও সালিশির ঘটনাস্থল ঘোকসাডাঙা থানার রুইডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের রামঠ্যাঙা এলাকা। রামঠ্যাঙাতেই বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনের বাড়ি। অভিযুক্ত দুই নেতার নাম দীনেশ বর্মন এবং অনুকূল বর্মন। দীনেশ শাসক দলের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য। পুলিশ সূত্রের খবর, ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে ৩ মে। ওই মহিলার অভিযোগ, স্বামীর অনুপস্থিতিতে ঘরে ঢুকে প্রতিবেশী যুবক পরিমল বর্মন তাঁকে ধর্ষণ করেন। তিনদিন পরে স্বামীকে সব জানান। তাঁরা ৬ মে ঘোকসাডাঙা থানায় যান। কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার থানা সালিশির মাধ্যমে সব মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে ওই দম্পতি পুলিশ সুপারের অফিসে গিয়ে থানার ভূমিকা জানিয়ে ধর্ষণের অভিযোগপত্র জমা দেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, সুপারের দফতর থেকে রুটিনমাফিক অভিযোগটি আসে ঘোকসাডাঙা থানায়। নড়েচড়ে বসে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। গত সোমবার সকালে নির্যাতিতার বাড়ির পাশেই সালিশি সভা বসে। অভিযোগ, সেখানে পুলিশের থেকে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ তৈরি করা হয়। ওই মহিলার স্বামী তাঁর স্ত্রীর প্রতি সন্দেহবশত তাঁকে দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করিয়েছিলেন, এই মর্মে ‘সালিশিনামা’ তৈরি করা হয়। তাতে মহিলা ও তাঁর স্বামীকে সই করানো হয়। পরে তা থানাতে জমা দিতেও বাধ্য করা হয় তাঁদের। ঘোকসাডাঙা থানার পুলিশ দাবি করেছে, ওই পরিবারের তরফে কোনও সালিশিনামা জমা পড়েনি। তবে নির্যাতিতার স্বামী বলেন, “স্ত্রীকে নিয়ে গিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাই। পরে বিষয়টি সালিশিতে মিটিয়ে নিতে হয়েছে। মামলা তুলতে সালিশির বিষয়টি থানায় জানিয়েছি।”

এ দিন নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যরা কোনও কথাই বলতে চাননি। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নারায়ণ সরকারের অভিযোগ, ওই পরিবারের লোকদের চাপ দিয়ে তৃণমূল নেতারা মামলা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁর সন্দেহ, ‘‘মন্ত্রীর বাড়ি থেকে আধ কিলোমিটারের মধ্যে ওই ঘটনা ঘটেছে। সে জন্য তা তুলে নেওয়ার জন্য তৃণমূল নেতারা অসম্ভব চাপ তৈরি করছেন।” সালিশির বিষয়টি বুধবার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হতে পুলিশ সুপার বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর করেন। তাঁর দফতরে জমা-পড়া অভিযোগটিও দেখেন। তাঁর নির্দেশে মামলা করে অভিযুক্তকে ধরা হয়। ধর্ষণে সালিশি বসল কেন, কেনই বা ঘোকসাডাঙার পুলিশ অভিযোগ নিল না, প্রশ্ন করলে মাথাভাঙার এসডিপিও গণেশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ তদন্ত চলছে।’’

coochbehar ghoksadanga coochbehar kangaroo court forest minister binoy krishna burman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy