Advertisement
০২ মে ২০২৪

দলবদলে ভুল বুঝবেন না, আর্জি ছায়াদেবীর

তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র বদল হয়নি। তবে দলবদল হয়েছে। গত বিধানসভা ভোটে পরিবর্তনের ঝড়েও ঘাসফুল শিবিরের প্রার্থীকে হেলায় হারিয়েছিলেন ছায়া দোলই। এ বার অবশ্য লড়াইটা কঠিন। শাসকদলের কোন্দল সামলে চন্দ্রকোনা দখলে রাখাই চ্যালেঞ্জ বিদায়ী বিধায়ক ছায়াদেবীর। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে চন্দ্রকোনায় সিপিএম প্রার্থী হিসেবে লড়েছিলেন ছায়াদেবী।

ভোট প্রচারে তৃণমূল প্রার্থী ছায়া দোলই। রবিবার ক্ষীরপাই বাজারে। নিজস্ব চিত্র।

ভোট প্রচারে তৃণমূল প্রার্থী ছায়া দোলই। রবিবার ক্ষীরপাই বাজারে। নিজস্ব চিত্র।

অভিজিৎ চক্রবর্তী
চন্দ্রকোনা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৬ ০১:০১
Share: Save:

তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র বদল হয়নি। তবে দলবদল হয়েছে। গত বিধানসভা ভোটে পরিবর্তনের ঝড়েও ঘাসফুল শিবিরের প্রার্থীকে হেলায় হারিয়েছিলেন ছায়া দোলই। এ বার অবশ্য লড়াইটা কঠিন। শাসকদলের কোন্দল সামলে চন্দ্রকোনা দখলে রাখাই চ্যালেঞ্জ বিদায়ী বিধায়ক ছায়াদেবীর।

২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে চন্দ্রকোনায় সিপিএম প্রার্থী হিসেবে লড়েছিলেন ছায়াদেবী। চন্দ্রকোনা আসনটি তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় গত বিধানসভা ভোটে রাজনীতিতে আনকোরা ছায়াদেবীকে প্রার্থী করে বামেরা। ওই ভোটে তৃণমূল প্রার্থী শিবরাম দাসকে হারিয়ে বিধায়কও হন তিনি। সিপিএমের এক সূত্রে খবর, গতবার দলের সংগঠনের ওপর ভর করেই জিতে যান ছায়াদেবী। ভোট প্রচার নিয়ে তাঁকে কিছুই ভাবতে হয়নি। বছর কয়েক আগে তৃণমূলে যোগ দেন সিপিএম বিধায়ক ছায়াদেবী। তৃণমূল এ বার তাঁকে ওই কেন্দ্রেই প্রার্থী করেছে। যদিও দলের বিক্ষুব্ধদের নিয়ে চিন্তায় শাসকদলের নেতৃত্ব।

তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, দলের আট জন চন্দ্রকোনায় প্রার্থী হওয়ার দাবিদার ছিলেন। যদিও দলনেত্রী ফের ছায়াদেবীকে প্রার্থী করায় অনেকেই সেটা মেনে নিতে পারেননি। দলের বিক্ষুব্ধ নেতারা ভোটে অন্তর্ঘাত চালাতে পারেন বলেও আশঙ্কা রয়েছে। দলের গোষ্ঠীকোন্দলের কথা ছায়াদেবী দলের রাজ্য নেতৃত্বকেও জানান। ভোটের লড়াই থেকে সরে আসারও ইচ্ছাপ্রকাশ করেন তিনি। সব শুনে কোন্দল মেটাতে হস্তক্ষেপ করেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক জেলা নেতার কথায়, “দিদি নিজে দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায়কে কালীঘাটে ডেকে পাঠান। ছায়া দোলইকে জেতানোরও নির্দেশ দেন তিনি।”

দলীয় সূত্রে খবর, দলনেত্রীর নির্দেশ পেয়েই দীনেনবাবু একাধিকবার চন্দ্রকোনায় এসে সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন। কোন্দল মেটাতে রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে চন্দ্রকোনায় বিভিন্ন নেতা-কর্মীর সঙ্গেও দফায় দফায় বৈঠক করছেন ছায়াদেবীও। যদিও দলনেত্রীর নির্দেশ, দফায় দফায় বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে বৈঠক- কোনও কিছুতেই চিঁড়ে ভেজেনি। ছায়াদেবীর জয় নিয়ে ‘চাপ’ রয়েই গিয়েছে। দলের একাংশ নেতারও প্রশ্ন, দল ঘোষিত প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ তো থাকবেই। গতবার বিধানসভা ভোটে আমরা ছায়াদেবীর বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছিলাম। এ বার তাঁকে জেতানোর কথা সাধারণ মানুষকে আমরা বলব কী করে?

সময় নষ্ট না করে তাই জোরকদমে প্রচারে নেমে পড়েছেন ছায়াদেবী। চন্দ্রকোনা বিধানসভা এলাকায় মোট ৩১৯টি বুথ রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ২২০টি বুথে ইতিমধ্যেই কর্মী বৈঠক করে ফেলেছেন তিনি। কর্মিসভা বা বাড়ি বাড়ি প্রচারে ছায়াদেবী আর্জি জানাচ্ছেন, ‘‘আপনারা আমাকে নয়, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভোট দিন।’’ প্রচারে গিয়ে নিজের দলত্যাগ নিয়েও সাফাই দিচ্ছেন ছায়াদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘চন্দ্রকোনা বিধানসভা সব দিক দিয়েই বঞ্চিত। তাই এলাকার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যেই আমি সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম। এ জন্য আমাকে ভুল বুঝবেন না।’’ তিনি আরও বলছেন, ‘‘আমার কোনও ত্রুটি বা অন্যায় দেখলে আমাকে আপনারা সরাসরি বলুন। কিন্তু আপনারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থাকুন।’’

রোজ সাতসকালেই প্রচারে বেরিয়ে পড়ছেন ছায়াদেবী। রবিবারও চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের একাধিক বুথে প্রচার সারেন তৃণমূল প্রার্থী। চন্দ্রকোনায় শান্তি বধূককে প্রার্থী করেছে সিপিএম। প্রচারে নেমেছেন শান্তিদেবীও। নিজের জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছায়াদেবী অবশ্য বলছেন, ‘‘সিপিএম প্রার্থীর প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করব না। তবে এ বারও আমি জিতব। গতবার এলাকায় সে ভাবে কোনও উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারিনি। এলাকার উন্নয়ন করাই আমার লক্ষ্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

chandrakona chhaya dolui tmc assembly election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE