আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।
আর জি কর-কাণ্ডে সিবিআইয়ের প্রথম চার্জশিট জমা পড়তেই কলকাতা পুলিশের ভূমিকাকে ‘ঠিক’ আখ্যা দিয়ে প্রচারে নেমে পড়ল শাসক দল। তাদের দাবি, আর জি করের ঘটনার এক দিনের মধ্যেই পুলিশ যে অভিযুক্তকে ধরেছিল, চার্জশিটে একমাত্র তার নাম দিয়ে সিবিআই প্রমাণ করেছে, মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হয়েছে! বিরোধীদের অবশ্য পাল্টা দাবি, ঘটনার পরে সরকারি মদতে তথ্য-প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হয়েছে। খুন এক জন যদি করেও থাকে, ঘটনার নেপথ্যে কারা আছে, সেই প্রশ্ন থাকছে। পরবর্তী পর্যায়ে সে সব রহস্য উদঘাটনের দায়িত্ব সিবিআইয়ের।
চিকিৎসক-ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সোমবার প্রথম চার্জশিট পেশ করেছে সিবিআই। মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রাইয়েরই নাম রয়েছে সেখানে। তার পরেই রাজ্য প্রশাসন ও কলকাতা পুলিশের পক্ষে দাঁড়িয়ে সওয়াল শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তথ্য-প্রমাণ লোপাট ও ঘটনায় অন্য অভিযুক্তদের আড়াল করার যে অভিযোগ উঠেছে, তা-ও খারিজ করেছে তৃণমূল। সেই সূত্রেই প্রায় দু’মাস ধরে রাজ্যব্যাপী চিকিৎসক ও নাগরিক সমাজের যে আন্দোলন চলছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে শাসক দল। তৃণমূলের নেতা কুণাল ঘোষের দাবি, ‘‘পরে আর কেউ ধরা পড়বে কি না, তা পরের আলোচ্য। কিন্তু কলকাতা পুলিশ যে ঠিক পথে এগিয়েছে, তা তাদের হাতে ধরা পড়া একমাত্র সঞ্জয়ের নামে চার্জশিটে প্রমাণ হয়েছে। আর কেউ থাকলে তো সিবিআই ধরতো!’’
তৃণমূলের দাবি, আর জি কর-কাণ্ড ঘিরে যা প্রচার হয়েছে, তার বেশির ভাগ চিকিৎসকদের গোষ্ঠী-লড়াইের ফল। আন্দোলনকে ‘নাটক’ বলেও চিহ্নিত করেছে তারা। কুণালের কথায়, ‘‘যে গল্প ছড়িয়েছে, তা ওখানকার চিকিৎসকদের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব। মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘এই সুযোগে চিকিৎসকদের একাংশ প্রতিপক্ষকে বধ করে ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছে।’’ কুণালের আরও বক্তব্য, ‘‘নিহতের বাবা-মা সিবিআই চেয়েছেন। সিবিআই তদন্ত করেছে। আরও কেউ থাকলে সিবিআই নিশ্চয়ই ধরবে। সুপ্রিম কোর্ট নজরদারি রেখেছে। কিন্তু এখনও কি বিচারের স্লোগান তুলে কোনও কর্মসূচি, নাটক বা অরাজকতা তৈরির বিষয়টি বিবেচনা করবেন না?’’ তাঁর অভিযোগ, এখনও এই স্লোগান তুলে রাজ্যের পুজো-অর্থনীতিকে বিঘ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
বিরোধীরা অবশ্য তথ্য-প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ নিয়ে এখনও সরব। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মতে, ‘‘সিবিআইয়ের এই চার্জশিট আমি মানতে পারছি না। সঞ্জয় একা অপরাধী, এটা মানা সম্ভব নয়! তবে তথ্য-প্রমাণ লোপাট হয়েছে। তার সুবাদে অনেকেই ফাঁক-ফোকর গলে বেরিয়ে যেতে পারে।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চত্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘মূল প্রশ্ন তিনটে। কে খুন করল? কে বা কারা করাল? তথ্য-প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা কারা করল? আর এর সঙ্গে আছে দুর্নীতির তদন্ত। প্রমাণ লোপাটে ভারী ভারী লোকেরা জড়িত, এটা বোঝা যাচ্ছে। এটা প্রাথমিক রিপোর্ট। প্রমাণ লোপাটের পরেও তদন্ত কতটা এগোল, সিবিআইকে এর পরে সেটা স্পষ্ট করতে হবে।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ের দাবি, ‘‘পুলিশ ঠিক ছিল বলে হইচই করে কী হবে? ঘটনার পরে পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্যেই তথ্য-প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হয়েছে। গোটা রহস্য ভেদ করে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আদালতে দিতে হবে সিবিআইকে। নইলে ধরতে হবে মোদী ও দিদির সরকারের মধ্যে বোঝাপড়ার খেলা হয়ে গিয়েছে!’’ সিবিআইয়ের প্রথম চার্জশিটকে ‘হতাশাব্যঞ্জক’ আখ্যা দিয়ে এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্যও বলেছেন, ‘‘হাসপাতালের মতো জায়গায় এক জন বাইরের লোক ঢুকল, সে একাই ছাত্রী-ডাক্তারকে ধর্ষণ ও খুন করল এবং কোনও ভিতরের সহযোগী ছাড়াই, হাসপাতালের অন্য কেউ জানতে পারলেন না, কেউ বাধা দিতে এগিয়ে এলেন না! এ কথা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না।’’
নানা প্রশ্নের মধ্যেও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য সিবিআইয়ের পক্ষেই দাঁড়িয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সিবিআই আর জি করের ঘটনায় তিনটি বিষয়ে তদন্ত করছে। ধর্ষণ ও খুন, দ্বিতীয় আর্থিক দুর্নীতি ও তৃতীয়টি তথ্য-প্রমাণ লোপাটকে ঘিরে চক্রান্ত। এর মধ্যে একটা মামলায় চার্জশিট হয়েছে। এর পরেও সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট হতেই পারে। সিবিআই তদন্ত ঠিক পথে হচ্ছে বলেই মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সন্দীপ ঘোষ গ্রেফতার হয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy