Advertisement
E-Paper

রাতভর লড়াই, তটস্থ বাহিরি

বড়শিমুলিয়ার পরে এ বার বাহিরি। গ্রাম দখলকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে তেতে উঠল বোলপুর। সোমবার গভীর রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর রাত পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় চলে ব্যাপক বোমবাজি চলে। তবে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনও হতাহতের বা ক্ষয়ক্ষতির দাবি করা হয়নি। যদিও ঘটনাস্থলের একাধিক জায়গায় রক্ত পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৫ ০১:১৯
সোমবার রাতের স্মৃতি বোমার দাগ দেখাচ্ছেন গ্রামবাসী।

সোমবার রাতের স্মৃতি বোমার দাগ দেখাচ্ছেন গ্রামবাসী।

বড়শিমুলিয়ার পরে এ বার বাহিরি। গ্রাম দখলকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে তেতে উঠল বোলপুর। সোমবার গভীর রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর রাত পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় চলে ব্যাপক বোমবাজি চলে। তবে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনও হতাহতের বা ক্ষয়ক্ষতির দাবি করা হয়নি। যদিও ঘটনাস্থলের একাধিক জায়গায় রক্ত পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে।

বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, বহিরাগত দুষ্কৃতী নিয়ে গ্রাম দখল ও হামলা করার সময়ে গ্রামবাসীর প্রতিরোধে কমপক্ষে দু’জন বহিরাগত জখম হয়েছেন। অবস্থা বেগতিক বুঝে লড়াইতে তারা পিছু হটে। পুলিশি তদন্তের দাবি করে এলাকায় শান্তি ফেরানোর আর্জিতে মঙ্গলবার ঘণ্টা দুয়েক বোলপুর-নতুনহাট সড়ক বাহিরী বাসস্টপের কাছে পথ অবরোধ করেন ওই গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। প্রয়োজনীয় তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার পুলিশি আশ্বাসে বেলা সাড়ে ৯টা নাগাদ অবরোধ তুলে নেন অবরোধকারীরা।

পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, গ্রাম দখলকে কেন্দ্র করে এবং এলাকায় শাসকদলের এক গোষ্ঠীর ঘরছাড়াদের গ্রামে ঢোকানোকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ দীর্ঘদিনের। স্থানীয় সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত ভোটের কিছুদিন আগে থেকে শাসকদলের কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ শাহনাওয়াজের ভাই কাজল শেখের সঙ্গে নানুরের তৃণমূল বিধায়ক গদাধর হাজরার গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ ও সংঘর্ষের ঘটনা শুরু হয়। জেলা রাজনীতিতে বরাবর অনুব্রত বিরোধী হিসেবে পরিচিত কাজল শেখ, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে নানুর বিধানসভা কেন্দ্রের আওতায় থাকা বোলপুর ব্লকের প্রায় পাঁচটি পঞ্চায়েতে ক্ষমতা কায়েম রাখে। আর তাতেই বিরোধ বাধে বীরভূমে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (কেষ্ট) ঘনিষ্ঠ নানুরের শাসকদলের বিধায়ক গদাধর হাজরার সঙ্গে। এর জেরে সাম্প্রতিক অতীতে বড় শিমুলিয়া এলাকায় শাসকদলের উভয় গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ ও বোমা-গুলি নিয়ে সংঘর্ষে কাজল শেখ ঘনিষ্ঠ একাধিক মানুষ জখম হন। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ফের লাগোয়া বাহিরীতে শুরু হয়েছে সংঘর্ষ। অভিযোগ শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর শক্তি প্রদর্শনের খেলায় জনজীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে। তাই প্রয়োজনীয় তদন্ত করে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে এ দিনের পথঅবরোধ।


পুলিশ বোমা উদ্ধার করলেও মঙ্গলবার সকালে এলাকার খুদেদের হাতে ঘোরাঘুরি করছিল বোমা।

জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে বাহিরী-পাঁচশোয়া পঞ্চায়েতের বাহিরী গ্রামের উত্তরপাড়া পাটখালি পাড় ক্যানালের ধার ধরে গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করে গদাধর গোষ্ঠীর গ্রামছাড়া তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বেশ কয়েক দিন ধরে তাঁদের কাছে খবর ছিল, বহিরাগত দুষ্কৃতীদের নিয়ে গ্রামে ঢোকানোর চেষ্টা করা হবে ওই গ্রামছাড়াদের। সেই মতো রাত পাহারার চালু করেছিল কাজলের অনুগামীরা। বাসিন্দাদের দাবি, সোমবার রাতে ওই ক্যানালের ধার ধরে বোমা ও গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে দুষ্কৃতী নিয়ে একদল মাঠের দিকে আসে। শব্দ শুনে প্রস্তুত হয় রাত পাহারার দায়িত্বে থাকা কাজল অনুগামীরা।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, উভয়পক্ষের মধ্যে ভোর পর্যন্ত চলা বোমা ও গুলির লড়াইয়ের শব্দে তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বিপক্ষে প্রতিরোধ পড়ে বহিরাগতেরা পিছু হটে। বাসিন্দাদের দাবি, বছর দেড়েক ধরে ওই এলাকায় কোনও অশান্তি গণ্ডগোল ছিল না। আচমকা সোমবার গভীর রাত থেকে গোলমাল শুরু হওয়ায় চিন্তায় রয়েছেন বাসিন্দারা। অবিলম্বে তাঁরা তাই পুলিশের হস্তক্ষেপ দাবি করে সকাল ৭টা থেকে বোলপুর– নতুনহাট সড়ক, বাহিরী বাসস্টপের কাছে অবরোধ শুরু করেন। ঘটনার খবর পেয়ে, পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রায় আড়ই ঘণ্টা পথ অবরোধের জেরে, ওই রাস্তায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন নিত্যযাত্রী থেকে স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা।

জানা গিয়েছে, এক সময়ে কাজল শেখের অনুগামী হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন উত্তম দাস। বাহিরী গ্রামের পূর্ব পাড়ার বাঁশনা পাড়ের বাসিন্দা তৃণমূল কর্মী উত্তম দাস বছর দেড়েক আগে কাজল শেখের সঙ্গে বোঝাপড়া না হওয়ায়, বেরিয়ে আসেন। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, একশো দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠার পরে গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা তাঁকে এবং তাঁর অনুগামীদের মারধর করে এলাকাছাড়া করে দেয়। সেই সময় থেকে উত্তম দাস-সহ বেশ কয়েকজন গ্রামছাড়া হয়ে প্রথমে বিজেপির দিকে ঝোঁকেন। নানুর বিধানসভা এলাকায় কাজল শেখের দখলে থাকা পঞ্চায়েতগুলি থেকে প্রায় হাজার দেড়েক মানুষ গ্রামছাড়া ছিলেন। ওই সমস্ত ঘরছাড়াদের গ্রামে ফেরাতে তৎকালীন পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার কাছে তদ্বির করে বিজেপি। কথাবার্তা এগোতে থাকে। কিন্তু গ্রামে ফেরানোর আগেই, পাড়ুই থানা এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা এবং তার পর জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার বদলি হওয়ায়, সেই কাজ আর এগোয়নি। এরপরে ওই ঘরছাড়ারা এলাকার বিধায়ক গদাধরবাবুর দ্বারস্থ হন। ইতিমধ্যেই, সোমবার ওই এলাকায় তল্লাশি অভিযানে নেমে তৃণমূলের নেতা বাবু হাজরার বাড়ি থেকে এবং একটি পরিত্যক্ত ক্লাব থেকে শতাধিক বোমাও উদ্ধার করে পুলিশ। অভিযোগ ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার দিনভর ছিল গ্রামে উত্তেজনা। গভীর রাতে তা সংঘর্ষের চেহারা নেয়।


এ নিয়ে ক্ষোভ ছড়ায়। শান্তির আর্জি নিয়ে বাসিন্দারা বসে পড়েন রাস্তায়।

ঘটনার খবর পেয়ে, সোমবার এলাকায় যান কাজল শেখ। কাজল শেখের দাবি, ‘‘যাঁরা গ্রামে ঢুকতে এসেছিল, তারা তৃণমূলের কেউ না। ওই দুষ্কৃতীদের গ্রামবাসীই প্রতিরোধ করেছেন।’’ তাঁর অনুগামীরা উত্তম দাস-সহ ২২ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অন্যদিকে গদাধরবাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘দুষ্কৃতীদের জন্য কয়েকহাজার দলীয়কর্মী গ্রামছাড়া রয়েছেন। পুলিশ-প্রশাসনরে সঙ্গে তাঁদের গ্রামে ফেরাতে কথা হয়েছে। দিনের আলোতেই তাঁরা গ্রামে ঢুকবে। সোমবার রাতের গোলমাল পুরোটাই দুষ্কৃতীদের নাটক। মুরগির রক্ত ছড়িয়ে সংঘর্ষ বলে ছবি তোলাচ্ছে ওরা।’’

তবে এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা গিয়েছে, পুকুর বেশ কয়েকটি বোমা কুড়িয়ে ছোটরা খেলা করছে। এরপরেই পুলিশের বিরুদ্ধে সোমবার উদ্ধার করেও বোমাগুলি পুকুরে ফেলে রাখার অভিযোগ উঠেছে। বাসিন্দাদের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়। এ প্রসঙ্গে বোলপুরের এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষ ও জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার মন্তব্য করতে চাননি। এসএমএসেরও তাঁরা জবাব দেননি।

ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরি।

bolpur bahiri tmc group clash tmc bomb throwing bahiri natunhat bolpur tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy